somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ: আলোচিত ও অনালোচিত কারণসমূহ পর্ব -৪

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ: আলোচিত ও অনালোচিত কারণসমূহ পর্ব -৪

(৬) এখানে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো, সমস্যার কারণ নির্ধারণে বিভ্রান্তি অনেক সময় সমস্যা উস্কে দিতে পারে। সন্ত্রাসের জন্য সন্ত্রাসীর জাতি, ধর্ম, গোত্র, দল বা শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করলে মূলত সন্ত্রাসীকে সাহায্য করা হয়। এতে একদিকে সন্ত্রাসীর স্বজাতি, স্বধর্ম, স্বদল বা স্বশিক্ষার মানুষেরা সন্ত্রাসের বিরোধিতার পরিবর্তে সন্ত্রাস বিরোধীদের সাথে বিরোধিতায় জড়িয়ে পড়েন, অপরদিকে পরোক্ষভাবে তাদের মধ্যে সন্ত্রাসীর প্রতি এক প্রকারের ‘সহমর্মিতা’ জন্মলাভ করে। আমরা দেখেছি যে, কোনো কোনো পাশ্চাত্য পণ্ডিত সন্ত্রাসের জন্য ইসলামকে দায়ী বলে মন্তব্য করে ইসলামের সাথে পাশ্চাত্য সভ্যতার সংঘাতকেই উস্কে দিচ্ছেন। সন্ত্রাসের জন্য ইসলামী শিক্ষাকে দায়ী করলেও একইভাবে সন্ত্রাসকে উস্কে দেওয়া হবে এবং সন্ত্রাসীদের জন্য সহমর্মী সৃষ্টি করা হবে। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষিত মানুষেরা সন্ত্রাস বিরোধিতার বদলে অপ্রাসঙ্গিক বির্তকে জাড়িয়ে পড়বেন।
সর্বোপরি এরূপ মতামতের ভিত্তিতে যদি সরকার বা প্রশাসন মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ, সংকোচন বা মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ঢালাও কোনো কর্মকাণ্ড হাতে নেন তবে তাতে নতুন এক প্রকারের সহিংসতায় আক্রান্ত হবে দেশ ও জাতি।
মূলত কোনো ধর্ম, মতবাদ বা আদর্শ সহিংসতা বা সন্ত্রাস শিক্ষা দেয় না। মানুষ মানবীয় লোভ, দুর্বলতা, অসহায়ত্ব, প্রতিশোধস্পৃহা ইত্যাদির কারণে সহিংসতা বা হিংস্রতায় লিপ্ত হয়। এরূপ সহিংসতায় লিপ্ত ব্যক্তি নিজের কর্মের পক্ষে সাফাাই গাওয়ার জন্য, নিজের বিবেককে অপরাধবোধ থেকে মুক্ত করার জন্য, অন্যকে নিজের পক্ষে টানার জন্য এবং অন্যান্য উদ্দেশ্যে নিজের আদর্শকে ব্যবহার করে।
এভাবে হাজার হাজার বছর ধরে বসবাসকারী আরবদেরকে পূর্ব জেরুযালেম ও অন্যান্য ফিলিস্তিনী এলাকা থেকে সন্ত্রাস, গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে বিতাড়ন করে অন্যান্য দেশে হাজার বছর ধরে বসবাসকারী ইহূদীদেরকে সেখানে নিয়ে এসে ইস্রায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার জন্য ইহূদী-খৃস্টানগণ পবিত্র বাইবেলের বাণীকে ব্যবহার করেছেন। অনুরূপভাবে আইরিশ ক্যাথলিক ব্রিটিশ প্রটেস্ট্যান্টের বিরুদ্ধে নিজের ধর্মমতকে ব্যবহার করেন, তিব্বতীয় বৌদ্ধ চীনের বিরুদ্ধে নিজের বৌদ্ধ ধর্মমতকে ব্যবহার করেন, নিম্নবর্ণের হিন্দু উচ্চবর্ণের হিন্দুর বিরুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক বা ধর্মীয় মতামত ব্যবহার করেন, ফিলিস্তিনী যোদ্ধা ইহূদী দখলদারের বিরুদ্ধে নিজের ইসলাম বা খৃস্টান ধর্ম থেকে উদ্দীপনা বা প্রেরণা লাভের চেষ্টা করেন।
আমাদের সমাজে ‘আওয়ামী লীগের’ কর্মী যদি কোনো কারণে উত্তেজিত হয়ে সহিংসতায় লিপ্ত হন তখন তখন তিনি ‘স্বাধীনতা’, বঙ্গবন্ধু, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ ইত্যাদি মহান ও মর্যাদাময় বিষয়কে তার কর্মের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। অনুরূপভাবে ‘বিএনপি’র কর্মী বা সমর্থক এই ক্ষেত্রে ‘শহীদ জিয়া’, জাতীয়তা, স্বাধীনতা ইত্যাদি মহান বিষয়কে নিজের ‘এক্সকিউজ’ হিসেবে ব্যবহার করেন। উভয় ক্ষেত্রেই দলের অন্যান্য বিচক্ষণ কর্মী জানেন যে, নিজের সহিংসতা বৈধ করার জন্যই এগুলি বলা হচ্ছে।
সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষাকে দায়ী করে মাদ্রাসা শিক্ষা, মাদ্রাসা বা মাদ্রাসা শিক্ষিতদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিলে স্বভাবতই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে সহিংসতায় লিপ্ত হবেন এবং ‘ইসলাম’ ও ‘ইসলামী শিক্ষা’-র বিপন্নতাকে অজুহাত হিসেবে পেশ করবেন। এতে একমাত্র সন্ত্রাসীরাই লাভবান হবে এবং জাতি ভয়ঙ্কর সংঘাতের মধ্যে নিপতিত হবে।
আলোচিত তৃতীয় কারণ: ওহাবী মতবাদ
‘ওহাবী মতবাদ’-কে জঙ্গিবাদের কারণ হিসেবে অনেক গবেষক উল্লেখ করছেন। বর্তমান সৌদি আরবের ধর্মীয় নেতা মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্হাব (১৭০৩-১৭৯২ খৃ) প্রচারিত মতবাদকে ‘ওহাবী’ মতবাদ বলা হয়। তিনি তৎকালীন আরবে প্রচলিত কবর পুজা, কবরে সাজদা করা, কবরে বা গাছে সুতা বেঁধে রাখা, মানত করা ও অন্যান্য বিভিন্ন প্রকারের কুসংস্কার, শিরক, বিদ‘আত ইত্যাদির প্রতিবাদ করেন। তাঁর বক্তব্য শুধু প্রতিবাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। উপরন্তু তাঁর বিরোধীদের তিনি মুশরিক বলে অভিহিত করতেন। ১৭৪৫ খৃস্টাব্দে বর্তমান সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের অনতিদূরে অবস্থিত দিরইয়্যা নামক ছোট্ট গ্রাম-রাজ্যের শাসক আমীর ‘মুহাম্মাদ ইবনু সাঊদ (মৃত্যু ১৭৬৫) তাঁর সাথে যোগ দেন। তাদের অনুসারীগণ তাদের বিরোধীদেরকে মুশরিক বলে গণ্য করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান পরিচালন শুরু করেন। ১৮০৪ সালের মধ্যেই মক্কা-হিজায সহ আরব উপদ্বীপের অধিকাংশ ‘সাউদী’-‘ওহাবী’দের অধীনে চলে আসে।

মুলঃ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
পি-এইচ. ডি. (রিয়াদ), এম. এ. (রিয়াদ), এম.এম. (ঢাকা)
অধ্যাপক, আল-হাদীস বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×