ইচ্ছে ছিলো
ইচ্ছে ছিলো তোমাকে সম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো
ইচ্ছে ছিলো তোমাকেই সুখের পতাকা করে
শান্তির কপোত করে হৃদয়ে উড়াবো।
ইচ্ছে ছিলো সুনিপূণ মেকআপ-ম্যানের মতো
সূর্যালোকে কেবল সাজাবো তিমিরের সারাবেলা
পৌরুষের প্রেম দিয়ে তোমাকে বাজাবো, আহা তুমুল বাজাবো।
ইচ্ছে ছিলো নদীর বক্ষ থেকে জলে জলে শব্দ তুলে
রাখবো তোমার লাজুক চঞ্চুতে,
জন্মাবধি আমার শীতল চোখ
তাপ নেবে তোমার দু’চোখে।
ইচ্ছে ছিল রাজা হবো
তোমাকে সাম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো,
আজ দেখি রাজ্য আছে
রাজা আছে
ইচ্ছে আছে,
শুধু তুমি অন্য ঘরে।
ব্যবধান
অতো বেশ নিকটে এসো না, তুমি পুড়ে যাবে,
কিছুটা আড়াল কিছু ব্যবধান থাকা খুব ভালো।
বিদ্যুত সুপারিবাহী দু’টি তার
বিজ্ঞানসম্মত ভাবে যতোটুকু দূরে থাকে
তুমি ঠিক ততোখানি নিরাপদ কাছাকাছি থেকো,
সমূহ বিপদ হবে এর বেশী নিকটে এসো না।
মানুষ গিয়েছে ভূলে কী কী তার মৌল উপাদান।
তাদের ভেতরে আজ বৃক্ষের মতন সেই সহনশীলতা নেই,
ধ্রুপদী স্নিগ্ধতা নেই, নদীর মৌনতা নিয়ে মুগ্ধ মানুষ
কল্যাণের দিকে আর প্রবাহিত হয় না এখন।
আজকাল অধঃপতনের দিকে সুপারসনিক গতি মানুষের
সঙ্গত সীমানা ছেড়ে অদ্ভুত নগরে যেন হিজরতের প্রতিযোগিতা।
তবু তুমি কাছে যেতে চাও? কার কাছে যাবে?
পশু-পাখিদের কিছু নিতে তুমুল উল্লাসে যেন
বসবাস করে আজ কুলীন মানুষ।
পরানের পাখি
পরানের পাখি তুমি একবার সেই কথা কও,
আমার সূর্যের কথা, কাঙ্খিত দিনের কথা,
সুশোভন স্বপ্নের কথাটা বলো,–শুনুক মানুষ।
পরানের পাখি তুমি একবার সেই কথা কও,
অলক্ষ্যে কবে থেকে কোমল পাহাড়ে বসে
এতোদিন খুঁটে খুঁটে খেয়েছো আমাকে আর
কতো কোটি দিয়েছো ঠোকর,
বিষে বিষে নীল হয়ে গেছি, শুশ্রূষায়
এখনো কী ভাবে তবু শুভ্রতা পুষেছি তুমি দেখাও না
পাখি তুমি তোমাকে দেখাও,–দেখুক মানুষ।
পরানের পাখি তুমি একবার সেই কথা কও,
সময় পাবে না বেশি চতুর্দিক বড়ো টলোমলো
পরানের পাখি তুমি শেষবার শেষ কথা বলো,
আমার ভেতরে থেকে আমার জীবন খেয়ে কতোটুকু
যোগ্য হয়েছো, ভূ-ভাগ কাঁপিয়ে বেসামাল
কবে পাখি দেবেই উড়াল, দাও,–শিখুক মানুষ।
অনির্ণীত নারী
নারী কি নদীর মতো
নারী কি পুতুল,
নারী কি নীড়ের নাম
টবে ভুল ফুল।
নারী কি বৃক্ষ কোনো
না কোমল শিলা,
নারী কি চৈত্রের চিতা
নিমীলিত নীলা।
আমার কী এসে যাবে
আমি কি নিজেই কোন দূর দ্বীপবাসী এক আলাদা মানুষ?
নাকি বাধ্যতামূলক আজ আমার প্রস্থান,
তবে কি বিজয়ী হবে সভ্যতার অশ্লীল স্লোগান?
