গণিত পরীক্ষার চালাকি
স্কুলের সেই চতুর ছেলের গল্প বলি। গণিত পরীক্ষা চলছে। ভালোভাবেই দিচ্ছিলো পরীক্ষাটা। হঠাৎ একটা অঙ্ক সে মেলাতে পারছিলো না – কোথায় যেন একটা ঝামেলা হচ্ছে। অঙ্কটা তার অপরিচিত নয়। উত্তরটা ছিলো জানা। সে এখন একটা ছোট্ট চালাকি করতে পারে। অঙ্কটার শেষে কোনমতে বসিয়ে দিতে পারে সঠিক উত্তরটি। আশা করা যায়, পরীক্ষকের চোখে চালাকিটা ধরা পড়বে না।
অনেকটা কাছাকাছি কাজ করেছিলেন আইনস্টাইন। বিগব্যাঙ নিয়ে করেছিলেন একটি ভুল। চলুন সেই গল্প শোনা যাক।
আইনস্টাইনের ভুল
বিজ্ঞানী হাবল বিগব্যাঙকে একটি তাত্ত্বিক রূপ দেন। তার সমসাময়িক অনেকেই এই তত্ত্ব নিয়ে বিশাল দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েন। তাদের মাঝে একজন ছিলেন আইনস্টাইন।
আইনস্টাইন ভাবতেন, মহাবিশ্ব স্থির। অর্থাৎ সৃষ্টির শুরুতে মহাবিশ্ব যেমন ছিলো, এখনোও ঠিক তেমনই আছে। আর বিগব্যাঙ তত্ত্ব বলে যে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে।
আইনস্টাইনের বিখ্যাত একটি তত্ত্ব সাধারণ আপেক্ষিকতা। তিনি আশা করতেন, এই তত্ত্ব তাকে মহাবিশ্বের গঠন সম্পর্কে একটি ধারণা দেবে। এই তত্ত্বটি সম্পূর্ণ করার পর তিনি বিশ্মিত হয়ে গেলেন। এই তত্ত্ব বলছিলো, মহাবিশ্ব স্থির নয়। হয় তা সম্প্রসারিত অথবা সংকুচিত হচ্ছে। এই গাণিতিক উপসংহার ছিলো তার স্হির মহাবিশ্ব ধারণার সাথে বিরোধপূর্ণ।প্রথমে এই উপসংহার তিনি মেনে নিতে পারেন নি। তাই এই বিরোধিতা নিরসনের জন্য তিনি একটি সৃষ্টিতাত্ত্বিক ধ্রুবক (কসমোলজিকাল কন্সট্যান্ট) প্রস্তাব করেন। এই ধ্রুবক গাণিতিকভাবে তার তত্ত্ব আসে না। অনেকটা জোড় করেই এই ধ্রুবকটিকে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের সাথে যুক্ত করা হয়। এর ফলে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের সাথে স্হির মহাবিশ্ব মডেলের বিরোধ মিটে যায়।
অবশ্য পরবর্তীতে যখন হাবলের তত্ত্ব স্বীকৃত হলো, আইনস্টাইন মেনে নিলেন যে তিনি ভুল করেছেন। মহাবিশ্ব আসলেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। তার নিজের তত্ত্বই বিগব্যাঙের পক্ষে যায়। তিনি যে সৃষ্টিতাত্ত্বিক ধ্রুবকের প্রস্তাবনা করেছিলেন, তা আসলে ভুল ছিলো।
মহাবিশ্বের বিকাশ ব্যাখ্যা করার জন্য বিগব্যাঙ তত্ত্বই একমাত্র নয়। আরো অনেকগুলো মডেল মহাবিশ্বের বিকাশ ব্যাখ্যা করে। তবে তাদের কোনটিই বিগব্যাঙ তত্ত্বের মতো জনপ্রিয় ও বহুলপ্রচারিত নয়। এরকম কয়েকটি মডেলের নাম শোনা যাক:
ক) স্টেডি স্টেট ইউনিভার্স। এই তত্ত্ব বলে যে মহাবিশ্বের ঘনত্ব অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতে একই রকম থাকে। সম্প্রসারণের সাথে সাথে ব সমানুপাতিক হারে মহাবিশ্ নতুন বস্তু তৈরি করে। এ কারণে মহাবিশ্বের ঘনত্বের কোন পরিবর্তন হয় না।
খ) বিগ বাউন্স তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব ধারাবাহিকভাবে সম্পসারিত হয়। তার পর একসময় সে সংকুচিত হওয়া শুরু করে। তারপর আবার সে সম্পসারিত হয়। আমাদের মহাবিশ্ব এইরকম সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে তৈরি হওয়া অনেকগুলো মহাবিশ্বের একটি।
গ) একপাইরোটিক তত্ত্ব বলে আরো একটি মডেল আছে। এই তত্ত্বটি বলে যে আমাদের মহাবিশ্ব চতুর্থ মাত্রায় দুইটি ত্রিমাত্রিক জগতের পারস্পারিক সংঘর্ষের ফলাফল! এই তত্ত্ব বিগব্যাঙের সাথে বিরোধপূর্ণ নয়। একটা সময় পর মহাবিশ্ব বিগব্যাঙ প্রদর্শিত পথে বিকশিত হয়।
পূর্বে বিজ্ঞানব্লগে প্রকাশিত
সামুতে অর্ধেক দিলাম।
তথ্যসূত্র
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:২২