আরেহ নরমালে বাচ্চা হইলে বুঝতা আসল মা হওয়া কাকে বলে! বাংলাদেশে এই প্রজন্মের মায়েদের সম্ভবত এই কথাটা শুনতে হয় সবচেয়ে বেশি। এবং বলেন আগের প্রজন্মের মায়েরা মানে আমাদের মায়েরা/ দাদীরা। আমি এটা শুনি না, কেননা জয়ির জন্ম হয়েছে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে, আমার মা এবং শাশুড়ী এই বিষয়ে খুবই প্রাউড ফিল করেন! ওনাদের হিসেবে আমি মা হিসেবে পাশ মার্কস পেয়েছি এবং এটাকে এতটা গ্লোরিফাই করে প্রচার করেন যেন কি না কি করে ফেলেছি, আমার পি এইচ ডি ডিগ্রি বা ওয়ার্ল্ড ক্লাস ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিও এটার কাছে তুচ্ছ ! ( আমি পি এইচ ডি করি নাই, নরমাল ডেলিভারির গ্লোরিফিকেশনের গভীরতার বিপরীতে উদাহরন হিসেবে ব্যবহার করেছি)।
কিন্তু কথা হচ্ছে এই স্বাভাবিক পদ্ধতিতে বাচ্চা জন্ম দেয়া এত গ্লোরিফাই করার মত কিছু কি না! উত্তর অবশ্যই ‘না’। প্রচুর এনার্জি নিংড়ে, পেলভিক ফ্লোরের বারোটা বাজিয়ে, সেকেন্ড/থার্ড/ফোর্থ ডিগ্রি ভ্যাজাইনাল টিয়ারের রিস্ক নিয়ে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হয়। যেটা কেউ বলে না সেটা হচ্ছে ভ্যাজাইনাল টিয়ারের রিকভারি কি পরিমান পেইনফুল এবং আনকমর্ফটেবল একটা প্রসেস। এর সাথে আছে সারাজীবন ধরে পেলভিক ফ্লোরের যত্ন নেয়ার বাধ্যবাধকতা। না নিলে কত ধরনের সমস্যা হতে পারে সে আলোচনায় নাই বা গেলাম। কিন্তু যেটা সুবিধা সেটা হচ্ছে হরমোনাল ফ্লো স্বাভাবিক ভাবে ক্লিক করতে থাকে। সিজারিয়ান সেকশন ডেলিভারিতেও রিস্ক কম থাকে না। আমার যেহেতু এ অভিজ্ঞতা নেই তাই রিস্কগুলো বা অসুবিধাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ বলতে পারছি না।
এই যে আমাকে নিংড়ে জয়ির জয়ি হয়ে ওঠাকে এতটা উচ্চ ভাবে দেখা হয়, আমি কি এটার ভিত্তিতে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে জয়িকে জন্ম দিতে চেয়েছিলাম কিনা বা সোজা বাংলায় আমি কি আসল মা হইতে চেয়েছিলাম কিনা! না রে ভাই, এইটা আমার মোটিভেশন ছিলো না। জয়ি গর্ভে থাকার পুরোটা সময় আমি যে ডক্টরের কাছে চেক আপ করতাম উনি বলতেন যে স্বাভাবিক পদ্ধতি বেস্ট। বার্থ প্রিপারেশন ক্লাস করেও আমার মনে হয়েছিলো যে আমার জন্য স্বাভাবিক পদ্ধতিই ঠিক আছে। কাটা ছেঁড়াতে আমার ভয় আছে, তাছাড়া এদেশের সিস্টেম স্বাভাবিক পদ্ধতিতে জন্মদানের জন্য যত সাপোর্ট প্রয়োজন সবটাই দিয়ে থাকে। কিন্তু বার্থ প্লানের অংশ হিসেবে আমার স্বাক্ষর নেয়া হয়েছিলো এই মর্মে যে যেকোন এমার্জেন্সিতে ডক্টর সিজারিয়ান সেকসন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
এখানে আসল মা হওয়ার কোন কারবার নাই। বরং এটা ছিলো আমার প্রথম চয়েজ, ডক্টর মিডওয়াইফ সবাই এই চয়েজকে স্বাভাবিক ধরে নেয় যতক্ষণ না পর্যন্ত কমপ্লিকেশন তৈরী হচ্ছে। সিজারিয়ান সেকসন ও রেয়ার ঘটনা নয়, জার্মানিতে প্রতি পাঁচ জনে একজন সিজারিয়ান সেকসনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়।
এত ভূমিকার মূল কথা হচ্ছে, মেডিকাল কমপ্লিকেশনের বাহিরে কেউ স্বাভাবিক পদ্ধতিতে নাকি সিজারিয়ান সেকসনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেবেন এটা তার সিদ্ধান্ত হওয়া উচিৎ। এই সিদ্ধান্তের সাথে আসল বা নকল মা হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই!
পাদটীকাঃ
খুব তো বললাম এটা আমার প্রথম চয়েজ ছিলো, সার্ভিক্স ওপেন হওয়ার সময় থেকে লেবার, এই দশ ঘন্টার মাঝামঝি সময়ে ব্যথা সহ্য না করতে পেরে আমি মেরাজকে বলতেছিলাম ওদেরকে বলো আমার পেইন স্টপ করতে। জয়ি পেটেই থাকুক। তুমি টিকেট কাটো, আমি বাংলাদেশে যেয়ে সি সেকসন করবো। এরা কথা শুনতেছে না। অ্যান্ড আই ওয়াজ সিরিয়াসলি কনসিডারিং দ্যাট অপসন ☹ । এমনকি জয়ি যখন বার্থ ক্যানেলের শেষ প্রান্তে, আমার কথা বলার সামর্থ নাই তখনও মিনমিন করছিলাম যে সি সেকসন করবো। ডক্টর করেন নি, আসলে তখন সি সেকসন করা আর পসিবল ছিলো না। জয়ির হার্টবিট পাচ্ছিলেন না ডক্টর, আমিও নড়তে পারছিলাম না, জয়ির কিছু হতে পারে যেকোনো সময় এই চিন্তা আমার মাথায় ঢুকিয়েও ডক্টর আমার পজিসন চেইঞ্জ করাতে পারেন নি, এখন বলেন আমি কি জয়ির নকল মা?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২৩ ভোর ৪:৪৪