প্রথমেই বলে নিই , কারো কাছে দৃষ্টিকটু লাগলে নিজ গুনে ক্ষমা করে দিবেন। সামু তে অনেক ভারী ভারী পোষ্টের মাঝে কারো ক্লান্তি লাগলে একটু ঢু মেরে যান , দেখে যান আমাদের সংসার।
ছোট বেলা(এই ধরেন ইন্টার) থেকেই ইঞ্জিনিয়ার-ডাক্তার কাপল দের প্রতি আমার আলাদা একটা টান আছে। কেমন যেন সোনাই সোহাগা টাইপের মনে হত। গুরুজন দের দোয়া এবং আল্লার অশেষ রহমতে আমি নিজেই এখন এই কাপল দের সারিতে পড়ি। না , ভাল লাগত বলে ইচ্ছা পূর্বক এমন করেছি তা না , হয়ে গেছে এমনি এমনি।
আজ ২ বছর হল( আমি তখন ২য় বর্ষে) আমাদের এই সুখের সেমি- সংসার এর যাত্রা শুরু। সেমি সংসার কারন , সপ্তাহে ৭ দিনের মাঝে ১ দিন ই আমাদের সংসার । বাকি ৬ দিন পরের সপ্তাহের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা।
শুক্রবার দিন আমরা ২ জন ই ফ্রী , সেদিন আমাদের জন্য ঈদ। বিশ্বাস করুন ঈদ ও এত আনন্দের হয়ে আসে না আমাদের ২ জনের জীবনে। যেহেতু সারা সপ্তাহ পড়া শুনা আর ল্যাব এর চাপে অস্থির হয়ে থাকি এবং আমার বউ(হবু , ইনশাল্লাহ) ও তার আইটেম , কার্ড না ফার্ড কী যেন কয়( এই অদ্ভুত নাম গুলা আমার মনে থাকে না) এর চাপে আধ্মরা হয়ে থাকে , তাই ২ জন ই সকাল ১১ তা পর্যন্ত টানা সুখের ঘুম দিই । আহ , ঘুমের চেয়ে আরামের আর কী আছে কে জানে?
তারপর ১১ টাই উঠে ফ্রেস হয়ে যে যার ক্যাম্পাস এই নাস্তা করে নিই। তারপর কোন রকমে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত কিছু না কিছু করে কাটিয়ে দিই। তারপর , শুরু হয় আমাদের সংসার। আমি রেডি হই , সে ও রেডি হয়। তারপর ওকে ওর হোস্টেল থেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি আমাদের ভাসমান সংসার যাত্রায়।
খুলনা এমনি তেই ছোট শহর , তাই প্রথমে পুরা খুলনা রিকশায় করে ২ পাক দিয়ে নিই। আর এরি মাঝে চলে কথা কাটা কাটি , হালকা মারা মারি । অবশ্য এ সময় আমার হাত বা মুখ ২ টাই কম চলে , বেশি চলে ওর।
তারপর সন্ধ্যা বেলা যখন ২ জন বান্দরের মত ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত , তখন আমাদের পার্মানেন্ট একটা রেস্টুরেন্ট এ চলে যাই। এটা আমাদের পার্মানেন্ট কারন, এটাতে ভিড় কম। তারপর চলে খাওয়া দাওয়া , ২ জন ২ জনকে সারভ করে দিই। তখন মনে হয় না যে আমরা একটা রেস্টুরেন্ট এ বসে আছি , মনে হয় নিজেদের ঘর। এই সময়ে আমার সব থেকে ভাল লাগে ওর সরলতা(নাকি ভালবাসা , কে জানে ?)। নিজে খায় ১ চামচ ভাত আর আমাকে পুরা ৬ দিনের ভাত এক সাথে খাইয়ে ছাড়ে। আমার নাকি আরও বেশি খাওয়া উচিত , না খেয়ে খেয়ে একটা শুকনা বাদুর হয়ে গেছি! আমি বলি, শুকনাই তো ভাল , পারফরম্যান্স ভাল হবে। ও বেশ কিছুক্ষণ এর মানে না বুঝে বোকার মত চেয়ে থাকে। তারপর যখন বোঝে , অন্তত ৫ মিনিট আমার চোখের দিকে না তাকিয়ে কথা বলে।
ভোজন পর্ব শেষে আমরা এবার আর একটু ঘুরি । তারপর বিকাল বেলা চলে যায় মীনা বাজার বা সেফ এন্ড সেভ , ওর সারা সপ্তাহের কেনা কাটা করতে। ২ জনে মিলে পছন্দ করে জিনিস পাতি কিনি আমরা। সব কিছু মূলত ওর জন্যই কেনা।তবে আমাকে কিছু না কিনে দিয়ে সে ক্ষান্ত হবে না , অন্তত এক প্যাকেট বিস্কিট বা অন্য খাবার কিছু।
তারপর আমরা ঢুকি কাচা বাজারে , চাল আর কাচা তরকারি কিনতে। আমি ওকে অনেক বলি এগুলা তো মিনা বাজার থেকেও কেনা যেত , কিন্তু ওর কথা ওখানে কিনলে নাকি অপ্রয়োজনীয় খরচ হবে। আমি যেমন বেহিসাবী , ও ঠিক তার উলটা। এক টাকাও উলটা পাল্টা খরচ করবে না , আমাকেও করতে দেবে না।
আমাদের এই ঘণ্টা পাঁচেক এর সেমি - সংসার এ সব থেকে যেটা ভাল লাগে তা হল বাজার করা। বাজার করার আলাদা মজা আছে( একা না , প্রিয় জনের সাথে )। আমি তো হলেই থাকি , তাই ডাইনিং চালাই। নিজের জন্য বাজার করতে হয় না। কিন্তু আমার বউ আবার রুম এ রান্না করে নিজে। ওর সাথে বাজার করাটা আমি খুব এনজয় করি ! উনি আবার সব আইটেম নিতে চান না , কারন সব কিচু রান্না করতে পারেন না। পুরা ব্যাপার টাতে কেমন একটা ভাল লাগা কাজ করে। আর নিজেকে খুব দায়িত্ব বান মনে হয় তখন।
আর হ্যাঁ , আমরা যেগুলা বাজার করি , ও আমাকে সেগুলার মাঝ থেকে কিছু একটা আইটেম রান্না করে পরের সপ্তাহে বের হবার সময় আমার জন্য নিয়ে আসে। রেস্টুরেন্ট এ অর্ডার দেয়া খাবার এর সাথে ওর রান্না করা তরকারী ও খাই। কিন্তু ওর রান্নার কাছে মনে হয় দুনিয়ার কোন শেফ এর রান্না ই টিকবে না। আমি ভাবি , ওই রান্নার মাঝে কী ভালবাসা ও মিশে থাকে কিছু টা?!!
সামনে আবার আসছে শুক্রবার ! আবার আসছে আমাদের ছোট্ট সংসার এর ডালি সাজানোর পালা। ভাইয়ারা এবং আপুরা , দোয়া করবেন যেন আমাদের স্বপ্নের সংসার সেমি থেকে ফুল এবং ছোট্ট থেকে বড়ো() হয়ে উঠে খুব শীঘ্রই।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৪৪