আমাদের দেশে অনেকে ডাক্তারি পরে শুধু পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে পারেনা বলে! পরিবার চায় সন্তান ডাক্তার হোক। প্রকৌশল বিদ্যার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। খুব কম শিক্ষার্থী ভালোবেসে স্বেচ্ছায় পড়তে আসে।
যেমনটি ইংরেজি সাহিত্যের বেলায়, তেমনটি বিবিএর মেলায়। বিবিএ না জেনেই বিবিএ পড়তে আসে। সমস্যা আবার অন্যদিকে। আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা এতোটাই নাজুক যে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিলে নিম্ন মধ্যবিত্ত দের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয়না শুধু আর্থিক অনটনের কারনে।
বাকি রইলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। যা কচ্ছপের মাসতুতো ভাই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট থেকে সেশন জট, আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির অপ্রতুল চাহিদা! সমস্যার শেষ নেই।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন যথেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও, নেই শিক্ষার অনুকুল পরিবেশ। উচ্চ শিক্ষা আমাদের প্রতিবারই একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেটির ফল আমরা দেখতে পাই আমাদের শিক্ষার গঠনে। কয়েকটি কলেজ বাদ দিলে সবারই একই সমস্যা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয় গুলোর দিকে একটু লক্ষ্য করুন। সবই অতিসাধারন। ভিন্ন কোনো বিষয়ে যেমন ধরুন – সাংবাদিকতা, নাট্যকলা, সঙ্গীত, মিডিয়া স্টাডিজ পড়ানো হয়না। যার ফলে শিক্ষার্থীর আগ্রহ থাকলেও পড়ার সুযোগ পায়না। যার কারনে পিছিয়ে পড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন কলেজগুলো!
আমাদের দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাবধ্যান টা অসীম। ব্যয়ের ফল টা দেখুন। যেখানে মাসে গড়ে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা প্রদান করে ১৫ টাকা সেখানে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীর পকেট থেকে গড়ে বের হয় ৮৭৭৫ টাকা। ফলে নিম্ন মধ্যবিত্তের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন টা এক গণ্ডির ভিতরেই থাকে।
ধরুন একজন শিক্ষার্থী টেক্সটাইল, সাংবাদিকতা অথবা স্থাপত্য বিদ্যায় পড়তে চায় কিন্তু কোনো সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলোনা। তখন তার একমাত্র সুযোগটা থাকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কারন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে পড়ানো হয়না। অন্যদিকে চিকিৎসা বিদ্যায় নজর দিন। সরকারী মেডিকেলে সুযোগ না পেলে বেসরকারি মেডিকেলে সুযোগ।
ওদিকে যাবেন! গড়ে খরচ ২০ লাখ টাকা।
পড়াশোনার জন্য নিজের ঘর ভিটা বন্ধক রাখবে? নাকি না খেয়ে মরবে নাকি কিডনি বিক্রি করবে! কারণটি কি! একমাত্র কারন সুযোগ আছে কিন্তু পকেট ফাঁকা।
আমাদের উচ্চ শিক্ষায় স্নাতকোত্তর পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কটি বিষয়ে পড়ানো হয়? বেশী হলে ১৫ টি। এর চেয়ে বেশী হবেনা। শিক্ষক সংকট তো এ পর্যায়ে উল্লেখ না করার মতোই। ফলে অনেকাংশেই পড়লেও ভরসা করতে হয় আগের শিক্ষার উপর।
সমাধানটি তাহলে কি! সমস্যা আমরাই তৈরি করতে পারি খুব সহজে। উচ্চ শিক্ষায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গুলো যদি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন রাখা যায়। যেটি প্রক্রিয়াধীন আছে।
এখানে একটি ব্যাপার আপনি যদি ঢাকা কলেজ কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন করেন আর গেণ্ডারিয়া কলেজকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় রাখেন কখনোই সুফল পাবেন না। কারন গেণ্ডারিয়া কলেজ আর ঢাকা কলেজ কি এক হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর জগন্নাথ কি এক হলো! করতে হবে উল্টো টি গেণ্ডারিয়া যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন। এতে করে শিক্ষক অপ্রতুলতা দূরের পাশাপাশি সম্যক ধারনাটা দূর হবে।
অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন এবং যুগ সম্মত বিভাগ খুলতে হবে। যাতে নিম্নবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীরা পড়ার সুযোগ পায়। সুযোগ টা আমরা তখন হাতের ফলে দেখতে পারবো।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ভার অত্যধিক। যেটি মধ্যবিত্তের কাঠামোতেও বেশী। অন্যদিকে এবার যুক্ত হয়েছে সাড়ে ৭ ভাগ ভ্যাটের বোঝা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ের কারণটি হলো উন্নত সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন বলে। অন্যদিকে সরকারের ভ্যাটের ফল। যার ফলে ব্যায় বাড়ে বহু গুনে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী যে পরিমাণ ভ্যাটের টাকা বহন করে সে পরিমাণ অর্থ প্রদান করে ৪ জন সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে।
ব্যায় না কমলে এই প্রতিষ্ঠান গুলো নিম্ন মধ্যবিত্তদের কাছে দুরাশা। আর ব্যায় কমার আশাও করাও গুঁড়েবালি। সরকার শুধু পারবে ভ্যাট বসিয়ে ব্যায় বাড়াতে। আর মালিক রাতো না বললেই নয়।
উচ্চ শিক্ষার গঠন টা আমরাই জটিল করেছি। সুনিয়ন্ত্রিত গঠন টা আমরা ভেঙ্গে ফেলেছি। যার ফলে দেখা দিয়েছে আমাদের শিক্ষার মান নিয়ে টানপোড়েন।
উচ্চ শিক্ষার সুযোগ টা হাতের নাগালে কজন শিক্ষার্থী পায়। আমাদের চাহিদার তুলনায় যোগান খুবই নগণ্য। অথচ নগণ্য কেও আমরা চাইলে হাতের নাগালে আনতে পারি।
সুদিনের প্রত্যাশায় রইলাম !!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৫