ম্যাক্সিমা তিন দিনের সফরে গত সোমবার বাংলাদেশে এসেছিলেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স ফর ডেভেলপমেন্ট-বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে এখানে সফর করেন তিনি। সফরের সমাপনী দিনে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীকে রানী বলেন, তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও আর্থিক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে এটুআই প্রোগ্রামের ডিজিটালাইজেশন প্রকল্প ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেখে খুব খুশি ও চমৎকৃত। বর্তমানে বাংলাদেশের দুই কোটি ৯০ লাখ লোক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করছে জানতে পেরে তিনি খুশি। ডাচ রানী আর্থসামাজিক খাতে এবং ডিজিটালাইজেশন কর্মসূচিতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অনেক ভালো কাজ করেছে।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ: এদিকে দুপুরে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ডাচ রানী ম্যাক্সিমা। বঙ্গভবনে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাৎ শেষে প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সাক্ষাৎকালে প্রেসিডেন্ট দারিদ্র্যবিমোচনে বাংলাদেশের সফলতার বিষয়টি উল্লেখ করেন। এ সময় নেদারল্যান্ডসের রানী দারিদ্র্যবিমোচনে বাংলাদেশের সফলতার প্রশংসা করে এ খাতে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার কথা জানান। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ তৈরী পোশাক শিল্পে নারীদের অবদান এবং এটি কীভাবে নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করছে তা তুলে ধরেন। নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করে ডাচ রানী আশা প্রকাশ করেন, নারীর ক্ষমতায়নে সাফল্য অব্যাহত থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক দিকগুলো উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে তিনি জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন। ভূ-প্রকৃতিগতভাবে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের ব-দ্বীপ প্রকৃতির কথা তুলে ধরে বলেন, নেদারল্যান্ডসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট। ডাচ রানীর এই সফর দু’দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি সিউলেনারি, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রবার্ট ওয়াটকিনস, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আর্থিক পরিসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা: ওদিকে বিকালে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত এবং ডাচ রানী ম্যাক্সিমা। রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সবার জন্য নিরাপদ আর্থিক পরিসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা। এক্ষেত্রে সিম নিবন্ধনের মাধ্যমে স্বচ্ছ মোবাইল ব্যাংকিং প্রচলিত হলে দুর্নীতি ঠেকানোর পাশাপাশি নিরাপদে এবং স্বল্প খরচে প্রবাসী আয় দেশে আনা যাবে বলে মনে করেন তিনি। রানী প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল, অনলাইন ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক এখনও ব্যাংকিং সেবার বাইরে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে এক দিকে যেমন আর্থিক নিরাপত্তা থাকে না, তেমনি সঞ্চয় না থাকায় আপৎকালীন সময়েও পরিবার থাকে আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায়। অবৈধপথে, অনিরাপদ আর্থিক লেনদেনের পরিবর্তে প্রচলিত পথেই আর্থিক কার্যক্রমের প্রতি জোর দেন জতিসংঘের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক বিশেষ দূত। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিন্স। অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান আশা করে বলেন, ২০১২ সালের মধ্যেই শতভাগ বাংলাদেশী আর্থিক পরিসেবার আওতায় আসবে।
শিক্ষার অভাবে অর্জন কাজে লাগছে না: এদিকে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক ডাচ রানী ম্যাক্সিমা বলেন, শিক্ষার হার কম হওয়ায় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো কাজে লাগছে না। এ সময় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আরও ক্ষমতায়নের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, তাদের অবশ্যই মূল স্রোতে সম্পৃক্ত করতে হবে। দুপুরের অল্প আগে সচিবালয়ে প্রবেশ করে রানীর গাড়ি বহর। এরপর মন্ত্রী ও রানীর মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘রানী ম্যাক্সিমা ব্যাংকের লেনদেনকে আরও আধুনিকায়ন করার কথা বলেছেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের যে সম্ভাবনাগুলো আছে, এগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য আমরা কৌশল প্রণয়ন করব।’ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে রানীর আহ্বান সম্পর্কে মুহিত বলেছেন, ‘আমরা এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’