সময়টা ৯০'র দশকের! ঢাকা শহরে মোবাইল ফোনের আবির্ভাব তখনো হয় নাই। শহর ভর্তি মানুষ ছিল, তবে পিপড়ের মত এত অগনিত ছিলনা। শত-সহস্র মানুষের ভীরে, বাড়ি হতে পালিয়ে আসা প্রচন্ড অভিমানী একজন সারাফাত হোসাইনও ছিল ব্যাস্ত এই শহরটায়, যে কিনা সারা দিন মোহাম্মদপুর, সলিমুল্লাহ রোডের ভরসা মেসে ল্যাটকা মেরে শুয়ে-ঘুমিয়ে-পরে থেকে পুরো রাত্রী ঢাকা শহর পায়ে হেটে ঘুরে বেড়াতো জীবন-জগতকে অন্ধকারের অভিজ্ঞতায় বুঝে ওঠার নিমিত্ত্বে। আর তার এই রাত্রী ভ্রমনটায় সংগ দিত তার পরম সহচর কিং আর্থার। কিং আর্থার ইংরেজী সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ উথার পেনড্রাগনের পুত্র কিং আর্থার নয় বরং পরম অনুগত একটা কুকুরের নাম। জন্মান্তরের ফের হতে মুক্তির লক্ষ্যে, দেহতত্ত্বের কঠিন এক সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে তথা মানব জীবনে উপদ্রপ সৃষ্টিকারী ছয়টি রিপু বিশেষতঃ কামবোধের উপর কঠিন নিয়ন্ত্রন আনয়ন করে একজন পুর্নাংগ মানুষ হয়ে উঠবার তার প্রচেষ্ঠাটায় বাদ সাধে একটা টেলিফোন।
বন্ধু আনোয়ারের উঠতি ব্যবসা'য়ের অফিস পাহাড়া দিতে গিয়ে একটা রং নাম্বার হতে আসা ফোন কল তার সকল ভজন-সাধন নষ্ট করে দিয়ে তাকে পুরো দস্তুর প্রেমিক বানিয়ে দিয়ে যায়। নিজের অজান্তেই ফোনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা বন্ধু পত্নীর সাথে পরকীয়া সম্পর্কটার মূল্য তাদের উভয়কেই দিতে হয় প্রচন্ডভাবে যা তাদের জন্য পূর্ব নির্ধারিত এবং পূর্ব-লিপিবদ্ধ ছিল অহল্যা নামক একটা গ্রন্থে।
হিন্দু পুরান রামায়ন হতে অহল্যা উপাখ্যানের পটভূমিকা সংগ্রহ করে তা সাম্প্রতিক জমানায় প্রতিস্থাপন করে নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছা, স্বাধীনতা, ক্ষমতায়ন তথা ভয়েস-চয়েস-স্পেস ইত্যাদির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
পৌরাণিক জমানা হতেই নারীর কন্ঠস্বর, পছন্দ কিংবা বস্তুত তার নিজস্ব বলে কোন পরিসর ছিলনা বরং সর্বদাই নারীকে পরিচালিত হতে হয়েছে পুরুষের পছন্দ ও সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। কালের আবর্তনে কিছু সংখ্যক নারী সামান্য ক্ষমতায়িত হতে পারলেও সেটা হয়েছিল পুরুষতান্ত্রিকতার দাক্ষ্যিন্যের উপর নির্ভর করেই, আর সিংহ ভাগ নারীই ছিল অবহেলিত, বঞ্চিত এবং অরক্ষিত। ‘অহল্যা’ বয়ানটি মূলত হিন্দু পুরাণ রামায়নের ‘অহল্যা’ উপাখ্যান হতে পটভূমিকা সংগ্রহ করে তাতে আধুনিকতার রুপ দিয়ে আধুনিক সমাজে একজন ‘অহল্যা’ তথা নারীর প্রকৃত অবস্থান তুলে ধরবার প্রয়াস চালিয়েছে, যেখানে একটি টেলিফোন কেন্দ্রীক পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের করুন পরিণতির ভেতর দিয়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে আরেক অহল্যা’র জীবনের গল্প। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রে একজন পুরুষকে রেখে তার বাউন্ডুলে, স্বেচ্ছাচারী যাপিত জীবনের ভেতর দিয়েই নারীকে দেখবার কিঞ্চিৎ প্রয়াস চালানো হয়েছে যেখানে দেহতত্ত্ব কিংবা অন্যান্য আলোচনাগুলো উপন্যাসটিকে করেছে আরো তথ্য সমৃদ্ধ। - ভূমিকা কথন, অহল্যা।
অহল্যা, আসছে অমর একুশে গ্রন্থ মেলা ২০২০ এ, এক রঙা এক ঘুড়ির ব্যানারে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৪৪