somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যান্সারের জিন চেনার পথে এক ধাপ

০৬ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একেকটি জিনের কাজ একেক রকম। কোনো কোনো জিন মানুষের চোখের রং নির্ধারণ করে দেয়। কোনোটি ঠিক করে মানুষের চুল কেমন হবে, কোনোটি ঠিক করে মানুষের উচ্চতা। আবার কোনো কোনো জিন বর্ণান্ধতাসহ বিভিন্ন জটিল ব্যাধির জন্য দায়ী। কিছু কিছু জিন ক্যান্সারের জন্য দায়ী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি গবেষকদল এ রকম একটি জিন প্রস্তাব করেছেন। এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল ক্যান্সার ইনফরমেটিকসে। এ গবেষণায় তাঁর সঙ্গে আরো কাজ করেন রুহুল আমিন, জেসমিন এবং হাসান জামিল।



চিত্র ১. মেলানোমা পরিবার জিনের একটি প্রোটিন, চিত্র ২ : টেলোমারেজ এনজাইম যেভাবে কাজ করে। এ এনজাইম অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেলে হতে পারে ক্যান্সার।, চিত্র ৩ : মানুষ, শিম্পাঞ্জি আর ওরাং-ওটাং-এর জিন ২-এর মধ্যকার মিল

ক্যান্সারের জন্য দায়ী জিনের এই পরিবারটি হলো মেজ বা মেলানোমা এন্টিজেন পরিবার। এ জিনগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষের এঙ্ ক্রোমোজম, তিন ও পনেরো নম্বর ক্রোমোজমে পাওয়া যায়। ড. আনোয়ার হোসেন পাঁচ নম্বর ক্রোমোজমের একটি অংশে, বিশেষ এই জিন প্রস্তাব করেছেন, যা কি না ক্যান্সার তৈরি করতে পারে। তাঁরা এ গবেষণায় বায়োইনফরমেটিকসের যে পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, তা আধুনিকতম হলেও জটিল নয়। একনজরে দেখে নেওয়া যাক কিভাবে আবিষ্কৃত হলো এ জিনটি।

ধাপ : ১
বায়োইনফরমেটিকসের এ যুগে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডেটাবেইসে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডিএনএ অনুক্রম (ডিএনএ সিক্যুয়েন্স) জমা রাখা আছে। সেখান থেকে মানুষের পাঁচ নম্বর ক্রোমোজমের একটি অংশ নেওয়া হয় বিশ্লেষণের জন্য। এ জন্য এ নমুনা অংশটির ডিএনএর অনুক্রম নেওয়া হয়।

ধাপ : ২
ভাষার জন্য যেমন ব্যাকরণ আছে ঠিক তেমনই ডিএনএর মধ্যে জিন একটি বিশেষ নিয়মের মধ্যে পড়তে হয়। কোনো জিনের শুরুতে থাকে একটি ‘শুরু’ নির্দেশ। শেষে থাকে ‘শেষ’ নির্দেশ। এ দুই নির্দেশের মধ্যে থাকে জিনের মূল নির্দেশনাটি, যা অনুসরণ করে কোষ কোনো কিছু তৈরি করবে। ডিএনএর মধ্যে কোনো জিন খুঁজতে হলে এ বিশেষ জায়গাগুলো খুঁজে বের করতে হয়। এ জন্য ইন্টারনেটে অনেক প্রোগ্রাম আছে। এ রকম একটি হলো ঘঈইওর ঙজঋ ঋরহফবৎ। এটিসহ অন্যান্য প্রোগ্রাম ব্যবহার করে ক্রোমোজম পাঁচের ব্যবহৃত নমুনা অংশের মধ্যে নতুন দুটি জিন খুঁজে পাওয়া যায়। এদের নাম দেওয়া হয় জিন ২ ও জিন ৩।

ধাপ : ৩
জিন ২ ও জিন ৩ এর ডিএনএর মধ্যে এমন কিছু জায়গা দেখা গেল, যা অন্যান্য পরিচিত অনেক জিনেও দেখা যায়।

