সাকিবের সাম্প্রতিক যে অপরাধটা নিয়ে সবার কথা বলার দরকার ছিলো, সেটা হলো সাধারণ একজন মানুষের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলা। এবং সেই জন্য পরবর্তীতে জনসম্মুখে ক্ষমাপ্রার্থনা না করা, কিংবা তাকে ক্ষতিপূরণ না দেওয়া।
এটাই তো প্রকৃত সামাজিক দায়বদ্ধতা।
কিন্তু, বাংলাদ্যাশ টা তো কোন সভ্য সমাজ না। এটা একটা শ্বাপদসংকুল জঙ্গল। এখানে কেউ একা শিকার করে, কেউ জোট বেঁধে শিকার করে, কেউ সপরিবারে করে, কেউ বংশপরিক্রমায় করে, কেউ সদলবলে করে, কেউ অনলাইনে করে, কেউ অফলাইনে করে। সবাই একে অন্যকে মেরে, ধরে, ভরে দিয়ে, খায়।
অতিভক্তি, অতিপ্রেম, অতি আদিখ্যেতা, অতি আবেগ, অতিরিক্ত পরচর্চা, অতিরিক্ত অনধিকার চর্চা, এসব করে করে সাকিবকে আমরাই (শুধু এই ১৮/২০ কোটি) তিল থেকে তাল বানিয়েছি। সংবাদমাধ্যম আর অকর্মণ্য-অনুতপাদনশীল জনগোষ্ঠী মিলে রাতদিন তাদের ব্যক্তিগত জীবনের পিছনে লেগে থেকেছি।
তাকে এরকম উদ্ধত, চিড়চিড়ে মেজাজের, আর দাম্ভিক বানিয়েছি আমরাই। কখনো তাকে পর্দা শিখিয়েছি, কখনো তাকে প্যারেন্টিং শিখিয়েছি, কখনো তাকে ধর্ম পালনে বাধ্য করেছি, কখনো তাকে বউপালা শিখিয়েছি।
যে লোকটার মোবাইল ছুঁড়ে মারলো, সে তার আশেপাশে থাকার, যেতে পারার মত মানুষই ছিল। তার যদি সেরকম কড়া প্রটোকল মেইনটেইন করতেই হতো, সে তার সহযাত্রী বা স্থানীয় প্রশাসন/পুলিশকে বলতেই পারতো, আমি অমুক চাই, তমুক চাই। কিন্তু সে তা না করে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না।
আর, জাতিগতভাবে আমরা প্রচুর অনধিকার চর্চা করি; অন্যের স্পেইস ইনভেইড করি ভয়াবহভাবে। এটা জাতিগত দোষ। অনার্য, সংকর এই জাতের দোষগুলি লিখা শুরু করলে উপন্যাস হয়ে যাবে যদিও।
এই যেমন, অনুমতি না নিয়ে, একজন মানুষের কাছে গিয়েই মাত্র ছবি তোলা, বা গায়ে হাত দেওয়া, এটা যেমন অসম্মানজনক, তেমনি সামাজিক আদবকায়দা বহির্ভূত একটা আচরণ। বাঙ্গালরা এরকম করে থাকে, শুধুমাত্র নিজেকে সেলিব্রিটি লেভেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বড়াই করে যাতে জাহির করতে পারে- অমুক সেলিব্রিটির সাথে আমি কথা বলেছি, ছবি তুলেছি। কাজের কাজ কিছু না করেই, অন্যদের কাছে ইম্পর্টেন্ট হওয়া, ফেমাস হওয়া, এসব জঘন্য ক্যারেক্টার শুধু বাঙ্গালদের মধ্যেই দেখেছি।
মুশফিকের কুরবানীর ছবি দেওয়ার পরে ইসলামবিদ্বেষীদের চুলকানি যেরকম অসভ্য আচরণ, তেমনি সাকিবের পারিশ্রমিক আয়ের জন্য বা আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক কারণে ভারতে গিয়ে পূজা উদ্বোধন নিয়ে তোলপাড় করাটাও মধ্যযুগীয় বর্বর আচরণ। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক বা থানা নির্বাহী অফিসারের মত সরকারি কর্মকর্তারাও তো অমুসলিমদের উৎসব-অনুষ্ঠানে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করে আসেন। অনেক রাজনৈতিক নেতারাও তো দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে, কিংবা দায়িত্বপালনের কারণে, নিজ নিজ এলাকায় এরকম কাজ করেন। সেগুলিকে কি বলবেন এই ইতর প্রাণীরা? আর কত পরচর্চায় নিমজ্জিত হবে কাঙ্গালরা? দেশটা তো রসাতলে গেল এভাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫২