১) শবে কদরে কুরআন অবর্তীণ হয়েছে:
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ
“আমি একে (কুরআন) অবর্তীণ
করেছি শবে কদরে।” (সূরা কাদর: ১)
২) শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও
উত্তম:
আল্লাহ বলেন:
ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِّﻦْ ﺃَﻟْﻒِ ﺷَﻬْﺮٍ
“শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও
উত্তম।” (সূরা কাদর: ৩)
৩) আল্লাহ
তায়ালা শবে কদরকে বরকতময় রাত
বলে উল্লেখ করেছেন:
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُّﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ
“নিশ্চয় আমি ইহা (কুরআন)কে অবর্তীণ
করেছি একটি বরকতময়
রাতে।” (সূরা দুখান: ৩) (আর এ রাত
হল শবে কদর।)
৪) শবে কদরে রাত জেগে ইবাদত-
বন্দেগী করলে পূর্বের সকল ছোট গুনাহ
মোচন হয়ে যায়:
রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
ﻣَﻦْ ﻗَﺎﻡَ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﺇِﻳﻤَﺎﻧًﺎ
ﻭَﺍﺣْﺘِﺴَﺎﺑًﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ
ﺫَﻧْﺒِﻪِ
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সোয়াবের
আশায় শবে কদরে রাত জাগরণ করে নফল
নামায ও ইবাদত বন্দেগী করবে তার
পূর্বের সকল (ছোট) গুনাহ মোচন
করে দেয়া হবে।
শবে কদর কখন হবে?শবে কদর
হবে রামাযানের শেষ দশকের বেজোড়
রাতে:
ক) আয়েশা (রা হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
« ﺗَﺤَﺮَّﻭْﺍ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻮِﺗْﺮِ ﻣِﻦَ
ﺍﻟْﻌَﺸْﺮِ ﺍﻷَﻭَﺍﺧِﺮِ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ »
“তোমরা রামাযানের শেষ দশকের
বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান কর।
খ) আবু হুরায়রা (রা হতে বর্ণিত। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন:
« ﺃُﺭِﻳﺖُ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﺛُﻢَّ ﺃَﻳْﻘَﻈَﻨِﻰ
ﺑَﻌْﺾُ ﺃَﻫْﻠِﻰ ﻓَﻨُﺴِّﻴﺘُﻬَﺎ
ﻓَﺎﻟْﺘَﻤِﺴُﻮﻫَﺎ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮِ ﺍﻟْﻐَﻮَﺍﺑِﺮِ
স্বপ্নে আমাকে লাইলাতুল ক্বদ্র
দেখানো হল। কিন্তু আমার এক
স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়ায়
আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব,
তোমরা তা রামাযানের শেষ
দশকে অনুসন্ধান কর। কোন কোন বর্ণনায়
রয়েছে, দু ব্যক্তির বিবাদের
কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা ভুলে গেছেন।
গ) শবে কদর কি শুধু রামাযানের
সাতাইশ রাতের জন্য নির্দিষ্ট?
