somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধত্ব

১৬ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ৮:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হোসে সারমেগোর বিখ্যাত উপন্যাস ব্লাইন্ডনেস। যেখানে মানুষেরা অদ্ভুত অন্ধত্বে শিকার হয়। ছোয়াচে অন্ধত্ব। তাদের জগতটা সাদা হয়ে যায়। কি অদ্ভুত ব্যাপার তাই না। অনেক বার ভেবেছি অন্ধদের জগতটা কেমন? ভেবে কুল পাইনি। সারমেগোর উপন্যাসের মতো সাদা কি। তা কি করে হয়। সাদা তো রঙের আধার। আবার ভাবি কালো। কালো মানে রঙহীনতা বর্ণহীনতা। সেতো বিজ্ঞানের ভাষা। আমরা কি কালো কে রঙ বলি না। বলি। অন্ধদের জগত যদি অন্ধকার হয়, তবে তারা কি কালোকে কালো বলে চিনে। মনে হয় না। সে জবাব আমায় কে দেবে। এই লাজবাবই অদৃষ্ট।

আন্ধা কানুন নামে একটা হিন্দী মুভি আছে। লোকে প্রায় বলে আইন অন্ধ। প্রতিকীভাবে দেখানো হয় একটা মূর্তির চোখ বাঁধা। মনে হয় বাইরে থেকে ধার করা ট্রাডিশন। সে দাড়ি পাল্লা ধরে দাঁড়াইয়া আছে। আইন নাকি যুক্তি প্রমাণে বিশ্বাস করে। যুক্তি তো সবসময় অপূর্নাঙ্গ । তাইলে আইনের অন্ধত্ব কে গুছাতে পারে। রাষ্ট্র ক্ষমতাকে প্রায়শ আইনের সহায়ক হতে দেখা যায়। কখনো কখনো দেখা যায় নিন্ম আদালত কোনো আসামীকে ফাঁসী দিলো আর উচ্চ আদালতে বেকসুর খালাস। নানা বিবেচনা নানান মামলা কার্যকর বা অকার্যকর হয়। আসলে কি সে অন্ধ। সে নিজের চোখে দেখে না। অন্যের চোখে ভরসা করে ছড়ি ঘুরায়।

মহাকবি হোমার ছিলেন অন্ধ এবং বধির। কিন্তু তার মুখে গীত হলো ইলিয়ড আর ওডিসির মতো মহাকাব্য। তিনি শত শত বছর ধরে দুনিয়ার মানুষকে সেই সব অবিস্মরণীয় কাহিনী দ্বারা মুগ্ধতায় বেঁধে রেখেছেন। প্লেটো হোমারের কল্প জগতকে দার্শনিক সমাজের জন্য নিষিদ্ধ করেছিলেন। কারণ এটা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। সত্যের জগতের কল্পনার ঠাই নাই। তার আগে আরেক বদরাগী দার্শনিক হিরাক্লিটাস এক কাঠি এগিয়ে বলেছিলেন হোমারকে বেত্রাঘাত করা উচিত। জগতের মানুষ হেলেনকে প্লেটোর চেয়ে ঢের বেশী চেনে। হোমার বেঁচে আছেন মহান দার্শনিকদের বিদ্রুপ উপেক্ষা করে।

মহাভারতের ধৃতরাষ্ট্রের কথা মনে আছে কি। তিনিও অন্ধ ছিলেন। দিব্যজ্ঞানী রাজা অভিশাপ দিয়েছিলেন দুর্যোধনকে। দুর্যোধন দুর্বিনীতভাবে বলেছিলো, শুধু জয় চেয়েছি, জয় পেয়েছি, আর কিছু তো চাইনি। কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র ছিলেন দিব্যজ্ঞানী । কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শেষ হাসি হেসেছিল পান্ডব ভাইয়েরা। পান্ডব'রা জিতবে না কেন তাদের পাশেই ছিলেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। কিন্তু সেই যুদ্ধ প্রমান করে যুদ্ধে জেতার জন্য সবকিছু জায়েজ। স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের বাণী সেই সাফাই দেয়।

হযরত ইয়াকুব [আঃ] পুত্র ইউসুফের শোকে কাদতে কাদতে অন্ধ হয়ে গেলেন। আহা। তিনি নবী অথচ তিনি দৃষ্টিহীন। আল্লাহর কি রায়। পুত্রের গায়ের পোশাকের স্পর্শে ইয়াকুব নবী তার দৃষ্টি ফিরে পেলেন। ইয়াকুব নবীর আরেক নাম ইসরাইল। তিনি মুসলমান, খ্রিষ্টান, ইহুদীদের নবী । কিন্তু তাদের মাঝে কতো রক্তারক্তি কান্ড। তা আবার কেয়ামততক চলবে।

