ঘুম থেকে উঠেই সাংবাদিক ও অভিবাসী-বিশেষজ্ঞ প্রিয় শরীফুল হাসান ভাইয়ের একটা স্ট্যাটাস চোখে পরলো- "পদ্মা সেতু কিংবা কোভিডের টিকা! দুটো ঘটনাই খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে এবং বারবার মনে হয়েছে এই বাংলাদেশ দারুণ এক বাংলাদেশ! আমার খুব চাওয়া প্রতিটি ঘটনাতেই এমনভাবে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ, ব্যবস্থাপনাগুলো হবে সুন্দর, সুশাসন আসবে সর্বত্র। জয় বাংলা!"
তারও কিছুক্ষণ পরে চোখে পরলো ডয়েচেভেলে বাংলার একটা অনলাইন পোল- "প্রিয় দর্শক, বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে কি আপনি দুর্বল ও ভীতসন্ত্রস্ত মনে করেন?" ৯৩% তার উত্তরে হ্যাঁ বলেছে। সাথে সাথে বুঝে গেলাম, শরীফ ভাইদের মত মেধাবী, প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাময় সাংবাদিক-পেশাজীবিগণ কেন পেট ও পিঠ বাঁচাতে ইনিয়ে বিনিয়ে বাংলাদেশীত্বকে গ্লোরিফাই করে, সাহসের সাথে পদস্থদের চ্যালেঞ্জ করার পরিবর্তে মিউ-মিউ করে আবদার করে।
এই যে মাত্র এক বছরের কম সময়ের মাথায়, দুনিয়া-আলোড়িত এই সংক্রামক রোগকে প্রতিরোধ করতে, বিশ্বের বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট দেশে, এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হলো, এর কৃতিত্ব কার? কাকে দিতে হয়?
সেই নির্দিষ্ট দেশগুলো। সেই নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীগুলো। সেই বৈজ্ঞানিক সংস্থাগুলো। সেই অসাধারণ বিজ্ঞানীগুলো। তাদের স্পন্সর। তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাদের পরিবার। তাদের রাষ্ট্রকাঠামো। তাদের সরকার। তাদের উপর আস্থা রাখা ও আশা রাখা জনগণ।
মানবইতিহাসে আগে কখনোই এরকম যুগান্তকারী, দ্রুত ও অপেক্ষাকৃত কার্যকর সমাধান বের করা হয়নি, জনসম্মুখে আনা হয়নি। ওরা এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাতদিন, যাতে ১০০% এর কাছাকাছি কার্যকর কোন ভ্যাক্সিন বের করা যায়, যাতে সর্বনিম্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ভ্যাক্সিন বের করা যায়।
এই লোকগুলো পৃথিবীর শত শত প্রতিকূলতা আর কোটি কোটি বিরুদ্ধাচরণ মানুষকে পাত্তা না দিয়ে, প্রভাবিত বা ভীত না হয়ে, তাদের কাজ করে যাচ্ছে। আমরা একবারও ভেবে দেখেছি, ভ্যাক্সিন কি ছেলের হাতের মোয়া? বাড়ির পিছনের নিমগাছের পাতা নিয়ে, সেটা হামানদিস্তা দিয়ে পিষে, তাতে কালোজিরার গুড়া মিশিয়ে, হালকা গরম পানি দিয়ে খাওয়ার মত সহজ??
বিশ্বের বা বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ- মানবসভ্যতার মূল রহস্য, উৎকর্ষ ও অভিযানগুলো সম্পর্কে অনবগত, উদাসীন, বুঝতে অপারগ। বেশির ভাগ মানুষ সাধারণত ইতর প্রাণীর কাছাকাছি লেভেলের বুদ্ধি ও বিবেক ধারণ করে থাকে। তাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য সারভাইভাল। এই টিকে থাকতে গিয়েই তারা ব্যক্তিপূজা করে, শক্তিপূজা করে। ক্ষমতা আর ক্ষমতাশালীর দাসত্ব করে। টিকে থাকতে গিয়েই তারা কোভিডের ভ্যাক্সিন দেওয়ার সময় চেঁচিয়ে উঠে- "জয় বাংলা।" টিকে থাকতে গিয়েই তাদের অবচেতন বা সচেতন ব্যাক্তিত্বের সাথে কথা বলে উঠে পদ্মা সেতু।
ব্লগ পাবলিশের কয়েক ঘন্টা পরে ছবিটা সংযোজন করলাম। এটা সম্ভবত কোভিড ভ্যাক্সিন দেওয়ার একটা স্থান। কেউ বলে না দিলে বুঝাই যাচ্ছে না। দেওয়ালে বঙ্গবন্ধু আর তার পরিবারের সদস্যদের বিশাল বিশাল ছবি। মনে হচ্ছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধকে যেরকম ধান্ধাবাজির বস্তু বানিয়ে ফেলা হয়েছে, তেমনি বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকেও শাসন-শোষণ-ভয়ভীতির হাতিয়ার বানিয়ে ফেলা হয়েছে। সবই লোকদেখানো। আর, কোভিডের ভ্যাক্সিন দিতে এসেছে; অথচ কোভিডের মূল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাই হচ্ছে- সামাজিক/শারীরিক দূরত্ব। কিন্তু আমাদের দেশের মত বিশৃঙ্খল, অবাধ্য, বেপরোয়া আর উজবুক সমাজে এসব মানানো আসলেই অসম্ভব ব্যাপার। প্রশাসন/কতৃপক্ষ আর কত চেষ্টা করবে? ওদেরকেও দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই। অত্যুৎসাহ আর তোষামোদীভাব- বাঙ্গাল জাতের রক্তে মিশে গিয়েছে। করোনার চেয়েও সংক্রামক ও ঘাতক এইসব বৈশিষ্ট্য।