আমাদের রিসার্চ ভবনের লাগোয়া ভবনে ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল। প্রায় বিকেলে, হাসপাতালের প্রথম তলায় কনভেনী স্টোরে (এ ধরনের দোকান গুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে) কফি/ হালকা নাস্তা খাওয়ার জন্য যাই। হাসপাতালে ঢুকার মুখেই অভিজাত হোটেলের মতো করে সাজানো হাসপাতালের লবি। এখানে রোগী , রোগীর আত্মীয় স্বজনরা বসে আলাপচারিতা করে, খাওয়া দাওয়া করে। লবিতে দেখলাম, এক তরুণী এক তরুণের হাত ধরে কান্না করছে। কাজ পাগল জাপানীরা যত সমস্যাই থাকুক, নিজেদের আবেগ সহজেই প্রকাশ করে না। আবেগের এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ দেখে আমার কেন জানি ভাল লাগল। কনভেনী স্টোরে ঢুকে কফি আর হালকা নাস্তা কিনে ,বসার নির্দিষ্ট ছোট স্থানটাতে গিয়ে দেখি আর কেউ নেই। ফোনে ফেসবুকিং করতে করতে হালকা তালে কফি খাচ্ছিলাম ,হঠাৎ করেই রোগীদের পোশাক পরা এক বৃদ্ধা এসে আমার পাশের টেবিলে বসলেন। কিছুক্ষন পর, হেসে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে কথা বলতে বলার অনুমতি চেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, দেশ কোথায়। নিজের পরচিয় দিলেন , জাপানিজ ইলিমেন্টারি স্কুলের ইংরেজী টিচার ছিলেন। আমাকে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করলেন ,বিয়ে করেছি কিনা ,বউ কোথায় থাকে ,বললাম নতুন বিয়ে করে এসেছি ,বউ বাংলাদেশে এখন,হাসতে হাসতে আপসোস করে বললেন, “সাবিশী” (জাপানিজ সাবিশী শব্দের বাংলা অর্থ নিঃসঙ্গ )। এরপর আমিও তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম ,বললেন স্বামী মারা গেছে প্রায় সাত বছর হলো ৷ পাশের শহরে একা থাকেন। মাসখানেক হলো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দুই ছেলে তার ,বড়ছেলে ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুর থাকেন ।আরেক ছেলে জাপানে কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ছেলেদের কথা বলার সময় মহিলার মুখ গর্বে উজ্জল হয়ে উঠল। জিজ্ঞাসা করলাম ছেলেদের সাথে যোগাযোগ হয় কিভাবে ,বললেন বড় ছেলের সাথে অনেক দিন যোগাযোগ নেই। সেই খুব ব্যাস্ত থাকে। ছোট ছেলে মাস কয়েক আগে ফোন করছিল একবার। হঠাৎ করে মনের ভুলে ,মুখ ফসকে আমি হেসে উঠে বলে ফেললাম, “সাবিশী”। সাথে সাথে মহিলার চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। কেমন জানি আনমনা হয়ে গেলেন। হঠাৎ বিড়বিড় করতে করতে উঠে হাঁটতে শুরু করলেন। আমার মনে হচ্ছিল বিড়বিড় করে বলছিলেন, সাবিশী ,সাবিশী ......নিঃসঙ্গ, নিঃসঙ্গ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:১২