somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিকারগ্রস্থ আগন্তুক
।।এস যুক্তির আঘাতে মুক্ত করি চেতনার জট।।

কালো চোখের জল

২০ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বি:দ্র: ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরার প্রয়াস।

এক।।
কোনরকমে দরখাস্তটা অফিসে দাখিল করেই প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে রুমে চলে এল তানি। ব্যগ গোছাতে শুরু করল, বাসায় যাবে। অনেকদিনের পরিশ্রমে ফসল এভাবে ধুলিস্মাৎ হয়ে যাবে? ভাবলেই চোখ ফেটে কান্নার উপক্রম হচ্ছে তানির। এরকম হবার কোন দরকারই ছিল কি? অনার্সে সেকেন্ড ক্লাস নিয়ে ছয় বছরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞান নিয়ে পাশ করেছে তানি। মাস্টার্সেও ছিল সেকেন্ড ক্লাস। পরিবার, নীকটাত্মীয় কি দুরসম্পর্কের কোন আাত্মীয়ও তার কেউই হোমড়াচোমড়া কেউ না। দুই বছর একের পর এক ভাইভা দিতে দিতে পায়ের ডজনখানেক চটির গুস্টিউদ্ধার করে চাকরি নামের সোনার হরিনটা অর্জন করেছে তানি। মাস দেড়েক হল চাকরিটা শুরু করেছে। এর মাঝে কেন তার পক্স হবে। না চাকরি হারাবার ভয়ে তানির কান্না পাচ্ছে না। সরকারী চাকরি খুব বেশী হলে বান্দরবনে বদলি করতে পারে, আর না হলে ওএসডি।

দুই।।
নারী হবার মহান গৌরব নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিল তানি।

"পৃথিবীর যা কিছু মহান চির কল্যানকর,
অর্ধেক তাহার গড়িয়াছে নারী অর্ধেক তাহার নর।"


কবি নজরুলও বোধকরি এই পঙক্তিদুটি শুধুমাত্র নারীদিবসের জন্য লিখেছিলেন। নারীত্বের সবকিছুই যেন ঐ সুন্দরী মেয়েদের জন্য। তার চামড়া ময়লা, মুখে ব্রনের বিদঘুটে দাগ। রঙ ফর্সাকারী ক্রিমগুলোর বিজ্ঞাপনে যেমনটা দেখায়, স্পটলেস আর সাদা চামড়ার নারীদের যেেমন আত্ববিশ্বাসী পদক্ষেপ, তেমনি এই চেহারা নিয়ে তানিও হীনমন্যতায় লীন হয়ে গেছে সেই ছোটবেলা থেকেই। ক্লাস টেনে পড়ার সময় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায়ী অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করার ইচ্ছে ছিল তানির। ওর বাংলা উচ্চারন শোনার মত। স্পষ্ট প্রতিটি বর্ন যেন হৃদয় নিঙড়ে বের করে আনও তানি। তারপরেও ও সাহস করে টিচারদের কাছে গিয়ে বলতে পারেনি উপস্থাপিকা হবার বাসনাটা।

ছোটভাইটাকে দিনেরপর দিন বাজারে পাঠিয়ে মেথি কিনিয়ে এনেছে, চুলে দিয়েছে, বেটে মেখেছে মুখে; কুষ্টিয়ায় রবী ঠাকুরের কুঠিবাড়ীতে কলেজ থেকে ট্যুরে গেলে ওখানের দোকান থেকে কিনে এনেছে চন্দন কাঠ; কোথায় যেন পড়েেছিল চিরতার রস শুধুমাত্র ঔষধি গুনাগুন নিয়েই বসে নেই, চামড়ার ময়লাও নাকি তা বের করে দেয়, এরপর থেকে রাতে চিরতা ভিজিয়ে প্রতিদিন সকালে চিরতা খেয়ে মুখ দুই কান পর্য়ন্ত নিয়ে বসে থেকেছে দিনের পরদিন। এত ঘসামাজার পর চামড়ার ময়লা কাটেনি, একটা লাভ অবশ্য হয়েছে। মুখের ব্রনের দাগগুলে আর ছিল না।

এর ভিতর এই পক্স বাধিয়ে বসে আছে তানি। পক্স আবার মুখেই আক্রমন করেছে সবার আগে। এই কালো মুখটায় আবার হবে পক্সের গর্ত। ওর ছোটভাইয়ের পক্সের পর বাম চোয়ালে এখনো গর্ত হয়ে আছে। এতকিছু চিন্তা করেই চোখ ফেটে পানি আসার উপক্রম হচ্ছে তানির। না পানি আটকে রাখা গেল না। মামীর কাছে ফোন দিয়ে কান্নাই করে দিল তানি।

তিন।।
হয়ত ভবিষ্যতে এরকম কোন গল্প নিয়ে কোন চামড়া ব্যবসায়ী রঙ ফর্সা করা ক্রিমের বিজ্ঞাপন হবে। মুখের দাগ নিয়ে আয়নার সামনে বসে কাদছে এরকম কোন মেয়েকে দেখিয়ে বলবে বলবে-
"এরকম পরিনতি না চাইলে এখনই ঘরে আনু এক্স ওয়াই জেড ক্রিম, ত্বক হবে বার্জার পেইন্টের সাদা রঙের মত। ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ।"

চামড়া ময়লার এই হীনমন্যতা আমাদেরই তৈরি। আমরা নিজের অজান্তেই হয়ত এরকম হীনমন্যতা বাড়িয়ে তুলি ঐ মেয়েটির মনে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:২২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×