টের পাচ্ছি আমাকে নিয়ে বাড়ির সবাই খুব অস্বস্তিতে আছে। জীবনে এরকম অস্বস্তিকর অবস্থায় কখনো পড়েছি বলে মনে পরে না। এমনকি নেপাল থেকে ফিরে সব আধোয়া ময়লা কাপড় জন্য যখন ঘরের জামা পরেই শ্বশুড়বাড়ি গেলাম, তখনো বাসভর্তি লোকের বিষ্ময় দৃষ্টি আমাকে এতটা অস্বস্তিতে ফেলেনি (বিষয়টা এমন আপনে ঝোলা নিয়ে কর্পোরেট অফিসে গেছেন) এখন যার বাড়িতে আছি সে আমার বান্ধবি। ধরি তার নাম কল্পনা চাকমা। না সেই কল্পনা চাকমা না, তবে শেষ নামটা আসলেই চাকমা। প্রাণের বন্ধু না হলেও ভালো বন্ধু। হলে রুমমেট ছিলাম, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফিল্ম সোসাইটিতে বেগার খেটেছি, আমার এবং আমার জীবন সঙ্গীর অনেক পছন্দের একজন মানুষ।
অনেক দিন ধরেই আসতে চেয়েছিলাম ওর বাসাতে, হঠাৎই প্লান করে চলে এলাম। আমি একা। আমার বরের কাজ আছে, তার সময় নেই। ভেবেছিলাম দু’বন্ধু মিলে একটু ঘুরবো ফিরবো, আর আমি ছবি তুলবো। রাঙ্গামাটি বর্ষাকালে অসাধারণ। বান্ধবীকে ইনবক্সে জানাতেই সে বললো চলে আয়। ও চিরকালই এমন। অসম্ভব পরোপকারী, পরিশ্রমী, দাতা, শুদ্ধমনের মানুষ। ওর রান্না করা ভাত আর আলুভাজি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ খাবারের মধ্য একটা। আর আঙ্কেল-আন্টি, ওনাদের মতো মানুষই হয় না। হলে যখন থাকতাম তখন থেকেই দেখেছি। এরকম একটা বাসায় এসে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবো ভাবতেই পারিনি। আমি যখন ঘটনা শুনলাম, তখন থেকে মনে মনে বলছি ধরণি দ্বিধা হও, আমি ঢুকে যাই তোমার গর্তে, আমায় কেন তুমি এমন অভিজ্ঞতার মুখে দ্বার করালে?
আমাকে কেউ কিচ্ছু বলছে না, আমিও জানি আমার কোন বিপদ এই বাসায় আসবে না। আমি পুরোটাই নিরাপদ। আমার বন্ধু আমাকে আগলে রাখবেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমি কি আমার এই বন্ধুকে এই নিরাপত্তার বোধটুকু এই দেশে কোথাও এক মুহুর্তের জন্য দিতে পেরেছি? পারবো কখনো?
*এই লিখাটা আমি যখন লিখছি তখন লংগদু গ্রামে আগুন জ্বলছে। আদিবাসীদের ঘরে আক্রমন করে আগুন দিয়েছে বাঙ্গালীরা। আজকের দিনের অভিজ্ঞতাটা হয়তো সত্যি হতো যদি সংসারের সাতকাহনে শেষ মুহুর্তে আমার যাওয়াটা আটকে না যেত। ধরণী দ্বিধা হও!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৭ দুপুর ১:২১