আমাদের দেশে সাধারণত: মানুষ শুধু
রামাযানের সাতাইশ তারিখে রাত
জেগে ইবাদত
বন্দেগী করে এবং ধারণা করে এ
রাতেই শবে কদর অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু
এ ধারণা, সুন্নতের সাথে সঙ্গতীপূর্ণ
নয়। কারণ, আয়েশা (রা হতে বর্ণিত
রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
« ﺗَﺤَﺮَّﻭْﺍ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻮِﺗْﺮِ ﻣِﻦَ
ﺍﻟْﻌَﺸْﺮِ ﺍﻷَﻭَﺍﺧِﺮِ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ
“তোমরা রামাযানের শেষ দশকের
বেজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর
অনুসন্ধান কর।
আবু হুরায়রা (রা হতে বর্ণিত। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন:
« ﺃُﺭِﻳﺖُ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﺛُﻢَّ ﺃَﻳْﻘَﻈَﻨِﻰ
ﺑَﻌْﺾُ ﺃَﻫْﻠِﻰ ﻓَﻨُﺴِّﻴﺘُﻬَﺎ
ﻓَﺎﻟْﺘَﻤِﺴُﻮﻫَﺎ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮِ ﺍﻟْﻐَﻮَﺍﺑِﺮِ
»
স্বপ্নে আমাকে লাইলাতুল ক্বদ্র
দেখানো হল। কিন্তু আমার এক
স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়ায়
আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব,
তোমরা তা রামাযানের শেষ
দশকে অনুসন্ধান কর।
ঘ) তবে শেষ সাত দিনের বেজড়
রাতে শবে কদর হওয়ার
সম্ভাবনা বেশি:
যেমন, নিম্নোক্ত হাদীসটি:
ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ – ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ –
ﺃَﻥَّ ﺭِﺟَﺎﻻً ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ –
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﺃُﺭُﻭﺍ ﻟَﻴْﻠَﺔَ
ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻤَﻨَﺎﻡِ ﻓِﻰ ﺍﻟﺴَّﺒْﻊِ
ﺍﻷَﻭَﺍﺧِﺮِ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ –
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ » – ﺃَﺭَﻯ
ﺭُﺅْﻳَﺎﻛُﻢْ ﻗَﺪْ ﺗَﻮَﺍﻃَﺄَﺕْ ﻓِﻰ ﺍﻟﺴَّﺒْﻊِ
ﺍﻷَﻭَﺍﺧِﺮِ ، ﻓَﻤَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻣُﺘَﺤَﺮِّﻳَﻬَﺎ
ﻓَﻠْﻴَﺘَﺤَﺮَّﻩَ ﺍ ﻓِﻰ ﺍﻟﺴَّﺒْﻊِ ﺍﻷَﻭَﺍﺧِﺮِ »
ইবনে উমর (রা হতে বর্ণিত যে,
কয়েকজন সাহাবী রামা যানের শেষ
সাত রাত্রিতে স্বপ্ন মারফত শবে কদর
হতে দেখেছেন। সাহাবীদের এ
স্বপ্নের
কথা জানতে পেরে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“আমি দেখছি তোমাদের
স্বপ্নগুলো মিলে যাচ্ছে শেষ সাত
রাত্রিতে। অত:এব কেউ চাইলে শেষ
সাত রাত্রিতে লাইলাতুল কদর
অনুসন্ধান করতে পারে।” (সহীহ
বুখারী ও মুসলিম) এ মর্মে আরও হাদীস
রয়েছে।
কোন কোন সালাফে-সালেহীন সাতাইশ
রাত শবে কদর হওয়ার অধিক
সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেছেন।
সাহাবীগণের মধ্যে ইবনে আব্বাস (রা,
মুআবিয়া, উবাই ইবনে কা’ব (রা এর
মতামত থেকে এটাই বুঝা যায়।
কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
থেকে এভাবে নির্দিষ্টকরে লাইলাতুল
কদর হওয়ার কোন হাদীস নাই।
তাই উপরোক্ত সাহবীদের কথার উপর
ভিত্তি করে বড় জোর
সাতাইশে রাতে শবে কদর
হওয়াকে অধিক সম্ভাবনাময়
বলা যেতে পারে।
নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। সঠিক
কথা হল, শবে কদর কখনো ২১,
কখনো ২৩, কখনো ২৫, কখনো ২৭
আবার কখনো ২৯ রাতে হতে পারে।
সুতরাং শুধু ২৭ তারিখ নয় বরং কোন
ব্যক্তি যদি রামাযানের শেষ দশকের
উপরোক্ত পাঁচটি রাত জাগ্রত
হয়ে ইবাদত-
বন্দেগী করে তবে নিশ্চিতভাবে শবে ক
পাবে। কিন্তু শুধু ২৭তম রাত
জাগলে শবে কদর পাবে তার কোন
নিশ্চয়তা নাই। বরং অন্যান্য রাত বাদ
দিয়ে শুধু রমজানের ২৭ রজনীকে কদর
এর রজনী মনে করে ইবাদত
করা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
***** রেফারেন্স:*****
[1] সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ:
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সোয়াবের
আশায় রোযা রাখে।
[2]সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ:
রামাযানের শেষ দশকের বেজোড়
রাতে শবে কদর অনুসন্ধান করা।
[3]সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল
কাদরের ফযীলত।
[4]সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল
কাদরের ফযীলত। সহীহ মুসলিম,
অধ্যায়: রোযা।
[5]সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল
কাদরের ফযীলত।