somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতির পিতার কাছে খোলা চিঠি...

২২ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রক্তগঙ্গায় উত্তরণের বন্ধু-পিতা,

তোমাকে পত্র দেবার ইচ্ছা বহুলভাবে লালিত থাকলেও ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে নির্লজ্জের লাজ কাটিয়ে তা লিখতে বসার দুঃসাহস কখনই ছিল না । কিন্তু আজকের একটা অধ্যায় যেন বারবার তোমাকেই নির্দেশ করে যাচ্ছিল । একান্তই ব্যক্তিগত একটা ঘটনা যেন সহসাই জাতীয় স্বার্থের ব্যপকতা ধারণ করছিল ।

ছোট ভাইকে নিয়ে বইমেলায় গিয়েছিলাম । বিপ্লবী চে’র উপর লেখা একটা বই চোখে পড়ল । ভাইটির ব্যাগে চে’র বাণীসহ একটা ছবি দেখেছিলাম । ভাবলাম এই বইটিই হবে ওর জন্যে যথোপযুক্ত । কিন্তু ওর দেখলাম আগ্রহ হিমাংকেরও নিচে । আমার এই বয়সের বিশ্বাসগুলো ধ্বসে পড়ল আর তলিয়ে গেল এদের আধুনিকতার অতলে । আমি যেন কী একটা ফালতু ‘সেন্টিমেন্ট’ নিয়ে ওর অগ্রযাত্রাকে পেছন থেকে টেনে ধরছিলাম ।
বঙ্গবন্ধু, তুমিও আজ লটকে আছো ব্যাগে, দেওয়ালে, দিবসে আর রাজনৈতিক ব্যানারে । ৩২-এ যে সিঁড়িতে তুমি শেষবার সংবর্ধনা পেলে সেখানে একটা ছবি টাঙানো হয়েছে-তোমার বুক ফুঁড়ে রক্তিম ধারা বেরিয়ে আসছে । বাংলার বুক আজ অমনি করে রক্তাক্ত হয়ে আছে । তোমার স্বপ্নগুলো ঐ রক্ত যারা নষ্টদের তালিকায় ভিড় জমিয়েছে ।
ভাবছো চিঠিতে কুশলাদির বালাই কই । তুমি যে ভালো নেই তা আমি নিশ্চিত বুঝি । ভালোরা ভালো থাকে না । আর আমি? তা না হয় পত্র পড়েই বুঝে নিও ।
লিখতে লিখতে চিঠিতে হয়ত একসময় ইতি টানব । কিন্তু জেনে রেখো, এই অভিযোগী বৃত্তান্তের কোন অন্ত নেই ।

কখনও তোমাকে অনেক বোকা মনে হয় । ১০’জানুয়ারীর সেই অকৃত্রিম প্রশান্তিতে বুক চিরে বেরিয়ে আসা বাঁধহীন হাসি আর ১৫’আগস্টের সিঁড়ি বেয়ে গরিয়ে আসা মৃত্যুহীন ছিদ্র হওয়া বুক, লেগে থাকা ঠোঁট, অবনত ডানহাত আর বুজে থাকা চোখ-কিচ্ছুতেই মেলাতে পারিনা । তুমি রবি’র শুধু ‘সোনার বাংলা’ই জেনছো’, ‘রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করনি’-এটা জাননি ।

ওরা এখন রাজনীতির নর্দমায় খুন হয়ে নামের আগে ‘শহিদ’-শব্দটির যথার্থতা বিচারে হোলি খেলে । তোমার নামে তা বসাতে পারিনা । তুমি তো মরণি । সূর্য হয়ে আছো-দিন শেষেও চাঁদ মারফত আলো পাঠাও ।

বন্ধু, দেশের কথা কী বলি? নির্মলেন্দু তো বলেছেনই-‘মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ, মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ, কবির বিরুদ্ধে কবি ।’ মাঝে মাঝে মৃত লোকটাও লজ্জায় আত্মহত্যা করে এই শুনে তোমার ঘোষণাও আজ স্বীকৃতি পেতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ ইতর সাজে । বন্ধুমহলে অবিরাম সংঘর্ষ চলে ঘোষকের স্থিরতা নিয়ে ।

কাণ্ডারি, তুমি তো পালিয়ে(??) পাকিস্তান চলে গেলে । মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তুমি কী বোঝ? মুক্তিযুদ্ধ কী বুঝতে এই প্রজন্মের কাছে এসো । এরা যুক্তি-তর্ক মাধ্যমে ’৭১ কে আরও যৌক্তিক করে, আরও অর্থবহ করে । শুনে হয়তো রডকোষ-কোণকোষের পাত্তা না দিয়েই চোখ থেকে অক্ষিগোলক বেরিয়ে আসতে চাইবে-এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে-বিপক্ষে দল বিভাজন হয় । কেউ আবার মধ্যপন্থী হয়ে উভয় কূল রক্ষা করে । পাটুরিয়ার একই ফেরীতে দেশদ্রোহী(!!) তোফায়েল পুলিশ ভ্যানে আর দেশবন্ধু নিজামির গাড়ীতে লাল-সবুজের মর্যাদা অবিরত শ্লীলতাহানির স্বীকার হয় । তোমার নামে নামকরণে আজ সুশীল সমাজের জিহ্বা চুলকায় । এতে নাকি তুমি দিনদিন সস্তা হয়ে যাচ্ছ । ওরা বোঝেনা যা দুর্লভ তার কোন অর্থ বিচার চলে না ।

