somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিনি সুতোর মালা

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাড়ির পাশে আশৈশব একটি সজনে গাছ দেখে-দেখে বড় হয়েছি। মায়াবী সজনের ফুল। সবুজ পাতার আড়াল ছাপিয়ে সাদাটে ফুলের মায়া বড় মোহনীয়।


ঢাকা বাস আরম্ভ হবার পর নিবিড়ভাবে আর সজনে গাছ বিশেষ দেখা হয়নি। মাঝে-মধ্যে বাড়ি গেলে বা চকিতে চলতি পথে কোথাও হয়তো বা চোখে পড়েছে।


কিন্তু গত বছর দেড়েক হলো আমার চলার পথ ভরে আছে সজনে ফুলের মায়ায়।


কর্মস্থল কুড়িলে স্থানান্তরিত হওয়ায় অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয় রোজ। যেহেতু বাইকই আমার বাহন তাই চারপাশটাও ঘাড় ঘুড়িয়ে-ঘুড়িয়ে বেশ উপভোগ করার সুযোগ ঘটে।


গত কিছু দিন নয়ন ভরে আছে সজনে ফুলের মায়ায়। পথের দু'ধারে খানিক পরপরই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকছে সজনে গাছ। গাছ ভরা মায়া।


কিন্তু আজকাল সজনে ফুল দেখলেই আমার শাহেদ ভাইয়ের মায়ের কথা মনে পড়ে।


কিছুদিন আগে কফি খেতে-খেতে হাজার গল্পের এক গল্প হিসেবে শাহেদ ভাই তার মায়ের প্রস্থানের দিনের কথা বলছিলেন।


শাহেদ ভাইয়ের মা ফুল ভরা সজনে গাছ খুব ভালোবাসতেন। উনি যেদিন দেহান্তরিত হলেন, সেদিন তাকে গোরে নামানোর সময় মাতৃবিয়োগের বেদনার মধ্যেও শাহেদ ভাইয়ের হৃদয় চকিতে পুলকিত হয়ে উঠেছিল। কারণ তার মায়ের ঠিক কবরের পাশেই একটা সবুজ সজনে গাছ মায়াবী সাদাটে ফুলে ঐশ্বর্যমণ্ডিত হয়ে ছড়াচ্ছিল অপার্থিব সৌন্দর্য।


ফুল ভরা সজনে গাছে দেখে শাহেদ ভাইয়ের মনে হয়েছিল, বাহ! মায়ের কবরের পাশেই মায়ের ভালোবাসার সজনে ফুল! মা দেখলে খুব খুশী হতো!


গল্প শুনতে শুনতে আমার মনে হয়েছিল, এটাই বুঝি ছিল সজনে-ফুলে-মুগ্ধ এক সন্তানের প্রতি মা প্রকৃতির ফেয়ারওয়েল।


কিন্তু ফেয়ারওয়েল বা বিদায় উপহারের মধ্যেই ব্যাপারটা শেষ হয়নি। গত কিছু দিন ধরে সজনে গাছ দেখলেই আমার শাহেদ ভাইয়ের মায়ের কথা মনে আসে।


কবর প্রসঙ্গেই মনে আসছে আরেকজনের কথা।


আমার বাবা দেহান্তরিত হবার পর আর্ত চিত্তে একদিন আমি লিখেছিলাম, "আগে বাবার কাছে যেতাম। এখন তার কবরের কাছে যাই।"


আমার এই লেখার নিচে কামাল ভাই মন্তব্যের ঘরে লিখেছিলেন, তার বাবার কবরটাও নেই। নদী এসে কবরটাও ভেঙে নিয়ে গেছে একদিন। ফলে, বাবার কবরের কাছে বসে প্রাণ জুড়ানোর সুযোগটাও নেই ব্যথিত সন্তানের।


সেই থেকে যতবার আমি আব্বির কবরের কাছে যাই, কামাল ভাইয়ের কথা মনে পড়ে।


বাবার কবরের পাশে আশ্রয় গ্রহনের আশীর্বাদও সকলের জোটে না সংসারে!


আজ সকালে আসতে পথে রোজকার মতই সজনে ফুলের মায়ায় যখন আমি মাখামাখি, শাহেদ ভাইয়ের মায়ের কথা মনে গুঞ্জিরত হতে থাকলো। কবরের পাশে ফুলেল সজনে গাছের দৃশ্যটা মনে আসা মাত্রই আমার আব্বির কবরের কথা মনে এলো। আব্বির কবর ভরা দোলনচাপা গাছ। ক'দিন আগে দেখে এলাম, ফুল ফোটা শেষ হয়ে গাছগুলো বুড়ো হয়ে গেছে।


ফুল দেয়া শেষ হলেই বাড়িতে থাকা সব দোলনচাপার গাছ আব্বি কেটে ফেলতো। এই নিয়ে আম্মি মুখ-ঝামটা দিলে আব্বি বলতো, বোঝো না তো কিছু! এই গাছ বারবার ফুল দেয় না। এইগুলার সব কলি ফুটে গেছে। যেইগুলার ফুল দেয়া শেষ সেইগুলা না কাটলে নতুন গাছ বাড়বে না। নতুন গাছে পুষ্টি না গেলে ফুল অইবো কেমনে!


আব্বির কবরের উপরে থাকা ফুল দিয়ে মরে যাওয়া দোলন চাপা গাছের ঝোপটাকে পরিষ্কার করতে বলেছিলাম আমার ছোটো বোনকে। ঝাঁকরা হয়ে থাকা এবড়ো-থেবড়ো গাছ আব্বি পছন্দ করতো না। গাছেদেরকে আব্বি খুব যত্ন করে রাখতো।


এইসব সাত-পাঁচ যখন মনে ঘোর-পাক খাচ্ছে তখনই কামাল ভাইয়ের কথা মনে এলো। নদী এসে তার বাবার কবরটাও মুছে নিয়ে গেলো।


কামাল ভাই, বাবার কবরের কোনো রিপ্লেসমেন্ট হয় না। যদি হতো, আমি আপনাকে আমার বাবার কবরের কাছে আসতে বলতাম।


পৃথিবী একটা বিনি সুতোর মালা। শাহেদ ভাইয়ের মা বা কামাল ভাইয়ের বাবাকে না দেখেও আমরা সবাই একই মালার পুঁতি হয়ে উঠেছি। আমাদেরকে বিনি সুতার মালায় বেঁধে রেখেছে সজনে ফুলের মায়া; আমাদেরকে বেঁধে রেখেছে কবরের বিহ্বলতা।


০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:১০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×