somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতন ও পাশবিকতা ( পর্ব ১ )

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। কিন্তু এই প্রাপ্তির পিছনে লুকিয়ে আছে দীর্ঘ ত্যাগের মুহূর্ত। ৪ লক্ষ নারীর সম্ভ্রম , হারানোর বেদনা, ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ, এক কোটি শরণার্থীর দেশ ত্যাগের গল্প।

আজ থেকে চেষ্টা করবো মুক্তিযুদ্ধে এদেশীয় পাক দোসর ও পাক সেনাদের নির্যাতনের করুন ইতিহাস তুলে ধরতে।


একাত্তরের পঁচিশে মার্চের ঢাকায় কর্মরত এক বাঙালি পুলিশ ইনসপেক্টর জনাব সালেহ!
তিনি ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী!

তাঁর মুখ থেকে শোনা যাক,

তিনি এক প্লাটুন ফোর্স সহ ছিলেন মিরপুর এক নম্বরে!

সেদিন সন্ধ্যা থেকে সবার মধ্যেই ছিলো থমথমে ভাব। রাত্রি এগারোটার দিকে তাঁর ওয়ারলেস সেট সক্রিয় হয়ে উঠে! অজানা কোনো এক স্টেশন থেকে একজন বাঙালি সৈনিকের কন্ঠ শুনতে পান তিনি!

ঐ সৈনিক জানান, ঢাকা সেনানিবাস থেকে মেশিনগান সজ্জিত সাজোয়া যান সহ সৈন্য রা রাজধানী তে প্রবেশ করছে!

বাঙালি সিপাহীরা তোমারা সাবধান হও! পুলিশ রুম থেকে মেসেজ দেওয়া হয় "পুলিশ ডিউটি উইথড্রন"!

এর কিছুক্ষণ পরেই চারদিক থেকে মানুষের আর্তনাদ, গোলাগুলির শব্দ, আগুনের লেলিহান শিখা, মেশিনগান আর কামানের আকাশ ফাটা শব্দে সমস্ত শহর ভারি হয়ে উঠে!

এই সময় তিনি শুনতে পান একজন পাক সৈন্য বলছে "বাঙালি সালা লোক, আভি আকার দেখো, তোমরা কেতনা হামরা পাস!

একথা শোনার পরেই তিনি থানা ছেড়ে আত্ম গোপন করেন!

25শে মার্চে রাতে তরুণী দের ধরে এনে জীবন্ত অবস্থায় স্তন কেটে আলাদা করা হয়েছে!
উপুড় করে শুইয়ে পাছার মাংশ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে!
যে সমস্ত মহিলা রা আত্ম রক্ষার জন্য জোরাজুরি করে তাদের কয়েকজন কে জোর করে রাস্তায় চিৎ করে শুইয়ে দুদিকে পা টেনে ধরে যোনিপথে লোহার রড ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়!
কারো কারো হাত পিছনে বেঁধে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারা হয়!

মায়েদের কোল থেকে শিশুদের কেড়ে নিয়ে টেনে হেঁচড়ে ছুড়ে মেরে চোখের সামনে দ্বি খন্ডিত করা হয়!
সেই নির্মম মুহূর্তে বাঙালি যারা প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছে তখন বিহারিরা অধিক উল্লাসে হাসিতে তাদের নির্মমতা দ্বিগুন করেছে!

সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে জানা যায় "একটি বাড়ি থেকে পিতা, মাতা, পুত্র, কন্যা সবাইকে ধরে আনা হয়!
তারপর সবাইকে সবার সামনে কাপড় খুলতে বলা হয়! এতে তারা আপত্তি জানালে তাদের পরনের কাপড় খোলা হয়! এবং ছেলেকে মায়ের সাথে, মেয়েকে পিতার সাথে ধর্ষণে লিপ্ত করা হয়!

তারা অস্বীকৃতি জানালে সবার সামনে পিতাকে এবং পুত্র কে টুকরো টুকরো করে কেটে মা এবং মেয়ে দুজনের চুলের সাথে উলঙ্গ অবস্থায় বেঁধে বিহারীরা ধরে নিয়ে যায়!