জানো, তখনকার ছাত্র-আন্দোলন এখন ছাত্র-রাজনীতিতে বদলে নিয়েছে নিজেকে । রাজনীতির বাদ-প্রতিবাদ এখন রক্তের রগে কথা বলে । হরতালের অসহায়ত্বে রাজনীতির নিদর্শন মেলে । রাজনীতি দর্শিতে এসো বিশ্বজিতের পরিবারে । রাজনীতির দেখা মেলে বিদেশী ব্যাংকে । রাজনীতির সুশাসনে তোমার জাহানারারা আটকা পড়েন । না-না, চুরি-ডাকাতি কিংবা খুন-খারাবির জন্যে নয় । স্রেফ দেশদ্রোহিতার(!!) পাপে ।
শুনে আঁতকে উঠো না । ‘৭১এ জন্মহীনদের পাপে নোংরা হয়েছিল যেসব যোনীধারীরা তাঁরা আজও তাঁদের পাপের আর নোংরামির সাজা সয়ে-বয়ে বেড়াচ্ছেন । আর যারা ওদের মনোরঞ্জনে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছিল তারা আজ পাতলা কাপড়ে ক্ষমতার চাবি আঁচলে বাঁধার স্বীকৃতি পায় । তুমি যাদের নিষিদ্ধ করলে তারাই বিনা ভিসায় প্রত্যাবর্তন করে, রাষ্ট্রযন্ত্রের কল-কাঠি নাড়ায় । বারবার করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হয় । তবুও কেন আক্তার চাচার কুলি খেটে সংসার চালাতে হয় সেই প্রসঙ্গ না হয় নাইবা বললাম । তবুও পাঠ্য-পুস্তকে ইতিহাস বিকৃতির লজ্জা লুকোয় কী করে?
পাক-বিচরণ আজও ঊর্ধ্ব-শিরে । পার্থক্য সেদিন ওরা ছিল আগ্রাসী, আজ আমরা ওদের নিরাপত্তা বিধান করি । শহীদ মুস্তাক আর জুয়েলের রক্ত মাড়িয়ে গ্যালারীতে গিয়ে ‘আফ্রিদি,আফ্রিদি’ বাক-চিত করি । রক্ত গালিচার শেষ অধ্যায়ও থাকবে পাক-প্রীতিতে রঞ্জিত ।

কি? দমে গেলে? সত্যিই এতো নিদারুণ অবস্থা? না! তোমার সন্তান হয়ে দগ্ধ কণ্ঠে জানিয়ে দিচ্ছি, জাতিসংঘে আবার আমরা বাংলায় উচ্চারণের দৃঢ়তায় আত্মমর্যাদার চরম শিরে আরোহণ করছি । তোমার প্রাণের কৃষক-শ্রমিকদের আজ তথ্য-প্রযুক্তির আবর্তে আঁটকে ফেলেছি । এখন মুক্তিযোদ্ধার সন্তনরা ভালো জায়গায় পড়তে পারে, সহজেই চাকুরী পায় । মেয়েদের মাকড়সার জালে ঢাকা চার দেয়ালের জগত থেকে বেরিয়ে এনে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য চলছে সকল আয়োজন ।

জঙ্গিবাদের মেরুদণ্ড মচকে দেওয়া হয়েছে । সিরিজ বোমা হামলা এখন ইতিহাস । ধর্ম ব্যবসায়ীদের তালিকায় আর একটি গোষ্ঠী অবশিষ্ট আছে । আশি আগামী পত্রেই ওদের কবর রচনার খবর পাবে ।

এখন অনলাইনেই ঘটনার উল্লেখ, পর্যবেক্ষণ আর উত্তাল প্রতিবাদ চলে । ইতিহাসের সত্যতা নিরূপণে সেখানে টগবগে রক্তওয়ালা তরুণ । তোমার ছেলেরা আজ ২২গজে গর্জে ওঠে, বাঘের ক’ঘা থাবা দিয়ে ছিনিয়ে আনে বিজয় ।

তোমার দানের স্বার্থকতা পুনশ্চে এঁকে দিলাম-মূল চিঠির এতো ক্ষমতা নেই যে তা মুল চিঠিতে ধারণ করে । শুধু একটাই প্রতিবন্ধকতা-চোরের খনি থেকে অবিরাম উত্তোলন চলছে ।

ইতি-
এক দিকচ্যুত খাদক
(তোমার খুনের রক্তে চোখ ঢেকে আছে । তাইতো অন্ধ চোখের দিক-ভ্রান্তিতে সম্ভাবনাগুলোকে গিলে খাচ্ছি ।)

পুনশ্চঃ শাহবাগে প্রজন্ম চত্বর – ‘১৩তে’৭১ । ফিরে এসেছে ‘জয় বাংলা’...ফিরবে জাতির পিতাও...

ফেসবুক লিঙ্কঃ Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×