somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষকতা !!!

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইচ্ছে ছিলো শিক্ষক হবো। মাদ্রাসায় যতদিন ছিলাম, সম্ভাবনা ছিল প্রবল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পরও ইচ্ছেটা ছিলো। আমি যে মাদ্রাসা থেকে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই সেখানকার বেশ কয়েকজনই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। আমি পিছিয়ে পড়েছি। রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার সুযোগ হয়নি।

যারা আমাকে চিনতেন তারা আমার রেজাল্টের কথা শুনে অবাক হতেন। তাদের বলতাম, চারবার টাইফয়েড আর একবার বোন টিবির কারণে পড়াশুনা বেশি করতে পারিনি। এ কারণেই রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। তাদের যে কথাটা বলতাম না সেটা হলো ভালো রেজাল্ট করার আগ্রহ নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পরই।

আমাদের একজন শিক্ষক ছিলেন। সাদাসিদে। কথা বলতেন নিচু স্বরে। একদিন তার ছোট্ট রুমে গিয়ে বদলে গিয়েছিলো আমার জীবনের পথরেখা। তার সেই প্রবীণমুখে আমি দেখেছিলাম রাজ্যের অভিমান। সাথে আক্ষেপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র হয়ে শিক্ষকতার পেশাকে বেছে নেবার অপরাধবোধ। আমি কেঁপে উঠেছিলাম। স্যারের চোখে পানি ছিল না যদিও, আমার চোখে পানি এসেছিলো। স্যার হয়তো কোন কারণে তখন অনেক কষ্টে ছিলেন। হয়তো সে কারণেই আমার মত স্বল্প পরিচিত ছাত্রের কাছে অকপটে বলে গিয়েছেন তার মর্মযাতনা।

বলা যায় দারিদ্যের কষাঘাতে বড় হওয়া ছেলে আমি। আমি কোন দু:খে শিক্ষকতার মত 'অপরের তরে উৎসর্গ জীবন' বেছে নিবো? এমনকি পড়াশুনা শেষে যখন ব্যাংকিং নাকি সাংবাদিকতা- কোন পথে যাবো? এমন প্রশ্ন এলো, অবলিলায় ব্যাংকিং বেছে নিলাম। আমাকে মা-বাবার কথা ভাবতে হবে, ভাইদের কথা ভাবতে হবে, নিজের কথা ভাবতে হবে। অত মহান আমি নই যে, বিনা পয়সায় জ্ঞান বিতরণ করে যাবো আজীবন। অত ধনীও আমি নই। সাহসীও নই।

শিক্ষকতার প্রতি যে আমার আবাল্য প্রেম সেটা অবশ্য দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মত করে মিটিয়ে নিয়েছি আবৃত্তি একাডেমিতে। এখানে আমি বিনা পয়সায় ক্লাস নেই। প্রতি ক্লাসে এখানে যে শিক্ষক সম্মানি দেয়া হয়, আমারটা নেইনা। সে টাকা একটা ফান্ডে জমা হয়। গ্রুপের দরিদ্র সদস্যদের প্রয়োজনে যেন ফান্ডটা ব্যবহার করা যায় সে কারণে। কী ভাবছেন? আবৃত্তি একাডেমি বা আবৃত্তি অংগনে আমার খুব সুনাম? সবাই আমাকে খুব পছন্দ করে? ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়। এ পর্যন্ত আমি ৩বার আবৃত্তি একাডেমিতে আসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। একবার এমন অভিযোগও উঠেছিল, আমি একাডেমির টাকা দিয়ে ফ্যামিলি চালাই। সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় এখানে ক্লাস নেয়া সহ অন্যান্য কাজ করার পরও কিন্তু আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসা থেমে থাকেনি।

আমি অবশ্য এখন আগের মত অন্যের মতকে শ্রদ্ধা করি না। দুর্জনের সমালোচনাকে আমি দু-আনার মূল্যও দেই না। আবৃত্তি একাডেমির জন্য ক্ষতিকর যারা তাদের মতামতকে আমি কোন মতামতই মনে করি না। ফলে তাদের সমালোচনায় আমি এখন আগের মত আবৃত্তি একাডেমিতে আসা বন্ধ করি না। কারণ আমি জেনে গেছি, এদের কাজই হলো সমালোচনা করা। যারা কিছু করার সামর্থ্য রাখে না সমালোচনা করা তাদেরই পেশা।

চলমান রাষ্ট্র বনাম শিক্ষক বিরোধ দেখে মনে পড়লো, আমার এক বন্ধু একটি পত্রিকায় বিরাট লোভনীয় পদে চাকরী ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পেশা বেছে নিয়েছিলো। তাকে এখন বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, বন্ধু তুই ভালো রেজাল্ট করে, পত্রিকার বড় পদে চাকরীর অফার ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে ভুল করেছিস। আগে তোদের বেতন না থাকলেও সম্মানটা ছিলো। এবার তো পুরো জাতি মিলে তোদের সম্মানটা কেড়ে নিচ্ছে। এখন তোর কি হবে রে!

ইয়ে, যারা লাট সাহেবের কুকুরের কয় পা সমান পন্ডিত মশায়ের গোটা পরিবার-এই অংক মিলাতে গিয়ে মনে কষ্ট পেতেন তারা এবার কষে পন্ডিত মশাইকে কয়টা গালি দিয়ে যান। কেন সে বেতন নিতে চায়? তার তো উচিত আমার মত বিনা পয়সায় পড়ানো।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৫৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×