মফিজ মিয়া ছিলেন একজন পাতি মাস্তান। এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে ওঠাবসা করে তিনি এখন উঠতি নেতার কাতারে চলে এসেছেন।তাকে তার শুভাকাংখি বন্ধুরা উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের কাছাকাছি আসার জন্য ফেসবুকে একাউন্ট খোলার পরামর্শ দিলো ।তার সহকারী গিট্টু মিয়া অত্যন্ত এক্সপার্ট।সে মফিজ মিয়ার নামে একাউন্ট খুলে বড় বড় নেতাদের আইডিতে ফ্রেন্ড রিকোওয়েষ্ট পাঠিয়ে ফ্রেন্ড করে দিলো। এছাড়া কিছু সেলিব্রেটি নেতাদের পেইজে লাইক দিয়ে একটিভ করে দিলো।২/৪ দিন যাওয়ার পর মফিজ মিয়া দেখলেন,ফেসবুকিং আসলেই সোজা।তখন তিনি নিজেই ফেসবুকিং করা শুরু করলেন।তিনি ডেইলি ৮/১০ ঘন্টা ফেসবুকে সময় দিয়ে নেতাদের কাছে আসার চেষ্টা করতে লাগলেন। নিজের দলের নেতারা মুখ দিয়ে ফুস করলেও সেটা লাইক দিয়ে প্রশংসাসুচক কমেন্ট করলেই নেতারা খুব খুশী হয়।আর টাইমলাইনে আওয়ামী বিরোধী কোনো লেখা আসলে, পাকী জারজ,রাজাকারের বীর্য,ছাগু ইত্যাদি গালাগালি করে কমেন্ট করে তার ফেসবুকিং ভালোই চলছিলো।
কিন্তু সমস্যা হয়েছে গতকাল রাতে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সাংবাদিক শফিক রেহমানের পক্ষ নেয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের সমালোচনা করে তাকে ফেসবুকে আনফ্রেন্ড করার আহবান জানিয়েছেন।
ইমরান এইচ সরকারকে ফেসবুকে আনফ্রেন্ড করুন: জয়
তিনি সাথে সাথে ডা. ইমরান এইচ সরকারের ফেসবুক পেইজে ঢুকলেন।এতদিন তিনি জানতেন,ইমরান তাদের নিজেদেরই লোক,তাই তার সমর্থন করতেন।আজকে যেহেতু তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন 'হয়তো বিএনপি তাকে পয়সা দিয়েছে। কে জানে। যেভাবেই হোক, আমি তার প্রতি সব শ্রদ্ধা হারিয়েছি।'
আজকে ওর একদিন কি মফিজ মিয়ার একদিন।প্রথমে ঢুকেই কিছু স্বভাব সুলভ গালাগালি করলেন।তারপর খুজলেন কিভাবে আনফ্রেন্ড করা যায়।কিন্তু কোনো ভাবেই অপশনটা খুজে পাচ্ছিলেন না।এদিকে তার সহকারী গিট্টু মিয়া বিয়ে করার জন্য বাড়ীতে গেছে।তাকে ফোন দিলেন।
সে ফোনে বুঝিয়ে বললো, আসলে তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সাহেব হয়তো আনলাইক করতে বলতে গিয়ে আনফ্রেন্ড করতে বলছেন।কারন ফেইসবুক সাধারনত তিন ধরনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় :
১. আইডি : ফেইসবুক আইডি হলো ব্যাক্তিগত , যা কোনো ব্যাক্তির নাম সাধারণত খুলে থাকে !
২. পেজ : এটাও ব্যাক্তিগত বা কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম হয়ে থাকে !
৩. গ্রুপ : এটা সাধারনত কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে বা সংগঠনের নামে হয়ে থাকে !
এই তিন ধরনের মধ্যে কেবল মাত্র আইডিতে ফ্রেন্ড আনফ্রেন্ড অপশন আছে !
যেহেতু ডা. ইমরান এইচ সরকারের ফেসবুক পেইজ।সুতরাং এটা আনফ্রেন্ড করা যাবে না।আনলাইক করতে হবে।'
গিট্টু মিয়ার কথা শুনে মফিজ মিয়ার মেজাজ চরমে উঠে গেলো।সেও মনে হয় বিএনপির টাকা খাইছে।তাই এত বড় কম্পিউটার বিজ্ঞানীর ভুল ধরে।তাকে কিছু গালাগালি করে ফোন কেটে দিলেন।
মফিজ মিয়া আবারো নিজে নিজে আনফ্রেন্ড করতে চেষ্টা করতে লাগলেন।কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।এমনিতেই গরম,তার উপর টেনশনে আরো ঘামাতে লাগলেন।মাঝে মাঝে তন্দ্রার মত আসলে,স্বপ্নে নেতা চলে আসেন এবং জিজ্ঞাসা করেন কি রে মফিজ আনফ্রেন্ড করছিস?্তখন তন্দ্রা ছুটে যায়।আবারো মোবাইল হাতে নিয়ে চেষ্টা করেন।নাহ কোনো ভাবেই হয় না।
মফিজ মিয়ার এই বিপদ থেকে উদ্ধারের কোনো উপায় কি কেউ জানেন? কিভাবে ফেসবুক পেজ থেকে আনফ্রেন্ড করতে হয়?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৯