ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন এবং কিছু ভাবনা।
পুরো সমাবেশ আর্কাইভ আছে এখানে... লিখিত এবং পিকচার আকারে।
----
নিসঙ্কচিত্তে প্রথমে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা প্রকাশ করছি পূর্তি উদযাপন আয়োজক কমিটির প্রতি.. কারন আমার দেখা ছাত্র আন্দোলনের সবচেয়ে জমকালো প্রোগ্রাম ছিলো ২৬ আগষ্টের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানটি।
----
... আগের রাতে টিপটিপে বৃষ্টিতে দুরুদুরু বুকে যখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজন দেখতে গিয়েছিলাম তখনই অনেকটা থমকে গিয়েছিলাম..! এতো এক মহাযজ্ঞ যেন!
দ্বিস্তর বিশিষ্ট মঞ্চ.. তিন ভাষায় মানসম্মত এক বৃহদাকার ব্যানার.. লাল গালিচায় আচ্ছাদিত বিশাল প্রাঙ্গণ.. ফুলে ফুলে পরিপুর্ন বিশাল এড়িয়া.. পুরো মাঠ জুড়ে বিশাধিক এলইডি স্কীন বসানো.. বৃষ্টি চিন্তায় তেরপল মোড়ানো বিশাল প্যান্ডেল.. জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন ব্যাবস্থাপনা.. দেশি বিদেশি মেহমানদের আগমন সংবাদ.. সব মিলিয়ে উন্নত এবং যুগপযোগী এক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
.
'নেতৃত্ব দান ক্ষমতার' চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার প্রমান বহন করা এই প্রোগ্রাম যখন ২৬ আগষ্ট সকাল নয়টায় শুরু হলো তখন একের পর এক চমকে অনেকটাই বিস্মিত হচ্ছিলাম! মিডিয়া ক্যামেরার স্ক্রীনে সবকিছুই সংরক্ষিত করছিলাম আমরা একটা টিম। বিশাল বিশাল মিছিলে তারুণ্যদীপ্ত সুন্নাতি লেবাস পরিহিত তরুনদের মুহুর্মূহু শ্লোগানে ঢাকার রাজপথ কাঁপিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করতে দেখে খুশিতে হৃদয় মন ভরে উঠছিলো বারবার। মন বলছিলো,
'বিপ্লব অত্যাসন্ন'
.
এই কি সেই সংগঠনের চমক সৃষ্টি করা গনসম্পৃক্ত প্রোগ্রাম যার ব্যাপারে হতাশায় নিমজ্জিত ছিলো অনেকেই.! 'কি করবে এই হুজুর ছাত্ররা' এমন তাচ্ছিল্য করেছিলো কেউ কেউ..
.
আজ পঁচিশ বছরের যৌবণে এসে এক অদম্য ইয়ুথ পাওয়ার দেখিয়ে দিলো তারা.. জ্ঞানীদের জন্য সব কিছুকে আবার নতুন করে ভাবতে বাধ্য করালো তারা.. ধর্মীয় ছাত্র রাজনীতি নিয়ে নতুন করে আবারও ভাবতে শুরু করেছে অনেকেই এটা আমার দৃঢ় থেকে দৃঢ় বিশ্বাস।
.
সুশৃঙ্খল এই ঐতিহাসিক প্রাঙ্গণের ঐতিহাসিক প্রোগ্রামটিতে একেবারেই ছোট থেকে ছোট কিছু অসংগতি কারো চোখে ধরা পরলেও ব্যাক্তিগত ভাবে আমি মনে করি,
'সর্বোচ্চ রকমের সফল এবং সুন্দরতম একটি প্রোগ্রাম ছিলো এটি'
.
এনডিপির সভাপতি শওকত হোসেন নিলু সহ বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব এবং যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালদের ব্যাক্তিস্বার্থের রাজনৈতিক বক্তব্য থাকলেও সেগুলো কিন্তু এই প্রোগ্রামের শোভা বৃদ্ধিই করেছে.. পিওর রাজনীতিতে যে ইশা ছাত্র আন্দোলন সম্পৃক্তদের পরিপক্কতা সৃষ্টি হয়েছে এটা কিন্তু নির্বিঘ্নে প্রমান হয়েছে।
.
অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন সাহেব, ড. আ.ফ.ম. খালিদ সাহেব, মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ সাহেবদের চেতনা জাগানীয়া বক্তব্য ছাত্র সমাজের রক্তকে টগবগে করতে বিশাল ভূমিকা রাখবে বলেই বিশ্বাস করি।
.
