somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইনসিদ্ধ যৌনতাঃ প্রয়োজন নিবিড় সতর্কতা

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মোবাইলে ইমারজেন্সী শুনে রীতিমত দৌড় দিলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে নানান বাজে চিন্তা মাথায় এসে ভর করছিল। খারাপ কিছু ঘটে গেল না তো মেয়েটার সাথে!! এভাবে অচেনা অজানা একটা গ্রামে ভর সন্ধ্যা বেলা একা একটা বাড়িতে বৃষ্টিকে রেখে ইট ভাটা দর্শন করতে আসাটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হয় নাই। অবশ্য আমি যে থাকতে চাই নাই বিষয়টা তেমন না। বৃষ্টিই জোর করে আমাকে বাইরে পাঠিয়ে দিল এই বলে যে মেয়েটির সামনে যদি আপনি অর্থ্যাত একজন পুরুষ থাকেন তবে সে অনেক কথাই বলবে না, গোপন করে যাবে। সহমত পোষন করে, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমিও কয়েকশ গজ দূরে অবস্থিত ইটভাটার লোকেদের সাথে ভাটায় কর্মরত নারী শ্রমিকদের অংশ গ্রহন, পারিশ্রমিক এবং অন্যান্য আলাপচারিতায় মেতে উঠেছিলাম।
উসাইন বোল্টকেও হার মানিয়ে দেয়া দৌর শেষ করে বৃষ্টিকে রেখে যাওয়া বাড়িটিতে পৌছা মাত্র বৃষ্টি, সেই বাড়িতে ৬/৭ বছর বয়সী প্রতিবেশীর ছোট্ট একটা বাচ্চার দিকে দেখিয়ে আমাকে বলে উঠল- ভাইয়া ওর নাম ‘টংকা’। বৃষ্টিকে আর কিছুই বলতে হল না। টংকা নামটা শোনার পরপর-ই আমার ইউরেকা ইউরেকা বলে চিৎকার দিয়ে উঠতে ইচ্ছা করছিল। খুব কষ্টে তা হজম করে বৃষ্টিকে তার কাজ করতে বলে আমি শুরু করলাম আমার ‘টংকা’ মিশন। শুরু হল ‘টংকা’র সাথে গল্প। আমার গল্প, তার গল্প। ভাল মানুষের গল্প, খারাপ মানুষের গল্প। আর ভাল মানুষদের ফাঁদে ফেলার গল্প।

পাঠক, এতক্ষনে হয়তোবা আপনারা বুঝে উঠেছেন যে, বাংলার সাম্প্রতিক নারী সমাজ চিত্রায়নে আমি এবং সহগবেষক বৃষ্টি পাবনার কোন একটি দূর্লভ যোগাযোগ ব্যাবস্থা সম্পন্ন, ধর্মীয় গোঁড়ামি সর্বস্ব এবং তথাকথিত আধুনিকতা হতে বেশ দূরের একটি গ্রামে গিয়ে হাজির হয়েছি। যেখানে এখন আমাদের কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম ‘টংকা’ যে কিনা ৬/৭ বছরের একটি বালক।
নারী সংক্রান্ত গবেষনায় ‘টংকা’ চরিত্রের কেন্দ্রে চলে আসার বিষয়টি অনুধাবন করতে হলে আমাদের কিছুটা ফ্ল্যাশব্যাকে যেতে হবে। গবেষনা কর্মটির জন্য যখন আমরা গ্রামের মেয়ে শিশুদের ‘যৌন হয়রানী’ বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করছিলাম তখন বারবার ঘুরেফিরে ‘টংকা’ নামটিই সামনে আসছিল। অন্য পাড়ার ছেলেরা ‘টংকা’দের পাড়ার নাম দিয়েছিল ‘জরিমানা’ পাড়া, যদিও সেই পাড়ার অন্য একটা নাম রয়েছে। কারন হিসেবে তারা জানায় ঐ পাড়ার ছেলেরা খালি জরিমানা দেয়। কেন জরিমানা দেয় জিজ্ঞেস করলে, একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে অনেক কষ্টে ‘টংকা’র ঘটনাটি সামনে নিয়ে আসে। তারা জানায়, কিছুদিন পূর্বে ঐ পাড়ার টংকা আর সাথের কয়জন (একই পাড়ার, সমবয়সী বন্ধু) মিলির সাথে (বয়সঃ ৫ বছর) খারাপ ব্যবহার (যৌন- নির্যাতন) করেছিল। পরে মিলির আব্বু চুপ করে শালিস ডাকে, রাতের বেলা। ঐ শালিসে ‘টংকা’র আব্বু সহ আর সবার বাপদের (টংকার বন্ধুদের বাবাদের) ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হইছে। এরপর থেকে ঐ পাড়ার নাম হইছে জরিমানা পাড়া।

