somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিসর্গ

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা পুকুর। পাশে আরেকটা পুকুর। দুই পুকুরের মাঝে ভীষণ মিতালী।
সেবারের গ্রীষ্মে, এক পুকুর মরতে বসল। ভীষণ রৌদ্রতাপে হু হু করে উড়ে গেল যত প্রাণজল। আরেক পুকুরের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল মস্ত এক বটবৃক্ষ। সূর্যের যত তাপ-প্রতাপ এই বিটপী'র গায়ে ধাক্কা লেগে ছায়া হয়ে পড়ত পুকুর কায়ায়। মুমূর্ষ পুকুর তখন মৃদু হাসিতে যেটুকু জল অবশিষ্ট আছে সেগুলো দিয়ে গা ধুইয়ে দিত মৎস্য-সন্তানগুলোকে। মৃতপ্রায় পুকুর দেখে যখন ছলাৎ ছলাৎ শব্দে কান্না জূড়ত পাশের পুকুরটা তখন সে বলত, "কী রে সখা, কাঁদিস না তো। গ্রীষ্মের আর আছেই বা ক'দিন বল? দেখ বর্ষা আসছে...জল নিয়ে আর ভাবনা কী?"
প্রকৃতির কী লীলাখেলা, সেবার গাঁয়ে অনাবৃষ্টি হানা দিল। দিনের পর দিন কাটতে লাগল, বৃষ্টি যেন জেদ ধরেছে, নামবেনা আর। প্রাণদীপ্ত পুকুরটারও শুকানো শুরু হল জল। বটবৃক্ষ মুষড়ে পড়েছে, পত্রপল্লব আঁকড়ে ধরেছে বাদামী রঙ্-এর মৃত্যু। নিজের জন্য কাঁদেনা এ পুকুর, নিজেকে নিয়ে কখনো ভাবেনা। যত চিন্তা ঐ পাশের পুকুরের জন্য- ওর কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না বেশ ক'দিন ধরে। আচ্ছা, ও কী মরে গেছে? নিজের যত জল সব কেন জানি অসহ্য লাগা শুরু করল সেদিন থেকে, ইচ্ছা হল যত জল সব দিয়ে মৃত পুকুরটাকে বাঁচাতে। কিন্তু এ জল যে দেওয়া যায় না! মর্ত্যের নিয়ম বড় নিষ্ঠুর, এখানে একের প্রাণ অপরকে দেওয়ার কোন উপায় নেই। তারপর থেকে শুরু হল পুকুরের আর্তনাদ। কী ভয়ানক সেই আর্তনাদ। বন্ধুকে বাঁচানোর আকুতি রূপ নিল নিজের মরণ-বাসনায়। মৃত্যুর জন্য এ ভয়ানক আর্তনাদ মেঘদেবতা দেখেনি আগে। মন তার ভারী হয়ে উঠল। আহাজারী তবু থামেনা পুকুরের। মেঘের মন আর আবেগ রুখতে পারলনা বলে- পুকুরের দুঃখ সংক্রামিত হল দখিন গগন জুড়ে। কাল হয়ে গেল মেঘমালা। তারপর কী ভীষণ কান্না। এ কান্না চলতেই থাকল নিরন্তর। পুকুরে টুপটাপ শব্দ দিয়ে নেমে এল জল। রুমঝুম- ঝুমঝুম বৃষ্টিধারা ঝরে গেল অবিরাম। প্রাণ ফিরে পেল মৃত পুকুর। জল বেড়েই চলল দুই পুকুরের।
তখন অদ্ভুত এক স্বপ্নে সয়লাব হয়ে গেছে ওদের পৃথিবী- এ পানি বাড়তে বাড়তে কী মিলিয়ে দিবে ওদের? কী অবাস্তব, কী সুন্দর স্বপ্ন! কিন্তু স্বপ্ন নয়, বাস্তবতায় বেড়েই চলল পানি। হঠাৎ দুই পুকুর যেন দেখতে পেল একজন আরেকজনকে। ঐ যে কিনার ঘেঁষে উপচে পড়ল জলরাশি। দু'পুকুরের মধ্যখানের ভূমিতট'টা হঠাৎ অদৃশ্য হওয়া শুরু করল- জলে ঢেকে গেল মাটি। লজ্জায় সরে যেতে চাইল পুকুরযুগল। কিন্তু না, অদৃশ্য কিছু একটা ওদেরকে ঠেলে দিচ্ছে পরস্পরের দিকে। চোখ বুজে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা। হঠাৎ দুজন'ই শিউরে উঠল এক অন্য ধরনের শীতলতায়। কী অদ্ভুত! কী অলীক! সময় যেন আটকে গেছে কোথাও। সবকিছু কেমন স্তব্ধ হয়ে আছে। এক, দুই,তিন- হঠাৎ ঝাপটা দিয়ে সম্বিত ফিরল পুকুরদ্বয়ের। তখন তারা মগ্ন গভীর আলিঙ্গনে, মিশে যাচ্ছে একে অপরের সাথে। ভীষণভাবে জড়িয়ে, গভীর থেকে গভীরে- কী আকুলতা, কী সুখ! এটাকেই জীবন বলে? বটবৃক্ষ জানেনা, জানানোর মত আরেকটা বটবৃক্ষও দাঁড়িয়ে নেই তার পাশে। তবুও সে সুখী। তার অধর ছুঁয়ে মিশে গেছে দু'টা পুকুর, এক হয়ে গেছে দুটো সত্ত্বা। ওদের আলিঙ্গনের সুখ ছড়িয়ে পড়েছে বটের অধরে। বাদামী রঙ ধুয়ে যাচ্ছে দ্রুত- স্পষ্টতই সবুজ-কোমল পত্রপল্লব গজানোর ইঙ্গিত। নতুন দাঁত গজানোর মত ব্যাথা করছে শরীরের এদিক ওদিক। আহা! সুখে টইটুম্বুর যাপিত জীবনের প্রতিটা রন্ধ্র, যেগুলো দিয়ে মুখ উঁচিয়ে দেখা দিত ছাইপাশ যত দুঃখ।

বিঃদ্রঃ দু'টো পুকুরেরই তাই একসাথে জল শুকিয়ে গেলে চলবেনা। একজনের ঠিকঠাকমত থাকতে হয়- বৃষ্টি নামানোর জন্য, আরেকজনকে বাঁচানোর জন্য.. স্বপ্নসাধনের জন্য। সুখ অনেক সহজবোধ্য হলেও সহজগম্য নয়।।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:১৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×