সাবেক কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের দিকনির্দেশনা এবং গঠনমুলক আলোচনা ছাত্র সমাজকে এক নতুন পথ দেখাতে পারবে এটা সবাই-ই মেনে নিচ্ছে।
.
সাবেক সকল দায়িত্বশীলদের এক মেডেলাবদ্ধ করার এই প্রয়াস ঐক্যবীনে নতুন সুর তুলেছে এটা সাক্ষাতকার নিতে গিয়ে সকলের কাছ থেকেই অকপট স্বিকারোক্তি পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ...
.
.
.
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সাহেব কিছু অসম এবং দৃষ্টিকটু টাইপের সমালোচনা উদগীরণ করলেও 'সমালোচনা সহ্য করা রাজনীতিতে পরিপক্ক বানায়' এই কথাটাই মেনে নিতে চাচ্ছি! যদিও নিজে তিনি অ-সফল এবং ঘরকুনো টাইপের জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতি করে রাজনীতির সবক শেখানোর কঠিন দায়িত্ব নিয়ে ওনার শেখা ঈমান রক্ষার ব্যাপারে বক্তব্য দিতে গিয়ে একটু বেশিই করেছেন এটা অনেকেই বলছে! কারন ঈমান রক্ষা এবং ইসলামী হুকুমতের সবক যদি উনি শেখাতে আসেন তাহলে ব্যাপারটা হাস্যকরই হয়ে দাড়ায়। পলিটিক্সের আদলে তিনি ধর্মের ব্যাপারে কটুক্তি করা লতিফ সিদ্দিকীর সমর্থন করে একটু কেমন যেন 'ডাবল স্টান্ডারের' ভুমিকা নিয়েছেন বলেই মনে হয়েছে বিশ্লেষকদের কাছে! সেই সাথে সাথে লতিফ সিদ্দিকীর বিরোধিতা করায় এই সংগঠনের উপর আপনি যে রাগ উদগীরন করলেন তাতে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নীতি প্রশ্নে কতটা কঠোর এবং মুলার্থে সেটা প্রমান করে দিয়েও গেলেন আপনি। তারপরও 'সমালোচনা নতুন শিক্ষা দেয়' কথাটা মেনে আপাতত ওনাকেও ধন্যবাদই দেয়া যায়। কারন শেষ পর্যন্ত এই টাইগার সিদ্দিক তো একজন মুক্তিযোদ্ধা 'বঙ্গবীর' উপাধী পাওয়া ব্যাক্তিত্ব।
.
সম্মেলন ঘোষণায় কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি সাহেব ছাত্র সমাজের কাছে যেই দশ দফা দাবি আদায়ের লক্ষবস্ত দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে ছাত্র সমাজ বদ্ধপরিকর হবে হাতে হাত রেখে।
.
অসম্ভব রকমের মায়াময় চেহারায় কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল ইসলাম আল আমিন ভাইয়ের মধ্যমণি হয়ে বসে থাকাটা ছাত্র সমাজের জন্য অনেক প্রেরণা তৈরি করতে পারবে।
.
শেখ ফজলুল করীম মারুফ ভাই ,
মানুষটার ব্যাপারে কি বলবো বুঝতে পারছি না.. প্রানচাঞ্চল্যের এক অনন্য ভূমিকা নিয়ে ওনার উপস্থাপনার গমগমে শব্দ চেতণার অগ্নি প্রজ্জলিতই করে কেবল।
ঘামভেজা আপনার চেহারাটা দেখে অনেক মায়া লেগেছে ভাই। ছাত্র সমাজের কাছে আইডল আপনি।
.
অনলাইনে সম্মেলন এর নিউজ প্রচারে মুফতী Delower Saki সাহেবের নেতৃত্যে মিডিয়া সেলের ভুমিকা সত্যিই অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে অনেক মিস করেছি শ্রদ্ধেয় Neser Uddin ভাইকে... উনি থাকলে কাজের গতি অনেক বৃদ্ধী পেতো এটা সত্য।
.
.
সময় স্বল্পতায় মাননীয় মহাসচিব সাহেব নিজের সময়টুকু বিদেশী মেহমানকে দিয়ে দেয়ার এই উদারতা কর্মীদের বিনয়ী হবার এক বিশাল শিক্ষা দেবে। অনেক দলেরই নিজেদের মধ্যে মাইক নিয়ে টানাটানি করার ঘৃণ্য দৃশ্যগুলোকে ভুলিয়ে আদর্শ এক রাজনৈতিক শিক্ষার শিক্ষা দেবে।
.
