somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"আমরা তারই লোক"

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নেতাকে, আমলাকে, সাংসদকে ভাগ দিয়ে, একচেটিয়াভাবে টেন্ডার বাগিয়ে- আমরা ভার্সিটি বানাই। ভার্সিটির খাট কেনা থেকে শুরু করে হোস্টেল-রেস্তোরা বানানো- সব কিছুতে প্রভাব খাটিয়ে দুই নম্বরী করে লাভের ব্যবসা করি।

তারপর সেই ভার্সিটি থেকে পাশ করা গ্রাজুয়েটগুলোকে বলি, ৪ বছর বিনিয়োগ করে সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার ফর্ম, বই, কোচিং, পরীক্ষায় যাওয়া-আসা, ইত্যাদির পিছনে টাকা খরচ করতে; যেখানে প্রতি ১০০ জনে বড়জোর ১০ জন চান্স পায়।
কিছু গ্র্যাজুয়েট নিজের গরজে আর কিছু পরের খরচে বিদেশ উড়াল দেয়; টিকতে পারলে থেকে যায়; তারা আবার দেশ নিয়ে কিছু বলতে গেলে উল্টা গালিও খায়।

অনেক গ্র্যাজুয়েট এদিক-ওদিক ধাক্কা খেয়ে শেষে কামলা খাটে, কেরানিসর্বস্ব অর্থনীতিতে ফাইল দিয়ে দিনে ৯ ঘন্টা মাছি-মশা মারে, বিদেশে বানানো পণ্য ও সেবার বিপণন ও বিক্রয় করে, এদিকের মাল ওদিকে বিক্রি করে টার্গেট এচিভ করে মালিককে লভ্যাংশ পাইয়ে দিয়ে মাসে মাসে বেতন আসা নিশ্চিত করে।

মান্ধাতার আমলের, ঘুণে ধরা, অকার্যকরী শিক্ষাপদ্ধতি থেকে ছেঁকেছুকে যেসব সম্ভাবনাময় প্রোডাক্ট বের হয়, তাদের একটা বড় অংশকে বেতন-সুবিধা-ক্ষমতার টোপ দিয়ে পোষ মানিয়ে, চুপ করিয়ে, হাত গুটিয়ে বসিয়ে রাখি। এই বসিয়ে রাখার স্কিমের নাম "বিসিএস"।
বাকিদের একটা বড় অংশ দেশে নিরুপায় হয়ে বা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে নিজেদের ক্ষুধা ও পিপাসা মেটাতে বিদেশে গিয়ে উচ্চতর শিক্ষা, গবেষণা বা কর্মক্ষেত্রে যোগদান করে। চীন বা রাশিয়ার মত দেশগুলো দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তি নিয়মিত আমদানি-রপ্তানি করে উন্নতির চাকা সচল রেখেছে, আমরা সেখানে ডজন ডজন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর খুলে বিদেশে "দক্ষ কাজের লোক" রপ্তানি করি; আর নিজেরা ৬৫ হাজার কোটি টাকার "দক্ষ প্রকৌশল/প্রযুক্তি পেশাজীবি" আমদানি করি।

পলিটেকনিকগুলাতে বিনিয়োগও করি না, তাদের সম্মানও দেইনা, সমাজে পলিটেকনিকে পড়ালেখা করাকে নরমালাইজ/গ্লোরিফাইও করি না। অথচ, নিয়োগের সময় তাদেরকে প্রায়োরিটি দিয়ে ফ্যাক্টরির/প্রজেক্টের সব আসল কাজগুলা করাই, যার বেশিরভাগই কন্টাক্টারি কাজ। রাস্তা-ব্রিজ-বিল্ডিং কারণে-অকারণে বানিয়ে-মেরামত করে যেই সিন্ডিকেটগুলা কানাডার বেগমপাড়ায়, সুইস ব্যাংক এর ব্যালেন্স বা মালেশিয়ার সেকেন্ড হোম বানায়, তাদের কোম্পানিতেই ফরমায়েশ খেটে সন্তুষ্ট থাকে সেই মানুষগুলা, যারা হতে পারতো আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রকৌশলভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার কারিগর।

