পুকুর চুরি, সাগর চুরি, চটকদার শব্দগুলো ব্যবহার করে আজকাল অনেকেই বেশ পুলক অনুভব করেন। কিন্তু বাস্তবে কি হয়? আমরা যারা মাঝরাতে টিভি টকশো তে কথা বলে বাহবা কুড়াই, রাজনীতির মাঠে-ময়দানে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে মানুষের করতালির বন্যা বয়ে দিই, অথবা যারা পত্রিকায় কলাম লিখে দেশোদ্ধার করেন, তারা সবাই কি একেবারে ধোয়া তুলসী পাতা? মোটেই না। হ্যা, আপনি ঠিকই ধরেছেন, আমি দেশের দুর্নীতির কথাই বলছি। আমরা যারা সাধারণ আম পাবলিক, দুর্নীতির কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলি, তারাও কি দুর্নীতির ছোট্ট চারা গাছটির গোঁড়ায় জল-সার দিয়ে সেটাকে মহীরুহে পরিণত করতে কম যাই?
চায়ের আড্ডায় অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলি, তখন কিন্তু আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক একজন চির বিদ্রোহী! কিন্তু সেই আমরাই ব্যক্তিগত ভাবে সুযোগ পেলে, সুবিধা টা যখন নিজের দিকে যায় তখন কত সহজে সবকিছু হজম করে ফেলি! আমি যখন সুযোগের অভাবে সৎ তখন আমি আসলে কতটা সৎ? যার ক্ষমতা যত বেশি তার দুর্নীতির সাইজটাও ততো বড়! একজন সিএনজি বাইক চালক সুযোগ পেলেই কয়েক গুন বেশি ভাড়া নিতে কসুর করে না, তেমনি ভাবে একজন বাস কন্ডাক্টরকেও সুযোগ বুঝে যাত্রীসাধারণকে বেকায়দায় ফেলে ৫-৭ গুন পর্যন্ত ভাড়া আদায় করতে দেখতে পারেন যদি আপনার কপাল মন্দ হয়। এগুলো কি কম বড় দুর্নীতি? এঁদের হাতে যদি বড় ক্ষমতা দেওয়া যেত তাহলে বুঝতে পারা যেত কত গমে কত আটা!
বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ একজন সফল চিকিৎসক এবং অত্যন্ত ভালো মানুষ। উনি বর্তমান দায়িত্ব পাওয়ার আগে রোগী দেখে মাত্র তিন শো টাকা ফি নিতেন। অথচ অনেক লোককে আমি নিজ চোখে দেখেছি উনার রোগীর সিরিয়াল যিনি লেখেন তাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে ২০০/১০০ টাকা দিয়ে সিরিয়াল ছাড়া আগে রোগী দেখিয়ে চলে যেতে! বেশ কয়েকবার দেখতে হয়েছে এমন ঘটনা! এটা ছোট্ট একটা উদাহরণ মাত্র, আমরা প্রত্যেকে এরকম স্রহস্য উদাহরণের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হচ্ছি সর্বত্র সর্বক্ষণ! এসব ক্ষেত্রে কেউ কিন্তু আমাদের বাধ্য করে না, আমরা স্বেচ্ছায় স্বপ্রনোদিত হয়ে ছোট থেকে বড় দুর্নীতি গুলো করছি। এসব দুর্নীতি দুর্নীতির মিছিল কে বড় থেকে আরো বৃহত্তর করেছে। এরকম আরো অসংখ্য দুর্নীতির উদাহরণ আপনার প্রত্যেকেই দিতে পারবেন।
কারা বেশি দুর্নীতি করে? কারা বেশি ঘুষ খায়? এভাবে যদি প্রশ্ন তাহলে অনেকেই হয়তো সমস্বরে চিৎকার করে বলবেন পুলিশ! পুলিশ! ঘুষ চাওয়া, নেওয়া, খাওয়া অবশ্যই অপরাধ। আচ্ছা ঘুষ দেওয়া কি অপরাধ নয়? এই প্রশ্নটা কিন্তু আমরা সাধারণত করি না। আমাদের সমাজে শতকরা এমন কত ভাগ লোক আছেন যারা তাদের কোনো সন্তান অথবা আত্মীয় পরিজন দোষে কিম্বা বিনাদোষে গ্রেফতার হলে ঘুষ দিয়ে ছাড়াবার চেষ্টা করেন না? এগুলো কি অপরাধ নয়? অথচ এগুলো কিন্তু আমরা বেমালুম চেপে যাই! আবার অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে আমরা বাধ্য হই ঘুস দিতে, না দিয়ে অন্য কোনো উপায় ও থাকেনা।
যারা দুর্নীতিগ্রস্থ তারা কিন্তু অন্য কোনো গ্রহ থেকে আসে না, আসে না অন্য কোনো দেশ থেকেও। তারা আমাদেরই দেশের লোক। আমাদের পিতা, সন্তান, ভাই, বোন, মা, মামা, চাচা, খালা, খালু, ফুপা, ফুপু। আমাদেরই আত্মীয় স্বজন।আমরা কি কখনো তাদেরকে বলি এগুলো অন্যায়? এসব বাদ দিয়ে সৎ জীবন যাপন করুন। অথচ এই আমরাই চায়ের টেবিলে আর আড্ডায় হাতি-ঘোড়া মারি, এগুলো কি ভণ্ডামি নয়??
উপরের বর্ণনা গুলো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে, কিন্তু আপনারা এখানে অনেকেই আছেন এর চাইতে স্রহস্য-অযুত বেশি খবর রাখেন।
ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি আমাদের দেশের প্রায় অধিকাংশ সমস্যার জনক-জননী হলো দুর্নীতি। কিন্তু শিকড় সহ বিষবৃক্ষটিকে উৎপাটনের কায়দা টা কি আপনারা কেউ কি জানেন??
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১১:৪২