দেওবন্দ থেকে আগত জমিয়তের রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব এবং দেওবন্দের মুফতী আল্লামা বিজনূরী সাহেবের পয়েন্ট টু পয়েন্ট বেশ কিছু নসিহত ছাত্রদের জন্য জীবন গঠনে অনেক বড় সফলতা বয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ। বিশেষ করে 'ওয়াক্ত কি ক্বাদর করো' বলে যেই মার্ক পয়েন্ট দিয়েছেন ছাত্রদের এটা অনেক বড় অর্জন হবে সবার জন্য।
.
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী সাহেবের তড়িত বিপ্লব সাধনের যেই চেতনা ছাত্র সমাজের হৃদয়ে পৌছে দিয়েছেন তা এই সংগঠনের কর্মপরিধী আরো অনেক বৃদ্ধি করবে ইনশাআল্লাহ..
.
ছাত্র সমাজের নয়নমণী, মুচকি হাসির প্রিয় থেকে প্রিয় মানুষ মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম সাহেব (দাঃবাঃ) হযরত নসিহতমূলক দির্ঘ বক্তব্য না দিলেও ছাত্র সমাজের প্রতি দাওয়াত এবং সংগঠনকে প্রবৃদ্ধি করার যেই ছোট্ট কিন্তু মজবুত শিক্ষা পৌছে দিলেন সেটাই হতে পারে এই সমাবেশের মুল অর্জন.. যা ভবিষ্যতকে করবে আলোকিত... অনুপ্রাণিত..
.
সর্বপরী বাইয়াত গ্রহণ করিয়ে ইসলামী হুকুমত কায়েমের ওয়াদা নিয়ে মুহতারাম আমীর মুফতী রেজাউল করীম সাহেব দাঃ বাঃ নতুন করে শপথ নিয়ে পুরো সমাবেশকে এক দৃঢ়তায় নিয়ে এলেন। এমনকি সেই শপথে অংশ নিয়েছিলেন মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম সাহেব দাঃবাঃ হযরতও...! ব্যাপারটা অবাক করা হলেও অনেক অনেক বড় শিক্ষণীয় একটা দৃশ্য ছিলো এটা...।
.
সমাবেশে প্রদর্শিত ডকুমেন্টারীতে অর্জনের ২৫ বছরের যেই সুন্দর চিত্র ফুটে উঠেছে তাতে কোন ধরনের হতাশা কারো মধ্যে থাকলেও তা হারিয়ে যাবে দুর থেকে বহুদুরে।
.
এসব কিছু বাদ দিয়েই ফেসবুক কিন্তু তার স্বকীয়তা বজায় রাখতে পেরেছে.. কারন ফেসবুকে যে বিতর্কগুলো হয় সেগুলো সাধারনত দাড়ি কমার ভুল নিয়েই হয় :-D এবারও তেমনই হয়েছে! দেয়াল রাইটিং জায়েজ কিনা, ব্যাণারে ব্যাকরণ ঠিক আছে কিনা, হাতি নিয়ে মিছিল কেন এসব নিয়ে চলছে বেশ... তারপরও এই উসিলাতেও বেশ প্রচার হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ..
.
.
.
সব কিছু ছাপিয়ে শায়েখের কাছে করা ওয়াদাটা পালন করতে একটা স্পষ্ট কথা বলছি ভাই,
'
ইশা ছাত্র আন্দোলনের ত্রিধারায় গঠিত শক্তিশালী একটি কেন্দ্রীয় কমিটির যারা এদেশের সকল ধারার ছাত্রদের সফল প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম সেটা কেন্দ্রীয় কমিটির একে একে পরিচয় ঘোষণার পর সবাই-ই মেনে নিয়েছে......
তাই,
কিসের দেরি হে ছাত্র সমাজ,
'
এসো এই শান্তির পতাকা তলে... বিপ্লবের প্রত্যাশায়... ইসলামি হুকুমতের নেশায়.. আনন্দচিত্তে খোদাই করো নিজের হৃদয়ে একটিই নাম, ইশা ছাত্র আন্দোলন।
.
.
আর একটা সুক্ষ্ম শিক্ষার কথা বলে শেষ করছি,
.... মহাসচিব সাহেব বক্তব্য দেননি, ফয়জুল করীম সাহেব বক্তব্য দিতে পারেননি, পীর সাহেব হুজুর পুরো বক্তব্য দিতে পারেননি... তারপরও কিন্তু সময়ক্ষেপণ না করে সমাবেশ শেষ করে দিয়ে এটাই প্রমান করা হয়েছে,
'যত বড় কিছুই হোক না কেন..?? এক ওয়াক্ত নামাজের সময় সবচেয়ে বড়.. কারন বক্তব্য সামান্য দির্ঘায়ীত হলেও আসরের নামাজ পড়তে সমস্যা হয়ে যেতো..
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৫৮