somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যারে দেখতে নারি (২)

১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[উৎসর্গঃ আমার বিবাহিতা বন্ধুদের, যাদের টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতা থেকে লেখাটা সাজানো]

তোমার হাতের লিখা ভালো না, পড়া যায় না।
বাজারের লিস্ট হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে নিতে শ্বাশুরিরকমেন্ট। আরে, বাজারের লিস্ট কি পরীক্ষার খাতা যে সেখানে মুক্তাক্ষরে লিখতে হবে! আর হাতের লিখাটা সুন্দরই ছিলো, অসুন্দর না।
ধরলাম হাতের লিখা খারাপ; তো?

সেই জন্য কি আপনি বাজারের লিস্ট কেড়ে নিবেন? আপনাকে যদি প্রশ্ন করি, কোথা থেকে শিখেছেন এই অভদ্রতা? তখন তো আবার এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে, আমার পরিবার থেকে কিছু শেখানো হয়নি, আমার আস্পর্ধা মহাসড়কের মত বড় এবং চওড়া, আমি কত বড় বেয়াদব এইসব শুনতে হবে। আমি কিন্তু ভুলেও আপনাকে প্রশ্ন করতে পারবো না, “আপনি পরিবারে কি শিখেছেন যে একজন মানুষ হিসেবে অন্য একজন মানুষকে কিভাবে শ্রদ্ধা করে কথা বলতে হয় সেটা জানেন না!”

আপনি ভাববেন না যে, আমি আপনাকে এই কথাগুলো বলবো। কেন জানেন, কারণ সেটা আমার নীতির পরিপন্থি। আমি আপনাকে একজন পারসন হিসেবে দেখতে এবং শ্রদ্ধা করতে চাই। ভালো বাসতেও চাই। এই চাওয়াটা আমার দুর্বলতা, বলতে পারেন বিনয়ী হওয়া; কিন্তু আপনি সেটার মর্যাদা বুঝবেন না, বুঝতে চাইবেনও না। সেই উপলব্ধিটা আপনি আপনার ছেলেকে যখন ছোট থেকে আস্কারা দিয়ে বড় করেছেন, যখন এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ আপনাকে পুত্রসন্তান জন্মদানের জন্য বাহবা দিয়ে ক্ষমতাবান করেছে, সেই প্রক্রিয়ার মাঝেই আপনি হারিয়ে ফেলেছেন। আমার মা যখন আপনার সাথে কথা বলে, তখন আপনি আশা করেন, আমার মা আপনাকে সমীহ করে কথা বলবে, আর আপনি? আপনি মন চাইলে ভালো ভালো কথা বলবেন, আর মন চাইলে মাটিতে নামিয়ে রাখবেন। আপনি গোপনে লালন করেন, আমার মা যেন আপনার কাছে ভিক্ষা চায়, যেন মাথা নিচু করে থাকে, যেন আমার দুর্বলতাগুলো ধারন করে কথা বলে, যদিও আমি প্রচন্ড শক্তিশালী বা আপনার ছেলের চাইতেও যোগ্যতর হই।

আপনি কিন্তু কখনোই ইস্তফা দিবেন না, আমি যতই শুদ্ধ হই না কেন, আপনার চোখে ভুল ধরা পরবেই। কেননা আমি যে “দেখতে নারি”। যদি কিছুই না বের করতে পারেন তাহলে আমার চোখ কেন পটলচেড়া না হয়ে আলুচেড়া হলো, কিংবা আমি হাঁটার সময় আমার বা পায়ের পাতা একটু বাঁকা হয় এইসব নিয়ে গবেষণা পত্র পাঠ করবেন। বাদ দিবেন না আমার ভাই বা বোনের প্রাক্তন প্রেমের কথা, বা সামান্য কোন ভুল ত্রুটি।

আমি জানি, এইসব না করলে আপনার সময় কাটে না। কিন্তু আমার যে অনেক কাজ! ভোরে উঠে “আপনাদের” (আমার জন্যও করি, কিন্তু বিষয় হচ্ছে আপনাদের আচরনে আমি ভুলেই যাই এই বাড়িটা আমারও) জন্য নাস্তা তৈরী করা, কোন রকমে বাচ্চাকে তুলে তৈরী করে স্কুলে পাঠানো, কিংবা আপনার ছেলেকে তৈরী হতে সাহায্য করা, আর সকালবেলা আপনার দুকাপ চা ছাড়া তো চলতেই চায় না, আবার যেহেতু আপনারা মডার্ন এবং শিক্ষিত আপনাদের ঠাট বাট বজায় রাখতে ভালো প্রতিষ্ঠানে উচ্চবেতনে চাকুরী করা বউ চাই, সেহেতু আমাকেও ছুটতে হয় সেই সকালেই। অফিসে কিন্তু কাউকেই বসায় রেখে বেতন দেয় না, আপনার ছেলে যতটুকু কাজ করে, আমি মেয়ে হিসেবে আমার যোগ্যতা প্রমান করতে তার চেয়েও বেশি কাজ করি। আবার বাসায় ফিরে এসে আমি কত ভালো বউ সেটা প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগি।

আমার বাচ্চারা জিতলেই যেহেতু আমিও জিতে যাই, সেহেতু ওরা কিভাবে জিতবে সেই রাস্তাটা আমাকেই খুজে বের করতে হয়। যদি জিতে যায় তাহলে নাতি/নাতনি আপনার বা বাচ্চা আপনার ছেলের, আর যদি হেরে যায় তাহলে ওরা আমার। আমার কিন্তু বাচ্চার উপরেও দখল নেই, আমি ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে ডিভোর্স চাইলেও আপনারা ওকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবেন।

তো? ভাবছেন আমি ফুরিয়ে গেছি? মোটেও না! আমি ফুরিয়ে যাই নি, সেই জন্যেই এখন আর আমি কত ভালো মেয়ে, আমি কত ভালো বউ, আমি কত ভালো মা এসবের পরীক্ষা আমি দেব না। আমি দেবীও না অসুরও না। আপনার চা আপনি বানিয়ে খাবেন আপনার এখনো বয়স ফুরিয়ে যায় নি, আপনার ছেলে নিজেই তৈরী হবে, সে নুলা কানা বা খোড়া না; বাচ্চাদের আমি দেখাশুনা করবো বটে, সেটা আপনার ছেলের সাথে ভাগাভাগি করেই; সিদ্ধান্ত হলে দু জনেরই হবে শুধুই আমার বা আপনার ছেলের না; আমার মা বাবার সাথে যথাযোগ্য মর্যাদায় কথা বলবেন-তাদের মেয়ের জন্ম না হলে পৃথিবীর বংশবৃদ্ধি হতো না।

যারে দেখতে নারি, তার চলন আপনি বাঁকা দেখতে পারেন, কিন্তু সেইটা আপনার চোখে সোজা করার জন্য সে মেরুদন্ড বাঁকা করে হাঁটবে সেটা ভাবলে ভুল করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:২৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×