( 26শে মার্চ)

26শে মার্চ সকাল থেকেই বুড়িগঙ্গার তীরে যতোদূর চোখ যায় শুধুই লাশ! রাস্তা ঘাটে পড়ে আছে যত্রতত্র শিশু, কিশোর, যুবক, যুবতী, বৃদ্ধ নানা বয়সের সারি সারি বিকৃত লাশ!
একই স্থানে দেখা যাচ্ছিলো মেয়েদের উলঙ্গ অবস্থায় লাশের স্রোত!

এমন ও চোখে পড়েছে, "যাদের স্তন, যোনিপথ, উরু প্রভৃতি স্থান ছিন্ন ভিন্ন!
বর্বর পশুরা হত্যা করার আগে কুরেকুরে খেয়েছে! যথেচ্ছ ভাবে ধর্ষণ করে গুলিতে ঝাঁঝরা করেছে!

লক্ষীবাজার মোড়ে এমন অনেক যুবকের লাশ পড়েছিলো যাদের বুক চিড়ে হৃদপিন্ড বের করে পায়ের গিট আর হাতের কবজি ভাঙা!

মিশনারী স্কুল, জজ কোর্ট, পোগোজ হাইস্কুল, ঠাটারি বাজার, গোপিবাগ নয়াবাজার, তাহেরবাগ, টিপু সুলতান রোড, গুলিসতান প্রভৃতি স্থানে শুধুই মৃতদেহ!

রায়সাহেব বাজার ব্রিজ পার হয়ে দেখেন উৎসব মুখর বিহারীদের! সেকি বিভৎস নৃত্য, লাফালাফি!
কয়েকজন বাঙালি কে ধরে এনেছে এরা! যাদের পিছন থেকে হাত বাঁধা! কারো শরীরে কোনো কাপড় নেই! এদেরকে কেউ চড় মারছে কেউ লাথি মারছে!

একজনের পুরুষাঙ্গে ইট বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে!
দাঁড়িয়ে থাকা একজনে বুকে হঠাৎই ছোরা বসালো একজন!

রাজারবাগ পুলিশ লাইনে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে স্কুল কলেজের মেয়েদের ধরে আনতো তারা!
ট্রাকে তুলে এনে পছন্দ মত মেয়েদের টেনে হিঁচড়ে নামাতো! প্রকাশ্যে এদের পোশাক খুলে গাছের আড়ালে, দেয়ালের পাশে ধর্ষণ করতো!
ধর্ষণ করার পরে হেড কোয়ার্টারের চার তলায় নিয়ে উলঙ্গ অবস্থায় লোহার রডের সাথে চুল শক্ত করে বেঁধে পুনরায় শুরু করতো নির্যাতন!

পাকিরা প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ছেলেদের ধরে আনতো! কারো পুরুষাঙ্গ কেটে ফেল হতো, কারো মুখে গরম পানি ঢালা হতো!
কারো হাত পায়ে গিট মেরে গুড়িয়ে ফেলা হতো!


পরাদেশী নামে একজন ডোম ঐদিন শাঁখারী পট্টি র এক বাড়িতে যান। ঐ বাড়ি থেকে অপরূপ সুন্দরী একটি মেয়ের লাশ তুলে আনেন! মেয়েটির স্তন ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে! যৌনাঙ্গ সম্পূর্ণ রূপে থেতলানো!
মুখ বাহু উরুতে জমাট বাঁধা রক্ত! সমস্ত শরীরে কামড়ের চিহ্ন!

তিনি আরো বলেন, আরমানিটোলার এক বাড়িতে দশ এগারো বছরের এক ফুটফুটে মেয়ের কথা! মেয়েটির সম্পূর্ণ শরীর ক্ষতবিক্ষত! নরপশুরা মেয়েটিকে ধর্ষণ শেষে দুদিক থেকে পা ধরে নাভি পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলেছে!