ধাপ : ৪
যেসব জিন বিবর্তনীয় দিক দিয়ে কাছাকাছি থাকে, তাদের জিনের মধ্যেও মিল থাকে। বিবর্তনীয় কারণে মানুষ, শিম্পাঞ্জি ও ওরাং-ওটাং অত্যন্ত কাছাকাছি। এই তিনটি প্রাণীর ক্রোমোজম পাঁচ পরীক্ষা করে দেখা গেল এদের জিন ২-এর মধ্যে পার্থক্য খুবই সামান্য।

ধাপ : ৫
জিন ২-এর কাজ আসলে কী তা খোঁজা শুরু হয় এ ধাপ থেকে। এ জন্য জিন ২-কে মেজ পরিবারের একটি জিন মেজ ই১ এর সঙ্গে তুলনা করে দেখা হয়। দেখা যায়, এ জিন দুটির মধ্যে মিল ৩৮ থেকে ৪১ শতাংশ। আপাতদৃষ্টিতে এ মিলটি কম মনে হলেও কোনো জিন পরিবারের সদস্যদের মধ্য অনেক সময় অনুক্রমীয় মিল ২০ শতাংশেরও কম হতে পারে।

ধাপ : ৬
জিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর মধ্যে কোনো বিশেষ অনুক্রম পুনরাবৃত্তি করতে পারে। একেক জিনের পুনরাবৃত্তির ধরন একেক রকম। জিন ২ এবং মেজ ই১ জিনের মধ্যে একই ধরনের পুনরাবৃত্তি খেয়াল করা যায়।

ধাপ : ৭
জিন থেকে তৈরি হয় প্রোটিন। প্রোটিন গঠনের অনেক ধাপ থাকে। যেসব প্রোটিন একই ধরনের কাজ করে তাদের গঠন একই বা কাছাকাছি ধরনের হয়ে থাকে। এ ধাপে জিন ২ এবং মেজ ই১ জিনের দ্বিমাত্রিক গঠন তুলনা করে উল্লেখযোগ্য মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ধাপ : ৮
এই সর্বশেষ ধাপে জিন দুটির বিভিন্ন জৈবিক, আণবিক ও কোষীয় বৈশিষ্ট্য তুলনা করা হয়। এ ধাপেও তাদের মধ্যে বিভিন্ন মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
বিভিন্ন পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে সংগতভাবেই অনুমান করা যায় যে জিন ২-টি মানুষের টেলোমারেজ উৎসেচকটিকে অনিয়ন্ত্রিত করে ক্যান্সারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ উৎসেচক অনিয়ন্ত্রিত হলে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি হয়ে ক্যান্সার হতে পারে। এ জিনটির সঙ্গে মেজ পরিবারের জিনের অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে সত্যি সত্যিই এ জিনটি ক্যান্সারে যুক্ত কি না তা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন আছে।
আমরা এমন একটি সময়ে বসবাস করছি যখন মানুষে সম্পূর্ণ ডিএনএতে কী লেখা আছে তা জানা হয়ে গেছে। এখন জীববিজ্ঞানীদের লক্ষ্য এ ডিএনএর পাঠোদ্ধার করা। মানুষের বেশ কিছু জিন আবিষ্কার হয়ে গেলেও এখনো এ কাজের বাকি অনেক। বায়োইনফরমেটিকস এ কাজের একটি প্রধান হাতিয়ার। বাংলাদেশে বায়োইনফরমেটিকস এখন শৈশব পার করছে। তবে আশার কথা, ইতিমধ্যে অনেক তরুণের মধ্যে আগ্রহ সঞ্চার করেছে বায়োইনফরমেটিকস। সম্প্র্রতি বাংলাদেশে পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ের মতো বড় কাজ হয়ে গেছে। পাশাপাশি ক্যান্সারের জিন আবিষ্কারের সম্ভাবনা একটি বড় মাইলফলক হয়ে থাকবে।

তথ্যসূত্র : ক্যান্সার ইনফরমেটিকসে প্রকাশিত গবেষণাপত্র
ড. আনোয়ার হোসেনের সাক্ষাতকার
কালের কন্ঠের সন্ধানীতে প্রকাশিত। ৫ জুলাই ২০১১।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×