আমি তো গিয়েছি জেনে প্রণয়ের দারুণ আকালে
নীল নীল বনভূমি ভেতরে জন্মালে
কেউ কেউ চলে যায়, চলে যেতে হয়
অবলীলাক্রমে কেউ বেছে নেয় পৃথক প্লাবন,
কেউ কেউ এইভাবে চলে যায় বুকে নিয়ে ব্যাকুল আগুন।
আমার কী এসে যাবে, কিছু মৌল ব্যবধান ভালোবেসে
জীবন উড়ালে একা প্রিয়তম দ্বীপের উদ্দেশ্যে।
নষ্ট লগ্ন গেলে তুমিই তো দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে
সুকঠিন কংক্রিটে জীবনের বাকি পথ হেঁটে যেতে যেতে
বারবার থেমে যাবে জানি
‘আমি’ ভেবে একে-তাকে দেখে।
তুমিই তো অসময়ে অন্ধকারে
অন্তরের আরতির ঘৃতের আগুনে পুড়বে নির্জনে।
আমাকে পাবে না খুঁজে, কেঁদে-কেটে, মামুলী ফাল্গুনে।
]
যেভাবে সে এলো
অসম্ভব ক্ষুধা ও তৃষ্ণা ছিলো,
সামনে যা পেলো খেলো,
যেন মন্বন্তরে কেটে যাওয়া রজতজয়ন্তী শেষে
এসেছে সে, সবকিছু উপাদেয় মুখে।
গাভিন ক্ষেতের সব ঘ্রাণ টেনে নিলো,
করুণ কার্নিশ ঘেঁষে বেড়ে ওঠা লকলকে লতাটিও খেলো,
দুধাল গাভীটি খেলো
খেলো সব জলের কলস।
শানে বাধা ঘাট খেলো
সবুজের বনভূমি খেলো
উদাস আকাশ খেলো
কবিতার পান্ডুলিপি খেলো।
দু’পায়া পথের বুক, বিদ্যালয়
উপাসনালয় আর কারখানার চিমনি খেলো
মতিঝিলে স্টেটব্যাংক খেলো।
রাখালের অনুপম বাঁশিটিকে খেলো,
মগড়ার তীরে বসে চাল ধোয়া হাতটিকে খেলো
স্বাধীনতা সব খেলো, মানুষের দুঃখ খেলো না।
ইদানিং জীবন যাপন
আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই আছেন,
প্রাত্যহিক সব কাজ ঠিক-ঠাক করে চলেছেন
খাচ্ছেন-দাচ্ছেন, অফিসে যাচ্ছেন,
প্রেসক্লাবে আড্ডাও দিচ্ছেন।
মাঝে মাঝে কষ্টেরা আমার
সারাটা বিকেল বসে দেখেন মৌসুমী খেলা,
গোল স্টেডিয়াম যেন হয়ে যায় নিজেই কবিতা।
আজকাল আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই থাকেন,
অঙ্কুরোদ্গম প্রিয় এলোমেলো যুবকের
অতৃপ্ত মানুষের শুশ্রূষা করেন। বিরোধী দলের ভুল
মিছিলের শোভা দেখে হাসেন তুমুল,
ক্লান্তিতে গভীর রাতে ঘরহীন ঘরেও ফেরেন,
নির্জন নগরে তারা কতিপয় নাগরিক যেন
কতো কথোপকথনে কাটান বাকিটা রাত,
অবশেষে কিশোরীর বুকের মতন সাদা ভোরবেলা
অধিক ক্লান্তিতে সব ঘুমিয়ে পড়েন।
আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই আছেন, মোটামুটি সুখেই আছেন।
প্রিয় দেশবাসী;
আপনারা কেমন আছেন?
