মন পাবি, দেহ পাবি, ভ্যাট পাবিনা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনে একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা। তাতেই কিছু থার্ড ক্লাস লোকের শুরু হলো চুলকানি! কারণটি কি জানেন? কারন মানুষটি মেয়ে! কারন মানুষটি একজন নারী। একজন পুরুষ বা একজন ছেলে ওই প্ল্যাকার্ড টি যদি ধরতো,ছবি তুলতো তাহলে কিচ্ছুই হতো না! কারন সে ছেলে সে সব কিছুই করতে পারে। তার মনে ভ্যাট দিতে একটু হলেও দুঃখ লাগে। সে বাবার টাকা দিতে একবারের জন্য হলেও হাত কাঁপে। সে মজা করতে পারে। সে আন্দোলন করতে পারে। সে তার অধিকার আদায় করতে পারে। কিন্তু একজন মেয়ে যখন প্ল্যাকার্ড ওই প্ল্যাকার্ড টি ধরবে তখন শুনবে বেহায়া, বেশরম, বেশ্যা, পতিতা!
এগুলো খুব সহজবোধ্য তাই বললাম। যেগুলো দেখেছি তা প্রকাশ করতে পারবোনা। দুঃখ জনক হলেও সত্য প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ও এই মন্তব্য গুলো করেছেন। প্রচণ্ড হতাশ হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সারা দেশ থেকে মাত্র কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রতি বছর পড়ার সুযোগ পায়। সেই ছাত্ররা এদেশের সম্পদ। তাঁদের কয়েকজনের কাছ থেকে যখন এই মন্তব্য গুলো পাওয়া যায় তখন জাতি হিসেবে আমরা কোথায় যাচ্ছি প্রশ্নটা এখনি করা উচিৎ।
তবে আশার কথা হলো গুটি কয়েক ছাত্র এটি করেছে। সংখ্যাটি নগণ্য।
প্রতিটি মানুষ আপন পরিবার থেকে কিছু শিক্ষা পায়। যেটি তার সারাজীবনের চলার পাথেয় হয়ে দাঁড়ায়। সেটি একজন মানুষ কে সন্মান করা। খুব কম লোকই কাজটি করতে পারে। যে পারেনা সে নিজেও কখনো সন্মান পাবেনা এটি জোর দিয়ে বলতে পারি। কিছু মানুষের পৃথিবীতে জন্ম হয় হয়তো মানুষের খুঁত ধরার জন্য। সেটি তার পরিবার অথবা পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে শেখা। আমরা অনেকে নারীকে শুধু ভোগ্য পণ্যই মনে করি। একজন নারীর ও শখ থাকতে পারে, আনন্দ, মজা করার অধিকার আছে। সে কি জন্ম নিয়েছে শুধু ঘরের কোনে গুমরে মরে থাকতে? আপনি যদি তাই ভাবেন আপনার কাছ থেকে এ ধরনের মন্তব্য আশা করা যায়।
টিএসসি তে নববর্ষে নারী নিপীড়নের কথা এখনো ভুলিনি। হয়তো কখনোই ভুলবো না। অনেকে বলেছেন “নারীর দোষ নারী শাড়ি পরে বাইরে ঘুরছে কেনো”! বখাটেরা ঠিক কাজটি করেছে। হা হা কথাটি শোনার পর কতক্ষণ প্রচণ্ড মানসিক কষ্টে হাসি পেয়েছিলো। ভেবেছিলাম এরা মুক্তির দেশের নাগরিক
মুক্তিযুদ্ধে দেড় কোটি নারীর সম্ভ্রমহানি হয়েছে। তার পর দেশটি স্বাধীন হয়েছে। যে দেশটির স্বাধীনের পিছনে রয়েছে কোটি নারীর নিজের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হারানোর গল্প সেই দেশে আমরা একজন নারীকে সন্মান দিতে কার্পণ্য করি! আজো দেশে বীরঙ্গনারা নীরবে নিভৃতে ধুঁকে ধুঁকে মরে। নিজেকে প্রচণ্ড অপরাধী মনে হয়। একজন নারী শুধু একজন স্ত্রী লিঙ্গ নন। একজন মানুষ।
আচ্ছা ছবিটি প্রসঙ্গে আসি। যে নারীটি এখানে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছে তিনি এসেছেন তাঁর অধিকার আদায়ের জন্য। একজন মানুষ কতোটুকু অপারগ হলে কথাটি লিখতে পারেন তা একটু মাথা খাটিয়ে চিন্তা করুন। আশা করি মাথা মোটা না হলে বুঝতে পারবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৪