somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তামাশা ও গদবাঁধা ধারণাঃ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১) ছোটবেলায় এলাকার একজন নির্দিষ্ট বন্ধুর মুখে প্রায়ই শুনতাম- "তোর বাবা ঘুষ খায়।" প্রথমে ঘুষ ব্যাপারটা বুঝতাম না। বাসায় গিয়ে মা-কে জিজ্ঞেস করতাম। মা বুঝিয়ে বলতো। ওরকম ছেলেদের সাথে মিশতে মানা করতো। কিন্তু আমি এড়িয়ে চলতে পারতাম না। জীবনে সবরকম মানুষের সাথে মিশেছি; কিন্তু কাওকে গায়ে পড়তে দেয়নি- অর্থাৎ সহজে ইনফ্লুয়েন্সড হইনি। মোটামুটি কম স্বচ্ছল পরিবারে জন্ম নিয়েও আমার জীবনযাপন স্বচ্ছল পরিবারের সন্তানদের মতই কেটেছে; জীবনের সব রূপ দেখেছি- এটাও একরকম অর্জন।

এই ঘুষের অপবাদ দেওয়া বন্ধুটার কারণে বাকিরা সহজে প্রভাবিত হতো- এটা শুধু পাড়ামহল্লায়। তাদের চেয়ে আমার জীবনধরণ অনেক দিক দিয়েই ব্যতিক্রম ছিল। সম্ভবত সেটা একটা বড় কারণ ছিল। তাছাড়া বাংলাদেশের বিচিত্র সব সামাজিক রীতিনীতি ও ধ্যানধারণার কারণে, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাবে, ভুল শিক্ষা ও ধারণা নিয়ে বেড়ে উঠে আমাদের দেশের মানুষেরা।

যখন জানলাম ঘুষ জিনিসটা কি, দুর্নীতি কিভাবে হয়, তখন খুব ভালো করে বাবার পেশাগত জীবন খেয়াল করলাম। আইনজীবি হিসেবে স্পেসিফিক কাজের ধরণে- ঘুষ নেওয়ার বা দেওয়ার সুযোগ নাই বললেই চলে। যেটা করার সুযোগ আছে, সেটা হলো অনৈতিক বা অবৈধ কোন কাজে ক্লায়েন্টকে সাহায্য করা (ক্লায়েন্টকে বাংলায় মক্কেল বললে আবার আমার এরিস্টোক্রেট স্কুলের সহপাঠীদের হাসির কারণ হতাম; সে অন্য ইতিহাস)। অর্থাৎ, এমন কোন কাজে/মামলায় নিজেকে যুক্ত করা, যেখানে বাদী অন্যায়ভাবে কোন কিছু দাবী করছে; এবং সেই কাজে অতিরিক্ত ফিশ/সম্মানী নেওয়া।

আইনজীবি স্বাধীন পেশা; এই কারণে ওকালতিকে অনেকে আইনব্যবসা বলে। ব্যবসায়ীদের যেমন নানান সাইজের দোকান থাকে, নানাবিধ পণ্যের বা সেবার পসরা নিয়ে বসেন, তেমনি উকিলরাও নিজ শিক্ষা/ডিগ্রি/অভিজ্ঞতার আলোকে আইনসেবার দোকান খুলে বসেন। অতএব, তার আয়-উপার্জন ফ্লেক্সিবল। অন্যদিকে ঘুষের সংজ্ঞাই হল "উপরি"; অর্থাৎ নির্দিষ্ট আর্থিক লেনদেনের বাইরে অতিরিক্ত অবৈধ লেনদেন। এই কাজের সুযোগ তাদেরই রয়েছে, যাদের নির্দিষ্ট বেতনে ঘর চলে- যেমন সরকারি কর্মচারী।

আমি খুব ছোট থাকতেই এই অপবাদটা ডিবাংক করতে পারতাম, চেয়েছিলামও। কিন্তু বুলিইং করা মানুষগুলো শুনেনি। আজ হয়তো তারা জানে, বুঝে; হয়তো সংকোচও করে। কারণ, আমাদের পারিবারিক উন্নতি খুব ধীরভাবে হয়েছে, হচ্ছে। আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হতে পারিনি।

আমার শৈশবে মোটরসাইকেল (ভেসপা) চালানো আমার বাবা আজও বাংলাদেশের থার্ডক্লাস পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলাফেরা করে কাজে যাওয়াআসা করে। ঘুষ বা এরকম কিছু করে নিজের বা পরিবারের আহামরি কিছু করতে পারেনি কখনো।

২) দ্বিতীয় যে কথাটা প্রায়ই শুনতাম- দুই/একজনের মুখে, সেটা ছিল "মামলা করে দিবে"। অর্থাৎ, আমার সাথে কথোপকথনের সময় তাচ্ছিল্য বা তামাশা করে কিছু বলতে গিয়ে সাথে জুড়ে দিতো- "... কিছু বললে মামলা করে দিবে।"

একজন লইয়ার নিজে পেশাজীবি হিসেবে অন্যের মামলা পরিচালনা করেন, নিজে সে মামলা দেন না; আরেকজনের হয়ে কেইস ডিরেকশন বা ম্যানেজ করেন। অনেকটা প্রফেশনাল এসাসিনের মত। কন্ট্র্যাক্ট না পেলে, এসাসিন কারো গায়ে টোকাও দেয় না। যদিও সে কিলিং এ পারদর্শী। অতএব, উকিল চাইলেই যখন তখন যেকারো ব্যাপারে মামলা করে দিতে পারেন না। মামলা করতে টাকা লাগে; আর সবচেয়ে পেইনফুল- প্রচুর সময় লাগে। আইনগত জটিলতা আর দীর্ঘসূত্রিতাই বাংলাদেশের ন্যায়বিচারের অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা।

আমি প্রায় ১৭ বছরের উপর এসব গায়ে নেইনি; ভেবেছি- স্রেফ মজাই করে তো। যখন ম্যাচিউরিটি আসবে, তখন বন্ধ হয়ে যাবে। মজা করা এক জিনিস, আর কারো আত্মসম্মানে ক্রমাগত পাবলিকলি আঘাত হানা- অন্য জিনিস। আপনি যদিসময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে না পারেন, বিশেষত অন্যকে ইভ্যালুয়েট করার ক্ষেত্রে, তবে সেটা আপনার বড় একটা দুর্বলতা। বন্ধুত্বে মধ্যে মজা করার অনেক রকম পথ আছে, তবে সেটা এমন কিছু হওয়া উচিত নয়, যেটা পুরোপুরিই অবান্তর এবং অসম্মানজনক। আর সবচেয়ে বড় কথা- ব্যাপারটা সত্যি নয়; মিথ্যা সবসময়ই অস্বস্তিদায়ক। যদি এরকম হতো- মামলা করে করে, অন্যদের ব্ল্যাকমেইল করে, চাপে ফেলে, ভয় দেখিয়ে, কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করে, আজ আমরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করে আসছি, তবে ওসব কথা আমার গায়ে লাগতো না। নির্লজ্জতার কারণে চামড়া পুরু হয়ে যেতো অনেক আগেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ২:০৩
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×