তুমি ডাক দিলে
একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতোটা কাঙাল,
কতো হুলুস্থূল অনটন আজম্ন ভেতরে আমার।
তুমি ডাক দিলে
নষ্ঠ কষ্ঠ সব নিমিষেই ঝেড়ে মুছে
শব্দের অধিক দ্রুত গতিতে পৌছুবো
পরিণত প্রণয়ের উৎসমূল ছোঁব
পথে এতোটুকু দেরিও করবো না।
তুমি ডাক দিলে
সীমাহীন খাঁ খাঁ নিয়ে মরোদ্যান হবো,
তুমি রাজি হলে
যুগল আহলাদে এক মনোরম আশ্রম বানাবো।
একবার আমন্রণ পেলে
সব কিছু ফেলে
তোমার উদ্দেশে দেবো উজাড় উড়াল,
অভয়ারণ্য হবে কথা দিলে
লোকালয়ে থাকবো না আর
আমরণ পাখি হয়ে যাবো, -খাবো মৌনতা তোমার
তোমাকেই চাই
আমি এখন অন্য মানুষ ভিন্ন ভাবে কথা বলি
কথার ভেতর অকথিত অনেক কথা জড়িয়ে ফেলি
এবং চলি পথ বেপথে যখন তখন।
আমি এখন ভিন্ন মানুষ অন্যভাবে কথা বলি
কথার ভেতর অনেক কথা লুকিয়ে ফেলি,
কথার সাথে আমার এখন তুমুল খেলা
উপযুক্ত সংযোজনে জীর্ণ-শীর্ণ শব্দমালা
ব্যঞ্জনা পায় আমার হাতে অবলীলায়,
ঠিক জানি না পারস্পরিক খেলাধূলায়
কখন কে যে কাকে খেলায়।
অপুষ্টিতে নষ্ট প্রাচীন প্রেমের কথা যত্রতত্র কীর্তন আমার
মাঝে মধ্যে প্রণয় বিহীন সভ্যতাকে কচি প্রেমের পত্র লিখি
যেমন লেখে বয়ঃসন্ধি-কালের মানুষ নিশীথ জেগে।
আমি এখন অন্য মানুষ ভিন্নভাবে চোখ তুলে চাই
খুব আলাদা ভাবে তাকাই
জন্মাবধি জলের যুগল কলস দেখাই,
ভেতরে এক তৃতীয় চোখ রঞ্জনালোয় কর্মরত
সব কিছু সে সঠিকভাবে সবটা দেখে এবং দারুণ প্রণয় কাতর।
আমি এখন আমার ভেতর অন্য মানুষ গঠন করে সংগঠিত,
বীর্যবান এক ভিন্ন গোলাপ এখন কসম খুব প্রয়োজন।
বাম হাত তোমাকে দিলাম
এই নাও বাম হাত তোমাকে দিলাম।
একটু আদর করে রেখো, চৈত্রে বোশেখে
খরা আর ঝড়ের রাত্রিতে মমতায় সেবা ওশুশ্রূষা দিয়ে
বুকে রেখো, ঢেকে রেখো, দুর্দিনে যত্ন নিও
সুখী হবে তোমার সন্তান।
এই নাও বাম হাত তোমাকে দিলাম।
ও বড়ো কষ্টের হাত, দেখো দেখো অনাদরে কী রকম
শীর্ণ হয়েছে, ভুল আদরের ক্ষত সারা গায়ে
লেপ্টে রয়েছে, পোড়া কপালের হাত
মাটির মমতা চেয়ে
সম্পদের সুষম বন্টন চেয়ে
মানুষের ত্রাণ চেয়ে
জন্মাবধি কপাল পুড়েছে,
ওকে আর আহত করো না, কষ্ট দিও না
ওর সুখে সুখী হবে তোমার সন্তান।
কিছুই পারিনি দিতে, এই নাও বাম হাত তোমাকে দিলাম।
অমিমাংসিত সন্ধি
তোমাকে শুধু তোমাকে চাই, পাবো?
পাই বা না পাই এক জীবনে তোমার কাছেই যাবো।
ইচ্ছে হলে দেখতে দিও, দেখো
হাত বাড়িয়ে হাত চেয়েছি রাখতে দিও, রেখো
অপূণতায় নষ্টে-কষ্টে গেলো
এতোটা কাল, আজকে যদি মাতাল জোয়ার এলো
এসো দু’জন প্লাবিত হই প্রেমে
নিরাভরণ সখ্য হবে যুগল-স্নানে নেমে।
থাকবো ব্যাকুল শর্তবিহীন নত
পরস্পরের বুকের কাছে মুগ্ধ অভিভূত।