somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন কালু দা কে বাংলা নববর্ষের অফুরান শুভেচ্ছা!

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নববর্ষ উপলক্ষে কালু দা তার পুরো জীবনকালে কখনোই কোন ধরনের আয়োজনের অভাব বোধ করেননি! এই দৃষ্টিকোন হতে আমরা তাকে বেশ বড়লোক হিসেবে বিবেচনা করলে করতেও পারি তবে কাচা লংকা সমেত নববর্ষীয় পানি-পান্তা ভাত যার নিত্য সংগী সেই মানুষটাকে কোন ভাবেই আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল বলাটা তার দারিদ্র্যের প্রতি তাচ্ছিল্য বৈ আর কিছুই নয়। চরম দারিদ্রতার গল্পটা মুখ ফুটে বলবার জায়গা ছিল না তার, কারন গরীব হলেও আত্ম-সম্মানবোধটুকু তখনো বেঁচে ছিল তার মাঝে!
মাঝে মাঝে আমাকে বলত। চেষ্টা করতাম প্রতি মাসে সামান্য কিছু টাকা পাঠিয়ে তার কষ্টে সামান্য শরীক হতে কিন্তু হু হু করে নিত্য বেড়ে চলা জীবনের মূল্যে ৫০০ টাকা বড়ই যে নগন্য! মাঝে মাঝে প্রচন্ড ইচ্ছে হত তার জন্য কিছু একটা করবার কিন্তু সাহসে কুলাতো না কখনো! কারন দায়বদ্ধতার জায়গা ছিল আমারো অনেক বেশী!

ProChESTA নামক একটি প্রতিষ্ঠানে তার হয়ে একটা আইজিএ সাপোর্টের জন্য আবেদন করে চুপ করে ছিলাম তাদের উত্তরের অপেক্ষায়। অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান হল! নববর্ষের ঠিক তিনদিন আগে ProChESTA-র অফিস হতে কর্তা ব্যাক্তিরা ফোন দিয়ে হড়হড় করে যা বলছিলেন আমার তাতে মনযোগ ছিলনা বরং আমি তখন কালু দা'র জন্য একটা সুন্দর দিনের শুরু দেখা শুরু করে দিয়েছিলাম।
ProChESTA-র ইচ্ছেটা ছিল কালু দা'র জন্য তাদের পক্ষ হতে একটা ক্ষুদ্র ব্যাবসা দ্বার করিয়ে দিয়ে তার জীবনমানের উন্নয়ন করা, যেটি কিনা হবে তার জন্য এবারের নববর্ষের সেরা উপহার! অর্থ্যাত নববর্ষের দিনেই তাকে তার দোকানে বসিয়ে দিতে হবে।

কিন্তু হায় নববর্ষ তো বাকী মাত্র দুইদিন।

ProChESTA হতে ১৫ হাজার টাকা পকেটে পুরে বৃহস্পতিবার রাতে দিলাম ছুট দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে! সারারাত নির্ঘুম গাড়িতে পরিকল্পনা করলাম কি করে নববর্ষেই আস্ত একটা দোকান কালু দাকে উপহার হিসেবে তুলে দেয়া যায়। অনেক টেনশন হচ্ছিল কারন দোকানের পজিশন, অনেক অনেক কেনাকাটা! কিভাবে সম্ভব! ভরষার একটা জায়গা ছিল, ছোট ভাইটা। সে চাইলে সবই সম্ভব! শুধু তাকে রাজী করানোটাই একটা কাজ।

খুব সকালে বাড়ি পৌছে, কালু ভাইকে ডেকে নিয়ে তার নিকট হতে কয়েক দফা টাকার পরিমানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন বিজনেস প্ল্যান যখন করে ফেললাম তখন বাদ সাধল রনি, মানে ছোটটা! এহেন মহৎ উদ্দ্যেগে তাকে কিছুতেই সাথী করতে পারছিলাম না। আর তাকে সাথে না পেলে ফ্রি তে একটা দোকানের পজিশন কোনভাবেই সম্ভব নয়।

তবু বুকে সাহস সঞ্চয় করে কালু ভাই'র দোকানের স্থায়ী সম্পদ হিসেবে একটা চৌকি আর একটা কাঠের বক্স বানাতে দিয়ে বাড়িতে ফিরে এসে দিলাম একটা ঘুম! সারাদিন ঘুমালাম!

সন্ধ্যায় এক কাপ চা হাতে নিয়ে বসেছি আর শুনছি ছোটটা কাকে যেন ফোনে ফাপড় দিচ্ছে! ফোনে কথা শেষ করে এসে, আমাকে বলল তোর জায়গা রেডি। কথাটা শুনে কি যে এক ভালোলাগা কাজ করেছিল তা বলে বোঝানোর মত ছিলনা। কারন কালু ভাইকে যেই বাজারে দোকান সমেত বসানোর পরিকল্পনা চলছিল, সেই বাজারে একটা দোকান ঘর ভাড়া নিতে গেলে শুধু এডভান্স হিসেবেই দিতে হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা! সাথে দোকান ভাড়া তো রয়েছেই।

পরের দিন তথা শনিবার উপড়ি পাওনা হিসেবে রনির ম্যানেজ করে দেয়া একজন অভিজ্ঞ পান দোকানদার, কালু ভাই আর আমি গেলাম নতুন দোকানের মালামাল কিনতে। এই দোকান সেই দোকান ঘুরে, দাম দড় যাচাই করে পান, সুপারি, জর্দা, চুন, শর্তা, সিগারেট সহ আরো কত্ত কি যে কেনা হল! বাস্তবিক টাকা উপার্জনের চেয়ে অন্যের টাকা খরচ করা বেশী কষ্টের। তবু একটা ভালোলাগা বিরাজ করছিল মনে, এই পৃথিবিতে আগামীকালটা কেউ একজনের জন্য অন্য রকম একটা দিন হবে।

গতদিন তথা পহেলা বৈশাখে দুপুরের পর হতেই, ভরলা গ্রামের বিলের মাঝখানে ফাকা একটা অংশে সাজসাজ রব চলছিল। সাজসাজ রব ছিল কালু ভাই'র বাড়িতেও। ঢাকের বাদ্যে বিলের মাঝখানে মেলা যখন প্রস্তুত হচ্ছিল, তখন কালু ভাইও প্রস্তুত হচ্ছিল তার নতুন দোকান নিয়ে সেই মেলায় হাজির হতে। আজ সে মেলায় দোকান দিবে, মেলা শেষ হলে পরের দিন সে দোকান নিয়ে তার স্থায়ী ঠিকানায় হাজির হবে।

মেলায় দোকান বসানোর পূর্বে সে সহ আরো দু-একজন মানুষ সমেত মোনাজাত ধরল! দোকান শুরুর পূর্বে এটাই হয়তোবা নিয়ম। তাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করবার নেপথ্যে যে মানুষগুলো তাদের জন্য এবং তাদের পরিবারের জন্য দোয়া করতে করতে তিনি হু হু করে কেঁদে উঠলেন। একটা সত্যিকারের সুখের কান্না গতদিন আমি দেখেছি। একটা সত্যিকারের নববর্ষের সেরা উপহার আমি দেখেছি। মানুষ কত অল্পতেই তুষ্ট হয়! আর আমরা? আমাদের অতৃপ্তির কোন যেন সীমানা নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:২৯
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×