somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৌদ্ধদের উপর হামলা: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ কি না...?

১৬ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৭:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীদের প্রায় ১০টি উপাসনালয়সহ অনেক ঘর-বাড়িতে বর্বর হামলা,ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নির্মমভাবে ক্ষতিসাধন করা হয়েছে বুদ্ধের অমূল্য কিছু মূর্তির।
যাপিত জীবনে এমন একটি লজ্জাজনক ঘটনা আমাকে হতবুদ্ধি করে দিয়েছে। এই ন্যাক্কারজনক বর্বর আচরনকে নিন্দা জানিয়ে লেখার কোন ভাষা আমি খুঁজে পাই নি। তাই এ ব্যাপারে পরিচিত মন্ডলে আলোচনা ও নির্বাক ঘৃণা প্রকাশ ছাড়া কিছু লিখার চেষ্টা করি নি।
তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি বিষয় আমাকে আলোড়িত করছে। আর মাথায় খুবই সাদামাটা কয়েকটি প্রশ্ন ঘুর-পাক খাচ্ছে। ১.প্রথম প্রশ্নটা হলো কেন এই বর্বর হামলাটা হলো ? ২.এই হামলার ফলে মূলত কারা লাভবান হেচ্ছে বা হবে ?
কারা হামলার সাথে সরাসরি জড়িত তা হয়তো প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ ও কারো মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে গণমাধ্যম আমাদের কিছু জানানোর চেষ্টা করছে । সেটা নিতান্তই অপ্রতূল এবং উল্যেখ করার মতো কিছু নয়। এর ফলে মূল ঘটনা সম্পর্কে তেমন কিছু আসলে জানা যাচ্ছে না। আর মিডিয়া প্রতিষ্ঠান গুলোও রাজনৈতিক মতবাদের উর্দ্ধে উঠতে পারছে না।
আর বাংলাদেশের সকল সংকটের মতো এই ইস্যুতেও সরকারী ও বিরোধী দলের একে অপরকে দোষারোপের নোংরা রাজনীতির ব্যাতিক্রম হয় নি । এ পরিপ্রেক্ষিতে এটা আশা করাও বোধহয় বোকামি হবে যে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে; আর প্রকৃত দোষীরাও শাস্তির আওতায় আসবে।

তাহলে কী হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, হয়তো দায়সারা গোছের কোন তদন্ত হবে এবং চুনোপুটি যারা হয়তো উজবুকের হুজুগে পড়ে উক্ত ধ্বংশযজ্ঞে অংশ নিয়েছিল তাদের হয়তো কিছুটা লোক দেখানো শাস্তি হলেও হতে পারে।এতে কাজের কাজ কিন্তু কিছুই হবে না। কারণ এই হামলার ফলে বাংলাদেশের সুদূরপ্রসারী ক্ষতি যা হবার তা কিন্তু হয়ে গেছে। এবং এর পিছনে যে শক্তি বা mastermind তারা কিন্তু আড়ালেই থেকে যাবে।
সুদূরপ্রসারী ক্ষতি বলতে আমি বোঝাতে চাই-
এ দেশে শান্তি প্রিয় জাতি হিসেবে পরিচিত বৌদ্ধদের সাথে মুসলমানদের শত শত বছর ধরে সহাবস্থানের ফলে যে আস্থা বা বিশ্বাসের মহা প্রাচীর তৈরি হয়েছিল তা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।
এখন এ বিশ্বাস বা আস্থা ফিরিয়ে আনার কথা বলা হচ্ছে, আমার মনে হয় না সেটা কখনো সম্ভব হবে; কারণ যত যা কিছুই করা হোক না কেন, ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায় হয়েই এটি টিকে থাকবে চিরকাল।
তাহলে কি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে সরকার?
না তা কখনো হতে পারে না।
সরকারের উচিৎ ক্ষতিগ্রস্থদের তাৎক্ষনিকভাবে ক্ষতিপূরণ ও পুনঃবাসনের ব্যাবস্থা করা এবং যত দ্রুত সম্ভব এই বর্বর ঘটনার সাথে যাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগ রয়েছে তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে নির্দোষ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয়!
বাংলাদেশের তিনদিকেই ভারত বেষ্টিত। স্বাধীনতার পর থেকে কখনই প্রতিবেশী এ দেশ দু’টি দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লীষ্ঠ বিষয়গুলোতে সম্মানজনকভাবে ঐকমত্যে পৌছতে পারে নি।
বাংলাদেশের সাথে সীমান্ত রয়েছে আর মাত্র একটি দেশের- সেটি হলো মিয়ানমার।
বৌদ্ধপ্রধান এ দেশের আরাকান রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর মাঝে মাঝেই জাতিগত দাঙ্গা চালানো হয়েছে। রামুতে হামলার জন্য অনেকে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের দায়ী করছেন। এই অভিযোগের নিশ্চয়ই কিছু ভিত্তি আছে; তবে আমাদের ভেবে দেখতে হবে একটি উদ্ভাস্তু জনগোষ্ঠীর কতটুকু ক্ষমতা থাকতে পারে যে তারা এ দেশের প্রতিষ্ঠিত বৌদ্ধদের উপর পরিকল্পিত একটি জাতিগত হামলা চালাতে পারে?
অনেকে বলছেন, ফেইসবুকে একজন বৌদ্ধ যুবকের কোরান অবমাননার ফলে এই হামলা চালানো হয়েছে; আমার মনে হয় বৌদ্ধদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করার বৃহৎ কোন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ ইস্যুটিকে কাজে লাগানো হয়েছে।
আমাদের ভাবতে হবে, এই যে হামলা হলো এটি কোন দেশীয় বা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ কি না?
আমার এমন সন্দেহের কারণটা হলো-এই ঘটনার ফলে বাংলাদেশের সাথে বৌদ্ধ প্রধান দেশ যেমন মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন, জাপান, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি দূরপ্রাচ্যের এই দেশগুলোর সাথে ইতমধ্যেই সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বা ভবিষ্যতে আরো হবে।
বাংলাদেশের ‘লুক ইস্ট’ পররাষ্ট্রনীতির একটা অংশ যা এই ঘটনার ফলে বাধাগ্রস্থ হবে।বাংলাদেশের ‘পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীত’ বাধগ্রস্থ করা ষড়যন্ত্রের অংশ কি না তাও বিবেচনায় রাখতে হবে। ইতমধ্যেই আমরা দেখেছি বিভিন্ন দেশে বাংলদেশের দূতাবাসগুলোর সামনে বিক্ষোভ হয়েছে, কোথাও দূতাবাসে ছোটখাট হামলা হয়েছে।
বাংলাদেশে রয়েছে বৌদ্ধদের হাজার বছরের সভ্যতার ইতিহাস। যার জন্য এদেশের সকল ধর্মের জনগোষ্ঠী গর্ববোধ করে ।এ দেশে অবস্থিত হাজার বছরের বৌদ্ধবিহার গুলো আমাদের ‘সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি।এ ক্ষেত্রেতো আমরা সে গুলোকে শুধুই বৌদ্ধদের বলে বেড়াই না;
তাহলে আজকে কারা আমাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক ভ্রাতৃত্বের এ সুসম্পর্ককে ছিন্ন করার চক্রান্তে লিপ্ত তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।বিশ্ববাসির কাছে আমাদের জাতীয় মর্যাদা সমুন্নত করতে হবে। আমি মনে করি শুধু এভাবেই আমাদের মধ্যকার হারানো আস্থার সম্পর্ক পুণঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব হতে পারে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×