হেলেন কিলার অন্ধ বধির নারী। তার সেবাব্রতের কথা কে না জানে।আহমেদ সাফায়েত নামে একজন লেখকের সাথে পরিচয় হয়েছিল। যিনি এইসব মানুষের জীবনী নিয়ে কাজ করছেন। যারা শারিরীকভাবে অক্ষম কিন্তু জীবনকে জয় করেছেন। তারা আসলেই কি অক্ষম। মনে হয় না। আর অক্ষম কথাটা তো আমাদরে চাপিয়ে দেয়া। আরো অনেক কিছু জানার আছে। কেমনে এই দুনিয়াকে মোকাবেলা করা যায়। বাইবেলের সেই বাণী লেট দেয়ার বি লাইট। হেলেন কিলার এই বাণীকে তুলে ধরে ছিলেন। আমাদের জহির রায়হান এই নামে একখানা চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেছিলেন। নায়িকা ববিতা। কিন্তু অকালে অন্ধকারে যাবার কারণে সেই চলচ্চিত্র আলোর মুখ দেখেনি।

কয়েক বছর আগের কথা। চট্টগ্রাম শহরের দুই নাম্বার গেইটের মসজিদে মাগরিবের নামাজের অজু করছিলাম। হঠাৎ চশমাটা পড়ে গেল ড্রেনে। খুজাঁখুজিঁ করে পাচ্ছিলাম না। ভাবলাম পানির স্রোতের সাথে চলে গেল কিনা। যদি তাই হয়, এই সন্ধ্যায় ইউনিভার্সিটি পৌছব কিভাবে। আশে ওজু করছিলেন বয়স্ক একজন। তাকে বিনীতভাবে বললাম, চাচা একটু দেখবেন আমার চশমাটা কোথায় পড়েছে। তিনি আমার আর্তিকে অগ্রাহ্য করে চট্টগ্রামের ভাষায় বললেন, দেখ না আমার বয়স তোমার চেয়ে ঢের বেশী, তুমি নিজে খুজে বের কর। শেষতক হাতড়ে হাতড়ে খুজে নিয়েছিলাম। সেদিন প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম। সেই ভয় অনেক দিন ছিলো। না, আমার এই অন্ধত্ব আমাকে বেশী কিছু দেয়নি। সাধারণের মানুষের অন্ধত্ব বিড়ম্বনা বাড়াই মাত্র। ইতিহাসে কোন দাগ কাটে না। আল মাহমুদ কি চমৎকারভাবে তার কাব্যগন্থের নাম দিলেন কানা মামুদের উড়াল কাব্য। এমন কানা হওয়াতেও আনন্দ। একটু বেশী হয়ে গেল, তাই না। এই দু’দিন আগে সেহেরীর সময় চশমাটা ভেঙ্গে গেল। সমগ্র দিনটায় মাটি।

হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ। গোলাপী এখন ট্রেন মুভির অসাধারণ গান। শুধু সত্যি তা নয়, লজ্জাজনক বাস্তবতা। আজকে আমরা কোনদিকে যাচ্ছি, সবাই জানি। কিন্তু ভাব করি জানি না। চোখ থাকতে অন্ধ সবাই। আমি কখনো অন্ধকে হোচট খেতে দেখি নাই। আমরা প্রতিনিয়ত হোচট খাই। আর ভাব করি এটাই নিয়ম। চোখ থাকিতে অন্ধ হওয়া এখন নিয়ম হয়ে গেছে। কি সমাজ. কি রাজনীতি, কি ধর্ম সব জায়গাতে চোখ থাকিতে অন্ধের ছড়াছড়ি। হে আল্লাহ পানা চাই।

আরেকধরনের অন্ধত্ব আছে। তবে তাকে অন্ধ বলা যায় না। উল্টো বলা যায়। নতুন চোখ খুলে যাওয়া।

‌‍'আমি চক্ষু দিয়া দেখতে ছিলাম জগত রঙ্গিলা। মওলা তোমার ...... মওলা আন্ধা করিলা।' বড় ভালো লোক ছিলো মুভির গান। আমার খুবই পছন্দের গান। ইউটিউবে গানটি পাওয়া যায়। কিন্তু কোনভাবে লিংকটি যোগ করতে পারছি না। কেন? বুঝতে পারছি না।


সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ১১:৩৮
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×