somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধ দিনের কথা

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালে চুয়ান্ন বছর আগে বাস্তবে দেখা ছিটেফোঁটা স্মৃতি নিয়ে লেখা আজকের এই গল্প :
কতইবা হবে বয়স তখন...! এই ছয় থেকে সাত । শিক্ষক বাবার সচেতন মানসিকতায় তখনকার দিনে কমবয়সে ক্লাস থ্রি তে পড়া গ্রামীণ আবহে বেড়ে উঠা এক দুরন্ত কিশোর । মা-বাবার চোখ এড়িয়ে নিতান্তই ছুটে চলা । চোখের সামনে যা দেখি- মনের সেলুলয়েডে তা গেঁথে যায় কিংবা বলা চলে ফুল এইচডি শটে তা অটোমেটিক সেভ হয়ে যায় অযুত-নিযুত জিবি ধারণ ক্ষমতার মগজের এই স্মৃতিকোষে ।
কিছু দৃশ্যপট :
গ্রামের মাঝখানে একমাত্র পুকুর যার নাম স্থানীয় ভাষায় ‘বড়দিঘী’ নামে পরিচিত ।প্রতিদিন যথারীতি শাপলাফুল তোলার জন্য পুকুরে আমরা চার-পাঁচজন কিশোর হাঁসের আদলে দিঘির পানিতে পায়চারি করছি । এমনসময় বাড়ি থেকে খবর আসে আমাদেরকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে যাওয়ার জন্য । যথারীতি বাড়িতে যেতেই বুঝতে পারি, দুপুরের মধ্যে আমাদেরকে বাড়িঘর ছেড়ে দুরে কোথাও চলে যেতে হবে । প্রচন্ড খুশি মনে বেমালুম খাওয়া-দাওয়ার কথা ভুলে গিয়ে কখন রওয়ানা দিব বলে আমাদের কিশোর মন উথাল-পাথাল করতে থাকে । খাবারের জন্য মায়ের বেশ কবার তাড়ার পরও খাবার খেতে অস্বীকার করতে থাকি । অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আমরা সবাই বাড়ি ছেড়ে অজানা গন্তব্যের দিকে রওয়ানা হচ্ছি । গরুর গাড়িতে বোঝাই কিছুদিন চলার মতো চাল-ডাল, লবন-তেল সাংসারিক খাবারদাবার ও অন্যান্য সামগ্রী । আমাদের পরিবারের( বাপ-চাচারা চার-পাঁচ ভাইয়ের )পঞ্চাশ-ষাটটা গরু ১৫/২০ জন নারীপূরুষ মিলে পায়ে হেটে বাস্তুবাড়িঘরত্যাগী এক কাফেলা পায়ে হেটে চলছে অজানা কোন গন্তব্যে । আমার একটা আদরের পোষমানা ধবল রংয়ের বিড়াল ছোট বস্তায় পুরে যেই পিঠের মধ্যে নিয়েছি অমনি জানপ্রাণ নিয়ে তা শব্দ করে নড়াচড়া শুরু করলে বাবার ধমক খেয়ে বস্তার মুখ খুলে দিতেই একলাফে বিড়ালটি জঙ্গলে পালিয়ে যায় । এতক্ষনে, ৪/৫ কিলো: পায়ে হাটার পর তীব্র ক্ষুধা অনুভব করতে থাকি । শেষ বিকেলে সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে মুক্তাঞ্চলের সর্দার পাড়ায় আমার বাবার এক শুভাকাংখী বন্ধু রহিম্বুল্লাহ চাচার বাড়িতে আশ্রয় নেই ।আজো মনে আছে, সন্ধ্যার অব্যবহিত ঠিক পরেই শুকনো মরিচপোড়া আর লবণ দিয়ে মায়ের হাতের সেই ভাতের অমোঘ স্বাদ এখনো ভুলতে পারিনি… ! সেই বাড়িতে আমরা দুই মাসের মতো ছিলাম । মনে পড়ে, সেখানে জোৎস্না স্নাত রাতের বেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের পদচারনা, তাদের শলাপরামর্শ, বিশাল অঙ্গনে অনেক মানুষের পদচারনায় রেডিওতে স্বাধীন বাংলা বেতারে ঘন ঘন গাওয়া আমাদের জাতীয় সঙ্গীত, চরমপত্র ও খবর শোনা ।
একটি বিশেষ স্মৃতি :
পাকসেনাদের ছোড়া বোমার শব্দ । আমরা দুপুর বেলায় উচু ভিটের এক মসজিদের ধারে ২০/৩০ জন সবাই শুয়ে জান বাঁচানোর চেষ্টায় লিপ্ত ।মসজিদ সংলগ্ন ছোট্ট পুকুর । সৈন্যদের বোমা ছোড়ার সময় একটি শব্দ পেলেই আমার বয়স্ক এক দাদু প্রতিবার আল্লাহু আকবার বলে পুকুরে ঝাঁপ দেন ।তীব্র বেগে বোমা কাছাকাছি পড়ে বিস্ফোরণ হয়ে বোমার ছাড়া (গোলা) আশে পাশেই পড়তে থাকে । কিছুক্ষণ পর অর্থাৎ ১০/১৫ মিনিট বাদে আবারও বোমা ছোড়ার সময় একটি শব্দ পেলেই আমার সেই বয়স্ক দাদু প্রতিবারই পুকুরে ঝাঁপ দিতে থাকে । এই অবস্থা দীর্ঘ সময় বা কমপক্ষে ঘন্টাখানিক চলতে থাকে এবং এত ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থাতেও এই দৃশ্য অবলোকন করে আমরা শিশু-কিশোরেরা সেই সময় হাসি আটকাতে পারিনি । সেই সময় বেশ কিছু গরু-ছাগলের মৃত্যুসহ ওই এলাকার এক ব্যবসায়ীর বৃদ্ধা মা বোমার আঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন । তখনকার সময়ে কেন জানি মৃত্যুকে এত কাছাকাছি দেখার পরও মনের সাহস একটুও হারাইনি কিংবা একটিবারের জন্যও মনে হয়নিযে, আমাদের জন্য মৃত্যু এত কাছাকাছি অবস্থান করছে ! এই ঘটনা মনে এখনও শরীরে শিহরণ জাগায় ….!
==========

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর এজেন্ট

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২



জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর একজন এজেন্ট। এই তথ্য কেউ জানতো না। তার ফ্যামিলিও জানতো না। ১৯৪১ সালে বর্ডার ক্রস করে সে ঢুকেছিল পাকিস্তান। তারপর আস্তে আস্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×