শিশুদের মুখ থেকে জরিমানা পাড়ার ‘টংকা’ এবং তার বন্ধুদের ঘটনার বয়ান শোনার পর থেকে আমি এবং বৃষ্টি আমাদের গবেষনার কেন্দ্র থেকে কিছুটা বের হয়ে আসলে খুজতে থাকি কোন সেই ঘটনাগুলো ‘টংকা’ তথা তার সমবয়সী ৫/৬ বছরের শিশুদের এমন যৌনতার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে যেটা তাদের একটা ধর্ষন কান্ড সংঘটনে নিবৃত্ত করে তোলে।
সেদিন সন্ধ্যায় নানা রকম মোটিভেশনের পর ‘টংকা’ নিজে থেকেই সেই গল্পটা বলতে শুরু করে দেয়। তার ভাষায়- আমার তো কোন দোষ ছিল না ভাইয়া! আমরা বিলে গিয়েছিলাম …….. ফল (ফলটির নাম মনে করতে পারছি না) খেতে। ওখানে মিলি আর ওর ছোট ভাই আসে। ওরা (বন্ধুরা) প্রথমে মিলিকে চেপে ধরে, তারপর মাটিতে ফেলে দেয়। আমাকে তারা ‘মিলি’র পা চেপে ধরতে বলে। মিলি’র ভাই দৌড় দিয়ে গিয়ে তাদের বাসায় সব বলে দেয়। আমি কিছু করি নাই। এরপর ও আমাকে মারছে (শালিসে) ওরা, আব্বুকে অনেক গুলো টাকা দিতে হয়েছে। বাসায় এসে আব্বু, আম্মু দুজনেই মারছে।
নাহ! এই সমস্যার সমাধান কোন ভাবেই মারধর কিংবা সন্তানকে শাসন করা নয়। যদিও সিগমন্ড ফ্রয়েডের মতে, ৩ থেকে ৬ বছর বয়সে শিশুরা যৌনাঙ্গ সম্পর্কে বুঝতে শিখে। একই সাথে সামাজিক ও জৈবিক ভাবে কে ছেলে কে মেয়ে তা তারা অবহিত হয়। অপজিট সেক্স বা ভিন্ন লিঙ্গের অভিভাবকের প্রতি আগ্রহ বা জিজ্ঞাসা বাড়ে । তবে আমি আসলে সেই ‘সামাজিক’ এবং ‘অ-সামাজিক’ উপাদান গুলো খুজছিলাম যেগুলো ‘টংকা’ এবং তার বন্ধুদের এই ভয়াবহ কাজটিতে অনুপ্রানিত করেছে।
এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমি সমাজের গন্যমান্য ব্যাক্তি, সন্তানের পিতা-মাতা, অভিভাবক, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, স্বাস্থকর্মী, নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে গ্রামের বাজারের যে মোবাইলের দোকানটি মানুষের মোবাইলে পর্ন ভিডিও সাপ্লাই দেয় তার সঙ্গে পর্যন্ত আলোচনা করেছি। শিশুদের এমন প্রবনতার ক্ষেত্রে ঘুরেফিরে তারা সকলেই মোটামুটি দৃষ্টিপাত করেছেনঃ
১। পিতামাতার শাসনের অভাব
২। অতিরিক্ত আদর
৩। পিতামাতার অশিক্ষা
৪। এলাকার খারাপ পরিবেশ
৫। শিশুর বাড়িতে খারাপ পরিবেশ
৫। অল্প বয়সেই মোবাইলের কল্যানে বড় শিশুদের সহচর্য্যে এসে পর্ন ভিডিও-র সাথে শিশুদের পরিচিতি।
৬। শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা হতে বিরত রাখা
৭। ধর্ম-কর্ম হতে বিরত রাখা

আমি আসলে কোনভাবেই উপরের কারন গুলোতে সন্তুষ্ট হতে পারছিলাম না। আমার বিশ্বাস ছিল যে ‘টংকা’দের ক্ষেত্রে যৌনতার চেয়ে এটা বেশি ছিল কৌতুহল। এরপর আমি ‘টংকা’র সাথে বেশি বেশি সময় কাটাতে শুরু করলাম। তৈরি করে নিলাম এক ভাবে বন্ধুর সম্পর্ক। তারপর একদিন সে তার থলের বিড়াল বের করে বসল। সে বলে বসল, তারা বন্ধুরা যখন একত্র হয়ে গল্প করে তখন তারা একে একে বয়ান করে তাদের দেখা (হয়তো-বা শোনা) আগের রাতের গল্প। রাতের আঁধারে বাবা-মায়েদের যৌনতার গল্প।

স্নেহ বাৎসল্য হোক আর অভাব বোধ থেকেই হোক, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় পিতা-মাতারা সাধারনত নির্দিষ্ট একটা বয়স পর্যন্ত আদরের সন্তানকে তাদের নিজেদের সাথে নিয়েই ঘুমান। এটা যেমন জরুরী একই সাথে জরুরী ও হল পিতা-মাতা উভয়েরই যৌনতা নিবৃত্তির বিষয়টিও। আর এই 'যৌনাচারে' তারা ভূলে যান তাদের ঠিক পাশেই তাদের ঘুমন্ত শিশুটিকে। ‘টংকা’দের ঘটনায়, ‘টংকা’দের পিতা-মাতার অসতর্ক যৌনাচার-ই তাদের একদিন চরম কৌতূহলী করে তোলে, আর সেই কৌতুহল তাদের ধর্ষন নামক একটা ঘটনার দিকে ধাবিত করে। যদিও তারা জানতও না যে এটি গর্হিত এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যার গ্লানি নিয়ে তারা পার করছে তাদের শৈশব। হয়তোবা কৈশোর, যৌবন সবগুলোই।

ডিসক্লেইমারঃ ঘটনা বয়ানে স্থান, কাল, পাত্র কাল্পনিকতার অন্তরালে ছদ্ম নামের আশ্রয়ে বর্ননায়িত যার বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই। আর মিলে গেলে তা হবে কাকতালীয় মাত্র। লেখক কোন বিষয়ের জন্য কোন ভাবেই দায়বদ্ধ নন।
ছবিঃ নেট হতে সংগৃহিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৮
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×