somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“নাই নাই ভাব”

০৩ রা জুন, ২০১৭ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের একজন আমেরিকা প্রবাসী নিকটাত্মীয় গল্পচ্ছলে বলেছিলেন, বাংলাদেশে সব কিছুতে কেমন যেন একটা নাই নাই ভাব। সবার এত আছে তবু কি যেন নাই নাই করে। আমার শ্বাশুড়ি মাও বলেন, মা তোমার এত আছে ( উনার ছেলের অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক ব্যালেন্স ইত্যাদি বলতে বলতে) তবু তুমি কেন বলো অমুক তমুক !!! আমার নিজের মা আমাকে বলেন, তোর লাইফতো সেটলড, তবু এত ব্যস্ত হয়ে থাকিস ক্যান? আস্তে ধীরে চল বাবা এত নাই নাই করিস না। আমি প্রতিবার আশেপাশের মানুষের কথা শুনি, শুনে হাসি। প্রতিবার আমার সেই আত্মীয়ের কথাটা মনে হয়, কী যেন নাই নাই ভাব। আমি জানি, জীবনে চলার জন্য আমার আশে পাশের মানুষকে ভরিয়ে রাখার মত সামর্থ সৃষ্টিকর্তা আমাকে দিয়েছে্‌ সেজন্য আমি অবশ্যই কৃতজ্ঞ। কিন্তু সেটাই কি সব? সেদিনও তারাবীহ পড়তে কমিউনিটি রুমে গিয়েছি, দুই ভাবী গল্প করে করে হুজুরের আসার অপেক্ষা করছেন। আমি তসবীহ হাতে নিয়ে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টায় বিফল হচ্ছি উনাদের গল্পে। একজন একটু ঠেলা দিয়ে বলা শুরু করলো- উনার তো কোন চিন্তা নাই, আহ উনার মতো হলে ইবাদাত করেও শান্তি। ঠিক সেদিন আমি সেই আত্মীয়ের কথার একটা অর্থ বুঝতে পারলাম। আমাদের এই নাই নাই টা “অন্যের মতো” নাই, সেই জন্যেই আমরা নিজের যা আছে তা নিয়ে তৃপ্তি পেলাম না কখনোই।

আজকে এক বন্ধু আমাকে তার মতে আমাদের ব্যাচের সাকসেস্ফুল একজন বানিয়ে দিলো আমার মতামত না জেনেই ( আদৌ কিছু কোনদিন জানতো কিনা সেটা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে)। বিষয় হচ্ছে, আমি যা অর্জন করতে চেয়েছি সেটার ছিঁটেফোটাও এখনো অর্জন করতে পারি নি। তবে তার স্টাটাস অত্যন্ত সাধু মনোভাব থেকে লিখা সে ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত। তবু কিছু কথা না বলে পারছি না।

আমরা বাঙ্গালিরা অনেক বেশি জাজমেন্টাল। মাছের গাছে উঠতে পারার সক্ষমতা/ অক্ষমতা দিয়ে আমরা যোগ্যতা নিরুপন করি। করে শান্তি পাই। আমি যখন সাইন্স গ্রুপ বিদায় দিয়ে শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো বলে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজে ভর্তি হলাম, সেবার আমার ফুপাতো বোন কোথাও চান্স না পেয়ে বাসায় বসে কান্না কাটি শুরু করলো। আমি ওকে বললাম তুই তো আমি যেটা চেয়েছিলাম সেটা চাস নি, কাঁদছিস কেন? তুই মন দিয়ে পড় পরের বার কোথাও না কোথাও হয়ে যাবে। আমার বোন পরের বার জা বি তে কম্পিউটার সাইন্স এ চান্স পেয়েছিলো। এবং প্রথম ফোনটা আমাকে দিয়ে বলেছিলো, তুই সেদিন ওভাবে না বুঝালে আমি আজকে চান্স পেতাম না। এখন আমাদের অন্যান্য আত্মীয় স্বজন কে বেশি ভালো ছাত্রী সেটা নিয়ে গবেষণা করে অস্থির অবস্থা। সবাই রায় দিলো যেহেতু সে সাইন্স এ চান্স পেয়েছে সেহেতু সে ভালো ছাত্রী। এর কয়েক বছর পর আমার বোন কোন রকম টেনে টুনে অনার্স কমপ্লিট করছে আর আমি পেয়েছিলাম আমার ফ্যাকাল্টির সর্বোচ্চ সি জি পি এ। এখন আবার রায় তারা আমাকে দিয়েদিলো। এইগুলা যে কতটা হাস্যকর এবং মর্মান্তিক সেটা আমরা বুঝি না, বোঝার চেষ্টাও করি না। কমলাকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিলো নাকি বসন্তের ফুল, সেটা না বুঝেই আমরা বিচার করি একজনের সাফল্য। সেজন্য এদেশে একজনও আইন্সটাইন নেই, নেই ফুকো, নেই বোভোয়া আর একজন মিলেভা তৈরী হওয়ার আগেই আমরা নষ্ট করে ফেলি। একটাতেই আমরা এক্সপার্ট সেটা হচ্ছে “নেই নেই ভাব” প্রদর্শনীতে।

এই আমিও কতবার অন্যের চোখে নিজেকে সাকসেসফুল দেখতে চেয়েছি সেটার ইয়াত্তা নেই। শেষবার আমার বর একটা রাম ধমক দিয়ে বলেছিলো- দিন শেষ মিথ্যে সাকসেস নিয়ে তুমি করবাটা কি? নিজেকে অন্যের চোখে দেখা আমি বাদ দিয়েছি, দেয়ার দুঃসাহস পেয়েছি একজন ভালো মানুষের কল্যাণে। যে বন্ধুটির সরকারী চাকুরে হওয়ার কোন বাসনাই কোনদিন ছিলোনা, সে দিন শেষে বি সি এস ক্যাডার হয়নি বলে তাকে আনসাকসেস্ফুল বানাতে আমরাই পারি। আবার যার ধ্যান জ্ঞান একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যেখানে ছোট্ট ছোট্ট ফুলের মতো ছেলেমেয়েরা পড়বে অ- অ তে অজগর, আ- আ তে আমরা সবাই ফুলপরি; সেই মানুষটার অক্লান্ত পরিশ্রমকে নাকচ করে দিয়ে বলি- উহ হইছে প্রাইমারির মাস্টর আইছে। আমরাই বোধহয় একমাত্র জাতি যারা অন্যকে টেনে নামাতে ওস্তাদ আর একটা কোন ভাবেই মানতে নারাজ সেটা হচ্ছে- ফলো ইয়োর হার্ট, ডু হোয়াট ইউ লাভ টু ডু।

এত কথার শেষ কথা আমি ভূটান যেয়ে থাকতে চাই, সেখানে মানুষের কিছু থাক বা না থাক, একটা কেমন শান্তি শান্তি ভাব আছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৭ দুপুর ১:১৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×