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খবর আসে, এক মেজরের কাছে! মৃত মানুষের গন্ধে থাকা যাচ্ছেনা! অবিলম্বে লাশ তুলে ফেলা হোক!
এ পর্যন্ত তারা শুধু শহরেই লাশ তোলার কাজ করে যাচ্ছিলো!

এ সংবাদ পাওয়ার পর চুন্নু, পরদেশী, রনজিৎ, মধুরাম, দুখিরাম সহ আরো কয়েকজন ডোম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়! প্রথমে তারা রোকেয়া হলে প্রবেশ করে!
কিন্তু হলের কোনো কক্ষেই লাশ ছিলোনা! কেননা 25শে মার্চ রাতেই হলে অবস্থান রত ছাত্রীদের পাকিরা তুলে নিয়ে যায়!

তিনি বলেন, এসময় তারা হলের চারতলার ছাদে গিয়ে দেখতে পান সেখানে অনেকগুলো ছাত্রীর লাশ ছড়ানো ছিটানো! তাদের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই! অথচ এরা মরলো কিভাবে?
এই প্রশ্নের জবাবে এক সৈন্য বলে, এদেরকে আমরা উপভোগ করেছি! তারপর যৌনাঙ্গে বেয়নেট ঢুকিয়ে হত্যা করেছি!

এদের কারো পরনে কোনো কাপড় ছিলোনা! তাদের আশেপাশে দুএকটা সেলোয়ার কামিজ ছিলো!

পাকিরা রাজাকারের সহায়তায় রাজধানী র বিভিন্ন কলোনি এবং উচ্চবিত্ত এলাকা থেকে মেয়েদের তুলে আনতো!

রাবেয়া খাতুন কাজ করতেন রাজারবাগ ক্যান্টিনে! তিনি বলেন, একদিন কর্মরত অবস্থায় দেখতে পান ট্রাকে এবং জিপে করে প্রায় পঞ্চাশ জন মেয়েকে আনা হয়েছে! এদেরকে একটি কক্ষে রাখা হলো! প্রায় প্রত্যেকের হাতে বই খাতা ছিলো!


একদল সেনা কুকুরের মতো হিংস্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়লো তাদের উপর! প্রথমে জানোয়ার গুলো সমস্ত মেয়েদের পরনের কাপড় খুলে উলঙ্গ অবস্থায় সবাইকে মাটিতে শুয়ে পড়তে নির্দেশ দিলো! নির্দেশ অমান্য করলে লাথি মেরে ফেলে ধর্ষণ করেছিলো!
তিনি বলেন প্রতিটি মেয়ের শরীর থেকে রক্ত ঝরছিলো! যোনিপথে বেয়নেট ঢুকিয়ে তাদের হত্যা করা হয়!

** যশোর **

যশোর সেনানিবাসের পাশের মনোহরপুর গ্রামে আমির হোসেন মুক্তিযোদ্ধা দের তথ্য সরবরাহের কাজ করতেন!
আমির হোসেন জানান, যশোর সিএমএইচ এর নার্সিং স্টাফ হাবিলদার আবদুল খালেক এবং তার সঙ্গী জহর আলী, অন্য একজন সুবেদার এসআই রুমে ঔষধ আনতে যাওয়ার পথে দোকানের নিকটবর্তী এলাকায় সেনারা তাকে হত্যা করে! তারা সেনানিবাস মসজিদের ইমামকেও হত্যা করে!

স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে সমস্ত বরিশাল জেলায় তান্ডবলীলা চালায় হানাদাররা!
পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, ভোলা তথা বৃহত্তর বরিশালে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায় পাকিরা! বরিশালে র বিভিন্ন মাদ্রাসায় ক্যাম্প করে পাকিরা!

শর্ষীনা পীরের মাজারে পাকিরা ক্যাম্প করে! স্বরূপকাঠিতে তারা ভাগিরানি ও মন্টু নামের দুই ভাইকে মুক্তি মনে করে জিপের পিছনে বেঁধে সমস্ত শহর ঘুরায়! যতোক্ষণ না তাঁদের মৃত্যু হয়!


( চলবে )
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×