সেইসময় বর্ষায় টইটম্বুর
আমার ছোট্ট হলধর গ্রাম -
পেছনে বয়ে চলা
খরস্রোতা 'চাওয়াই' ।
আমাদের শৈশবে
নদীর দুকুল ছাপিয়ে '
‘বর্ষা’ আসতো ফি বছরে ।
'প্রাইমারি টিচার বাবার'
স্কুল ছিল নদীর ঠিক ওপারে ।
একবারের কথা মনে আছে-
বর্ষার স্রোতসিনী 'চাওয়াই'
সাঁতরে পার হচ্ছেন বাবা !
এপারে তখন আমরা দু'ভাই-
বাবার ডুব সাঁতারে
নদী পার হওয়া দেখছি ।
খর স্রোতের বিপরীতে
বাবার সেকি যুদ্ধ !
- বাবা পেরে উঠছেননা !
ফলাফল যা.....
বাবার স্রোতের
টানে ভেসে চলা শুধু ভেসে চলা ।
তারপর-
ভেসে ভেসে অনেকদুর ....
বাবা ভেসেই চলছেন যেন
সময়ের স্রোতে অনন্তকাল -
ভেসেই চলছেন- ভেসেই চলছেন !
এপারে তখন 'কান্না'র বিকল্প
কিছুই ছিলনা আমাদের ।
বাবা অনেক দুরে স্রোতের টানে
নদী পার হয়েছেন ঠিকই,
কিন্তু কিছু বুঝে উঠবার আগেই
মেজভাই তাগিদ দেয়-
'চল্ - বাড়ি ফিরে চল্' ।
তখন 'সাইন ল্যাংগুয়েজ'
এর কিছুই বুঝতামনা আমি,
যা দুর থেকে বাবা জানান দিয়েছেন।
হু-হু করে দীর্ঘক্ষণ কেঁদেছিলাম-
বাবার নদীর স্রোতে ভেসে
যাওয়া দেখে ।
দীর্ঘদিন বাবার নদীতে
ভেসে যাওয়ার স্মৃতি ধারণ করে
কতোবার চোখ ছল্ ছল্
করে উঠতো নিরবে ।।
তখন অনেক কিছুই
বুঝতাম না !
এই যেমন-
'বাবার ফেস মুভমেন্ট'
কিংবা 'বডি ল্যাংগুয়েজ' -
'মেজভাই' যা অনায়াসে
বুঝতো ঠিকই ।
আজ দীর্ঘ দিন পর -
আমিও বাবার মতো
সময়ের স্রোতে ভেসে চলছি ।
কখনও ডুব সাঁতারে
কিংবা-
স্রোতের বিপরীতে পার হওয়ার
জীবন যুদ্ধ চলছে হরদম !
শুধু ভেসেই চলছি- ভেসেই চলছি কতোকাল !!
'বাবা' তাও নদী পার হয়েছেন ঠিকই,
কিন্তু আমি পারিনি ।
কেননা , আমিতো কখনো বাবার
'ফেস মুভমেন্ট' - 'বডি লেংগুয়েজ'
অথবা দুরে থেকে জানানো
'সাইন ল্যাংগুয়েজ'
বুঝতে পারিনি - কিংবা সেভাবে বুঝার
চেষ্টাও করিনি কোন দিন ;
-যেভাবে বুঝেছিলেন
'মেজভাই' অনায়াসেই ।।
========


সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৪:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


