somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুশাসির প্রথম র‌্যাগ খাওয়া এবং একটি অদ্ভুত প্রেমের গল্প ;)

০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভার্সিটির লাইফের শুরুতে আমিও র‌্যাগ খেয়েছিলাম। সেইদিনের ঘটনা এখনো স্পষ্ট মনে আছে :| আমাদের ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্টদের জন্য ক্যাফেটেরিয়া ছিলো অঘোষিত নিষিদ্ধ যায়গা। বেশির ভাগ ঘটনা এই ক্যাফেটেরিয়াতেই ঘটতো। তাই পারতপক্ষে আমরা শুরুর কয়েকটা মাস ক্যাফেটেরিয়া এভয়েড করে চলতাম।

একদিন ক্লাশ শেষে হলে ফিরছি।ক্লাসমেট বান্ধবী ডাক দিলো। তিনি হলের খাবার খান না। ক্যাফেটেরিয়ায় লাঞ্চ করেন। কিন্তু আজ সবাই তাকে ফেলে রুমে চলে গেছে /:) একা একা তিনি সেখানে যাওয়ার সাহস করে উঠতে পারছেন না।তাই আমাকে সাথে চান। অনুরোধের ঢেকি গিলে আমি অবলা নারীর আবেদনে সাড়া দিলাম B-) এবং ভুল করলাম :((

কোনার একটা টেবিলে বসে দুইজন নিঃশ্বব্দে লাঞ্চ করছি :) মুরগীর একটা ঠ্যাং এ মাত্র কামড় বসিয়েছি, অমনি ওয়েটার মামা কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,

‘খাওয়া শেষে আপনাকে দুই নাম্বার টেবিলের বড় ভাইরা ডাকছে ’

মুরগীর ঠ্যাং তখনও হাতে ধরা, দুই নাম্বার টেবিলের দিকে তাকালাম। পাঁচজন সিনিয়র শীতল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে X(

াক!

খাওয়া শেষ করে বান্ধবীর কাছে দোয়া নিয়ে সিনিয়রদের টেবিলের সামনে গেলাম। আমি জানি বেশিরভাগ র‌্যাগের ঘটনা ঘটে প্রথম দর্শনে সিনিয়রকে সালাম না দেওয়ায় কারনে। বড় করে সবাইকে সালাম দিলাম গলায় স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত বিনয় ভাব এনে বললাম,
‘আমাকে ডেকেছেন ভাই?’
‘এইতো আমাদের নায়ক এসে গেছে, কি নাম তোর?’

আমি নাম বললাম।এরপর তারা একে একে আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রতিটা পয়েন্টের পরিচয় নিলো।
এরপর তাদের নিজেদের পরিচয় দিলো।আমি শোনামাত্র সবার নাম ভুলে গেলাম।ভয়ে কাঁপছি :(( সবচেয়ে খারাপ ঘটনাটাই ঘটলো!

একজন প্রশ্ন করলো,

‘এখন বলতো কার নাম কি?’

নাম মনে করার চেষ্টা করছি আর ঘামছি। আপ্রান চেষ্টায় আমি শুধু একজনের নামই বলতে পারলাম /:)

ফলাফল হলো ভয়াবহ।আমাকে ব্যাগ থেকে খাতা বের করতে বলা হলো।তাতে প্রত্যেকের নাম দশবার করে লিখতে বলা হলো।লেখার পর একজনের আবার আমার লেখা পছন্দ হলো না! তার নাম সুন্দর করে আরও দশবার লেখা লাগলো !

অবশেষে তারা টু দ্য পয়েন্টে এলো।
‘এই মেয়ে তোর কি হয়?’
এমনিতেই এক বার শাস্তি খাইছি। আর রিক্স নিলাম না।
বললাম,
‘বোন হয়’
‘নিজের বোন?’
‘চাচাতো বোন হয় ভাই’
‘নিজের চাচাতো বোন?’
‘এলাকার চাচাতো বোন, বোনের মতোই দেখি, তাই তো ভাত খেতে নিয়ে আসছি’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। কাল দুপুরে সেলিম হল ২১২ নাম্বার রুমে দেখা করবি, যা এখন।’

মুক্তি পেয়ে হলে ফিরেই বান্ধবীকে ফোন দিলাম। বান্ধবীর জেলা,থানা, গ্রাম, বাবা,মা,দাদা সবার নাম জিজ্ঞেস করলাম। প্রতিটা মুখস্ত করে পরদিন সেলিম হল ২১২ নাম্বার রুমে গিয়েছিলাম। তবে সেই ভাই এসব কিছুই জিজ্ঞেস করেন নি তিনি শুধু বান্ধবীর ব্যাক্তিগত ব্যাপারেই আগ্রহ দেখালেন।