উপরদের বাদ দিয়ে বাকি আমরা যারা আছি, আমরাই মূলত দেশ চালাই। আমাদের কোন কাজ জানা লাগে না, ডিগ্রি লাগে না, ঘাম ঝরানো লাগে না, মাথা খাটানো লাগে না, পাবলিককে খুশি করা তেমন একটা লাগে না, মূলত আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, বাকিরা সংখ্যালঘু।
আমরা গলাবাজিতে ওস্তাদ। ফাঁকাফাঁকিতে, মিথ্যা ওয়াদা দেওয়াতে, লোকদেখানোতে। আমরা অতীতে কোন এক সময় বাঘ মেরেছিলাম, সেই বাঘের চামড়া দেখিয়ে দেখিয়ে আমরা এখন প্রতিরাতে বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধি।

আমরা মিউনিসিপালিটির ঝাড়ুদার থেকে শুরু করে দেশের একেবারে মাথা পর্যন্ত ছড়িয়েছিটিয়ে আছি। আমাদের ইশারা ছাড়া দেশে একটা পাতাও নড়ে না। যত উন্নয়নের ফিরিস্তি দিই আমরা, সবকিছুতে আমাদের প্রোফিট আছে, অংশীদারিত্ব আছে। আমাদের সরাসরি কোন ইনভলভমেন্ট লাগে না, আমরা দূর থেকে বসেই কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট থেকে অন্তত এক কোটি টাকা তো পকেটে ভরতেই পারি।

আমরা আমাদের নিজেদের মধ্যের কাওকেও ফাও কোন কিছু করে দিই না। দলের অভ্যন্তরীণ পোস্ট-প্রমোশন, চাকরির নিয়োগ-প্রমোশন, বিজনেস সেট আপ বা বিজনেস এক্সপ্যানশন, সবকিছুতে আমরা টেবিলের উপরে বা নিচ দিয়ে, গোলাপ বা গান দেখিয়ে কমিশন নিয়ে নিই।

আমরা আমাদের বানানো মেডিকেল কলেজ থেকে বানানো ডাক্তারদের চিকিৎসা নেই না বা মানি না; শত ঘাট ঘুরে শেষ পর্যন্ত ইন্ডিয়া বা সিঙ্গাপুরে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করাই। আমরা আমাদের বানানো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারি না বা যাই না। আমাদের টেন্ডার দিয়ে সেট-আপ করা হাসপাতালের যন্ত্রপাতি আমাদের নিজেদের রোগ নির্ণয় করতে পারে না, রোগ সারানো তো দূরের কথা। শুধু হাসপাতাল না, দেশের যেখানেই পারি, সেখানেই, লাগবে না- সেরকম জিনিস, বেশি দামে কিনে ভরিয়ে রাখি। অনেক ক্ষেত্রে, আমরা টাকা ভাগিয়ে নিই কোষাগার থেকে, কিন্তু জিনিসের অস্তিত্বই থাকে না। আবার অনেক সময় কেনা জিনিসের টাকা নিয়ে, সেই কেনা জিনিস আবার বিক্রি করে টাকা নেই। প্রতি বছর ত্রাণের কম্বল পাওয়ার পরে বিক্রি করে দেওয়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোকগুলোর মত; তারাও "আমাদের"-ই অংশ।

যা কিছু দেশের মানুষের দীর্ঘমেয়াদে উপকার করবে বা কাজে লাগবে, যা কিছু করলে মানুষের খরচ কমে যাবে, ঝামেলা কমে যাবে, সেসব আমরা আমাদের নীতিনির্ধারণী লেভেল থেকেই বাদ দিয়ে দিই। কারণ, ওসব করলে যেসব ব্যবসা মার খাবে, সেসব ব্যবসাতে ইতিমধ্যেই আমার ভাগীদারিত্ব আছে।

আমাদেরকে যে বা যারা কাজ পাওয়াতে সাহায্য করে, সাজা বা বিপদ থেকে বাঁচায়, তাকে বা তাদেরকে আমরা দুনিয়ার সব উজাড় করে ভালোবাসি, সমর্থন করি, পাশে থাকি। আমরা তারই লোক।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:২১
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×