somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুলিশ প্রধানের এই বক্তব্য কাকে উৎসাহিত করছে?

০৪ ঠা মে, ২০১৬ রাত ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক শহীদুল হক আবারও বুধবার একই কথা বললেন। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, যারা নাকি পুলিশের কোনো ‘অর্জন’ দেখতে পায় না, তাদের জন্যই আনুষ্ঠানিকভাবে ৩ মে দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। যদিও অনেক প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পুলিশপ্রধান সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন।

ঘরে ঘরে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়- বলে পুলিশের আইজি এর আগেও বলেছিলেন। বুধবার আবারও বললেন, "অনেকেই ঝুঁকির মধ্যে আছেন, তবে ব্যক্তিপর্যায়ে সবাইকে আলাদাভাবে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়।'

আপাত দৃষ্টিতে কথাটি খুব সরল ও নিজেদের সীমাবদ্ধতা প্রকাশের ভদ্রস্থ একটি পন্থা। কিন্তু, পুলিশ তথা অভ্যরন্তীন শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষকারী শীর্ষ বাহিনীর প্রধানের এই ধরনের বক্তব্য কি গ্রহণযোগ্য?

দেশের সোয়া লাখ পুলিশের কাছে ষোল কোটি মানুষ সবাই যদি নিরাপত্তা চায় তবে তা তো সম্ভব নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- এভাবে কথাটি বলার মধ্য দিয়ে আইজি সাহেব কাদের উৎসাহিত করছেন তা কি ভেবে দেখেছেন?

একদিকে চলছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া। অপরদিকে অসাম্প্রদায়িক ব্লগার ও মুক্তচিন্তার মানুষরা ধারাবাহিকভাবে হত্যার শিকার হচ্ছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত কয়েকদিন আগে বলেছেন, মুক্তচিন্তার নামে ধর্ম অবমাননা মেনে নেওয়া হবে না। এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও ব্লগারদের লেখালেখিতে সংযত হতে বলেছিলেন।

সামগ্রিক এই প্রেক্ষাপটে পুলিশ প্রধানের এই বক্তব্য কি আমাদের স্বস্তির বদলে আতঙ্কিত করে না?

২০১৩ সালে শাহবাগ স্কোয়ারে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী তথা মানবতা বিরোধী অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই ব্লগার তথা মুক্তমনাদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েছে। খুন হওয়ার পর তদন্ত-বিচার চলছে। কিন্তু, যারা ঝুঁকির মধ্যে আছেন তাদের নিরাপত্তার তো সক্রিয় ব্যবস্থা করা হয়নি। উল্টো পুলিশের প্রধান ঘটা করে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, "ব্যক্তিপর্যায়ে সবাইকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়।" (দৈনিক প্রথমআলো'র অনলাইন সংস্করণ, ৩ মে বিকেল ১৭:৪৬ মিনিটে প্রকাশিত নিউজ অনুসারে)

জনাব আইজি সাহেব, আপনার কথা মেনে নিচ্ছি, ব্যক্তি পর্যায়ে হয়তো সবাইকে নিরাপত্তা দেওয়া বাংলাদেশ কেন, বিশ্বের কোনো দেশেই সম্ভব নয়। কিন্তু আসলে কি ব্যক্তি পর্যায়ে সবাই নিরাপত্তা কামনা করেন? নিশ্চয়ই করেন না। যাদের প্রয়োজন তাদেরই নিরাপত্তা প্রয়োজন। পুলিশের প্রধান হিসেবে সরাসরি আপনার জানা না থাকলেও আপনার বিভাগের গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে নিশ্চয়ই কাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন তার একটি তালিকা আছে। আমি সরকারের ভিভিআইপি বা ভিআইপি সহ প্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্বদের কথা বলছি না। যাদের নিরাপত্তা আপনারা দিচ্ছেন না, বা দেওয়া সম্ভব নয়- সে কথা অত জোর গলার বলছেন কেন?

পুলিশের দেওয়া একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে ২টি, ২০১৫ সালে ২৬টি এবং চলতি ২০১৬ সালের বছরের প্রথম চার মাসে ৯টি। সবমিলিয়ে ৩৭টি মামলায় একটির বিচার শেষ হয়েছে। পুলিশ অভিযোগপত্র দিয়েছে ছয়টি ঘটনার। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৪৪ জন। এদের মধ্যে ৪৯ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আইজি এদিন বলেন, "বাংলাদেশ জঙ্গি দমনে সারা বিশ্বের কাছে রোল মডেল।" এরপর সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্নে করেন, ধারাবাহিকভাবে হামলার ঘটনা বাড়ছে কেন, পুলিশ আগাম তথ্য পাচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আইজি বলেন, ‘এদেশের ঘরে ঘরে যদি জঙ্গি তৈরি হয়...। পুলিশ তৎপর আছে বলে সেভাবে জঙ্গিরা ঘটনা ঘটাতে পারছে না। ঘরে ঘরে অভিযান চলছে। তাই সংখ্যা আর বাড়েনি।’

আইজি আরও বলেছেন, "আগাম তথ্যের কারণে জঙ্গি হামলার ঘটনা কম ঘটেছে। না হলে ঘটনা অন্য রকম হতে পারত।" এখন প্রশ্ন আগাম তথ্য পেলে তাদের ধরছেন না কেন। কেন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না?

একদিকে জঙ্গি হামলা বাড়ছে। নিজ বাড়িতে খুন হচ্ছে মুক্তচিন্তার ব্লগার, লেখক, বা মানবাধিকার কর্মীরা। অন্যদিকে পুলিশের প্রধান বলছেন, ঘরে ঘরে সবাইকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। জঙ্গি হামলার হুমকি বাড়ছে, কিন্তু নিরাপত্তা সম্ভব নয়- এই দুইটি ঘটনা কিসের ইঙ্গি দেয়? এটা কি সেই গোষ্ঠীকে আরও সক্রিয় হতে ইঙ্গিত দেয় না? যারা মুক্তমনা, অসাম্প্রদায়িক ব্লগারদের খুন করছে- তারা তো এই ঘোষণায় আরও উদ্বুদ্ধ হবে বলে মনে না করার কোনো কারণ নেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে একটি ঘোষণা দিয়ে ওই গোষ্ঠীকে দেশকে অস্থিতিশীল করার সুযোগ করে দিয়ে আরও প্রাণহানী বাড়ানোর দিকে কি ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে না?

এখন তো মনে হচ্ছে, ধর্ম নিয়ে শুধু মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোই রাজনীতি করে না। এর সঙ্গে মূলধারার দলগুলোও ধর্ম নিয়ে সুক্ষ্ণ রাজনীতি করে। সবার এই মিলিতভাবে ধর্মকে পুজি করে রাজনীতি দেশকে এক অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে মনে হচ্ছে।

পুলিশের আইজি'র এই ধরনের বক্তব্য সংশোধনের দাবি জানাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ রাত ২:২১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×