‘প্রেম করে কিনা?’ ‘বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা’ ‘ভার্সিটির কোনো ছেলে তার পেছনে লাগছে কিনা’ এইসব।বললাম,

‘মেয়ে জেনুইন সিঙ্গেল ভাইয়া :D
‘তাই নাকি?তুই দেখে দেখে রাখবি কেউ যেনো পেছনে না ঘোরে’
‘অবশ্যই ভাইয়া ’
‘কাউকে দেখলেই আমাকে বলবি, আমি নিজের হাতে তার ঠ্যাং ভাঙ্গবো’
‘অফকোর্স ভাইয়া :D

এরপর ভাই হলের ক্যান্টিনে নিয়ে গেলো।ভার্সিটি লাইফে বড় ভাইদের কাছে বিনা পয়সায় খাওয়া হাজারটা স্লাইসের প্রথমটা সেদিন খেলাম :P

এই ভাইয়ের সাথে দুইদিন কথা বলে বুঝে গেলাম মুখে যত বড়াই-ই করুক না কোনো, কোনো মেয়েকে গিয়ে প্রপোজ করার সাহস তার নাই। আমি এই সুযোগটাই নিলাম ;)

‘ভাই মেয়েকে ইঙ্গিত দেয়া আছে, শুধু নিজ থেকে গিয়ে একবার বলে দিতে পারলেই কাজ হয়ে যাবে ’

বড় ভাই মেয়ের পেছনে ঘোরে B-)
মেয়ের পেছনে ঘোরা ছেলেদের শায়েস্তা করে X(
শুধু মেয়েকে প্রপোজ করার সাহসটাই সঞ্চয় করতে পারে না /:)

তবে মাঝখান দিয়ে চাপা মেরে মেয়ের পটে যাওয়ার বিভিন্ন নিউজ বানিয়েই চলেছি ;) আর বিনাপয়সায় স্লাইসের পর স্লাইস খেয়েই চলেছি :P

সুখেই ছিলাম সবাই। মাঝখানে বান্ধবী একটা ঝামেলা বাধিয়ে ফেললো X(( সে অন্য এক ভার্সিটির ছেলের সাথে রিলেশনশীপে জড়িয়ে গেলো। এই খবর গোটা ভার্সিটিতে ছড়িয়েও পড়লো। এই নিউজের আঁচও আমি বড় ভাইকে দেই নি।বড় ভাইয়ের সামনে মুখ দেখানোর অবস্থায় থাকলাম না।বিনা পয়সায় স্লাইস বন্ধ হওয়ার শোকে আমি কাতর :((

টানা দশদিন পালিয়ে বেড়ালাম বড় ভাই থেকে :| তার ফোনও ধরার সাহস করলাম না! কিন্তু একদিন ধরা পড়েই গেলাম। সেই ক্যাফেটেরিয়াতেই /:)

‘ভাই আমি লজ্জিত, এই মেয়ে যে এমন একটা কান্ড ঘটায় ফেলবে ভাবতেও পারি নাই’
‘আরে বেটা লজ্জার কি আছে। যা গেছে তা গেছে। তুই বোস’
‘জি ভাই, তাছাড়া মেয়েটা আপনার জন্য পার্ফেক্ট ছিলো না :-/

ভাই আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো-

‘তোদের ডিপার্টমেন্টে নতুন সিরিজ আসছে না?লম্বা করে ফর্সা একটা মেয়ে আছে। এই মেয়েটাকে মনে ধরছে :D এর ব্যাপারে সব ইনফরমেশন চাই।নে স্লাইস খা!’

আমি হতবাক :-* প্রেমিকা হারানোর বিন্দুমাত্র শোক বড় ভাইয়ের মাঝে নাই।

আবার তিনি তার পুরোনো সার্কেলে ফিরে গেছেন।

তিনি এই নতুন মেয়েটার পেছনেও ঘুরবেন B-)
মেয়ের পেছনে ঘোরা প্রতিটা ছেলেকে শায়েস্তাও করবেন X(
কিন্তু সেই মেয়েকে প্রপোজ করার সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারবেন না :|

কিছু কিছু মানুষের ভালোবাসার প্রকৃয়া বড়ই অদ্ভুত।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:১১
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×