somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“বউ বড় হয়ে গেছে”!

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার বরের একটা ডায়ালগ আমার মনে ধরেছে- “বউ বড় হয়ে গেছে”!

গতমাসে যখন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহনের জন্য সুইডেন যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন মাকে ফোন করে জানাতেই মা বললো, জামাই যাবে? আমি বললাম না, আমি একাই যাবো। বুঝলাম, মা মোটেই খুশি না। ফোন রাখতে না রাখতেই বাবার ফোন, একা একা কীভাবে যাবো, কি হবে না হবে এসব প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে আমি মুসকিল আসান আমার বরের হাতে ফোন তুলে দিলাম। যথারীতি উনি সবাইকে বোঝালেন, বুঝিয়ে শান্ত করলেন যে “ইহা সম্পূর্ণ নিরাপদ”। বাংলাদেশের মতো একটা বিচ্ছিরি, পদে পদে ঝামেলা/ অনিরপদ একটা দেশ থেকে সুইডেন অনেক নিরাপদ এবং যাচ্ছিতো টার্কিশ এয়ার-এ, লোকাল বাসে না; সুতরাং সমস্যা হওয়ার কিছু নাই।
এই জিনিসটা আমার বরের খুব ভালো, সে কীভাবে কীভাবে যেন ওড জিনিসগুলি ম্যানেজ করে ফেলে।

তার মানে এইটা ভাবার কিচ্ছু নাই যে সে উদারনৈতিক! উনিও কন্ট্রোলিং এবং আমি নিন্দুক বলে বলি পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন ! প্রয়োজন অপ্রয়োজনে বাসা থেকে বের হতে ইনার পারমিশন লাগে না বটে, কিন্তু জানায় যেতে হয়, এবং সম্পূর্ণ আইটেনারি সহ। রিক্সা নিলাম না সি এন জি, নাকি উবার কল করবো, প্রতি মুহুর্তের জিপিএস অন রাখার মত ইনাকে টেক্স করে অবস্থান জানাতে হয়। ইনার ধারনা বাংলাদেশের ঘরের বাহিরে সিরিয়া পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যেকোনো মুহুর্তে হামলা হতে পারে। তো এই পরিস্থিতির মধ্যে আমি যখন সুইডেন যাচ্ছি, ইনি শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র প্রোভাইড করেই ক্ষ্যান্ত দিলেন। কোথায় ঘুরবো, কী করবো এইসব বিষয়ে কোন মন্তব্য করা দূরে থাক, আমার রিসার্চ করা কোন কিছু ছুঁয়েই দেখলেন না। আমি বললাম, কী হইলো তোমার মন খারাপ? খোঁচা দিয়েও জানতে চাইলাম জেলাস কীনা?? শুধু হাসে, হেসে হেসে বলে “আমার বউ বড় হয়ে গেছে” / একা একা ইউরোপ যায়। আমি বললাম, একটু দেখ না কোথায় কোথায় ঘুরবো? ইনি আন্তরিকতা সহ জবাব দিলেন, ‘তুমি নিজে করো, তাহলে মাথায় সব কিছু থাকবে’।
বলা ভালো যে এই সময় বাঙালি আত্মীয় স্বজন, উভয় পক্ষের এবং বন্ধুরাও তাকে অস্থির করেছে, জ্বালিয়েছে। সবচেয়ে কমন প্রশ্ন, তুমি/তুই কিভাবে যাইতে দিচ্ছ/দিচ্ছিস? ইনি সব অত্যাচার হাসি মুখে সহ্য করে বলেছেন,‘ও যাচ্ছে’!

অবশেষে যখন যাত্রার দিন ঘনিয়ে এলো, তখন ইনি ইনকাম ট্যাক্সের কাগজপত্র গোছাতে ব্যস্ত! আমি শুধু পুরোনো অফিস থেকে চালানপত্র নিয়ে ইনার হাতে দিয়েই ‘বহুত কাজ করে ফেলেছি’ এমন ভাব নিয়ে জামা কাপড় গুছাতে থাকলাম।

যাওয়ার দিন যখন এয়ারপোর্টে পৌছে চেক ইন করলাম, তখন আমার নার্ভাসনেস বেড়ে গেল এবং বাড়াবাড়ি রকম টেনশন শুরু হলো। বিরহে নাকের পানি চোখের পানিও একাকার করে ফেললাম, আমার কান্না কাটির জোরে বেচারা আশেপাশে কে একদম সুইডেন পর্যন্ত যাবে সেটা খুঁজে বের করতে শুরু করলো। এবং দুইজন আপুকে পেয়েও গেল। ওনারা সুইডেনে সেটলড, পৌঁছানোর পর ওনারা আমাকে গন্তব্যে পৌঁছাতেও হেল্প করেছেন।



উন্নয়নশীল দেশের নাগরিক হিসেবে আমি এই উন্নত দেশের নাগরিক সেবায় মুগ্ধ। আরাম করে ঘুরে বেড়াই আর অভ্যাসমত ইনাকে মেসেঞ্জারে আপডেট দিতে থাকি। বাংলাদেশে যেটা না করলে ঝাড়ি খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেইটা ফলো করে দেখলাম, ভদ্রলোক উল্টা ঝাড়ি দিয়ে বললো- এত মেসেজ দিলে তুমি আশে পাশে কী আছে সেটা দেখবা কী করে! আমি টাসকি খেয়ে, সেই ভাবটা গোপন করে বললাম, দিচ্ছি তোমাকে জেলাস করতে!!

ফিরে এসে বললাম, খুব তো আরামে ছিলা এই কয়দিন, কেউ জ্বালায় নাই। ইনি বললেন, কেউ জ্বালায়?!! নাই বটে; কিন্তু কেউ বলেও নাই, ‘শোন, চা দিবো?’/ ‘কিছু লাগবে?’
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:০৫
১৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×