প্রতাবশালী বাবা ফরহাদ হোসেন (কাজী হায়াত) ও ভাই আজাদ (মিশা সওদাগর) রুমকি (আঁচল) কে জোড় করে বিয়ে দিতে চায় । কিন্তু নানা ফন্দি করেও বাঁচার উপায় খুঁজে না পেয়ে বলে তার ‘জীবন’র সাথে প্রেম আছে । অন্যদিকে বাপ-মা হারা জীবন(বাপ্পি) ভাই-ভাবী(ইলিয়াস কাঞ্চন-চম্পা)-র সংসারে মানুষ । ঘটনাচক্রে তার সাথে রুমকির পরিচয় ঘটে । রুমকি তাকে ভালবাসতে চায় । কিন্তু সে ভাইয়ের কারনে কোন মেয়েকে তার জীবনে আসতে দিতে চায় না । তাদের এই চাওয়া-পাওয়ার হিসেব মিলাতে আর ছবির আরেক ভিলেন ফরহাদ হোসেনের সাথে সাজ্জাদ খানের (নানা শাহ) দ্বন্দ্ব নিয়ে এগিয়ে চলে ছবির কাহিনী ।
ছবির কাহিনী আহামরি টাইপের কিছু না হলেও গল্পের বর্ণনা মোটামুটি গতিশীল । যার ফলে দর্শকরা বিরক্ত হন নাই । যার প্রমাণ ছিল ছবির বিভিন্ন দৃশ্যে তাদের হাততালি,শিস বাজানো ও শব্দ করার মাধ্যমে ।
ছবির সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে বাপ্পি তার অভিনয়ের যে জড়তা ছিল অনেকাংশেই কাটিয়ে উঠতে পারছে । যা কিনা তার জন্য খুবই ভাল দিক । দুই-একটা জায়গা ছাড়া তার অভিনয় সপ্রতিভ ছিল । সে ভাল নাচেও । তবে তাকে আরও উন্নতি করতে হবে দর্শকের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়তে হলে ।
ছবির নায়িকা আঁচল ভাল ও সাবলীল অভিনয় করেছেন । নির্মাতারা যদি তাকে সঠিক ব্যবহার করতে পারে তবে সে অনেক দূর যাবে ।
পুরো ছবি জুরে দর্শকদের যিনি মাতিয়ে রেখেছিলেন তিনি আজাদ রূপী মিশা সওদাগর । “কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকলে সব নষ্ট করে দেয় । আমার মাথায় এখন ভাইরাস ঢুকছে”। এই সংলাপের মাধ্যমে সিগারেট খুঁজার অভিনয় অনবদ্য করেছেন যা দর্শকরা হাততালি দিয়ে অভিন্দন জানিয়েছে ।
ইলিয়াস কাঞ্চন-চম্পা জুটি বহু বছর পরে তারা একসাথে অভিনয় করেছেন । তারা তাদের চরিত্রানুযায়ী ভাল করেছেন ।
দিলদার মরে যাবার পরে আমাদের চলচ্চিত্র ভাল কৌতুকাভিনেতার অভাববোধ করছিল । কেউ খুব একটা সাড়া জাগাতে পারেনি । তবে কাবিলা সে জায়গা কিছুটা হলেও দখল করতে পারছে ইদার্নিং । যথারীতি এই ছবিতে তিনি দর্শকদের মজা দিয়েছেন যথেষ্ট ।
তবে কাজী হায়াত আবারো প্রমাণ করলেন তিনি পরিচালক হিসাবে যতটা দক্ষ অভিনেতা হিসাবে ততটা দক্ষ নন । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মনে হয়েছে উনি কবিতা আবৃত্তি করছেন । উনার চেয়ে শিশুশিল্পী সারিকা অনেক সুন্দর অভিনয় করছে । এইছাড়া ভিলেন চরিত্রে বহুদিন পরে চলচ্চিত্রে ফিরে আসা নানা শাহ ‘সাজ্জাদ খান’ চরিত্রে ভাল অভিনয় করছেন ।
ছবিতে গান আছে আইটেম গান সহ গান আছে মোট ৫টা । এর মাঝে “গোপনে গোপনে”, “জটিল প্রেম” সবচেয়ে ভাল করেছে । ছবির শুরুতে কোন কারন ছাড়া যেমনি আইটেম গানটি আসে তেমনি হঠাৎ করেও গানটি ভাল লাগে না । এইছাড়া “জটিল প্রেম” গানটিতে শুরুতে বাপ্পি কলকাতার দেবকে নকল করেছে যা কিনা দৃষ্টিকটু । যদিও গানটি ভাল লাগছে সবার ।
ছবির কালার কারেকশন, এডিটিং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভালছিল দু’একটি জায়গা ছাড়া । ছবির শুরুতেই একটি দৃশ্যে ক্যামেরার কাঁপুনির কারনে পর্দা ঘোলা হয়ে যায় । এইছাড়া “গায়ে হলুদ” গানে রুমকি’র বড় ভাবী হাসপাতাল থেকে ফোন আসার পর দেখানো হয় সে তার ছেলে মেয়েকে নিয়ে উপরে চলে যায় । কিন্তু পরের দৃশ্যে দেখায় সে গায়ে হলুদের স্টেজে এবং সে তার শ্বশুর ফরহাদ হোসেনের কাছ থেকে সে জানতে পারে তার স্বামীর জ্ঞান ফিরছে । যা কিনা দৃষ্টি এড়ায় না ।
এই ছবির একটা জিনিস না বললে নয়, তা হচ্ছে ওয়াল্টন ও স্ট্রিং এনার্জি ডিঙ্ক্রসের বিজ্ঞাপন ঢুকানো । রীতিমত “স্ট্রিং এনার্জি ডিঙ্ক্রস খাব আর মারব” বলে ৩০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপন । এবং ছবির নায়ককে ওয়াল্টন হোন্ডায় ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্যে দেখানোর সময় ‘ওয়াল্টন’ কে হাইলাইট করা হয়ছিল । যা কিনা আমাদের দেশের ছবির প্রযোজকদের খালি হলের আয় থেকে ছবির খরচ তুলে আনার ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে নতুন করে ভাবাবে ।
সর্বোপরি যদি এক কথায় বলা হয় এই ছবি কেমন ? তাহলে বলা যাবে কিছু ছোট খাট ভুল-ত্রুটি বাদ দিলে এই ছবি ভাল বিনোদনে ভরপুর একটি বাণিজ্যিক ছবি । আপনি ছবিটি থেকে হয়ত শিক্ষামূলককিছু নিয়ে যেতে পারবেন না কিন্তু কিছু নির্মল আনন্দ নিয়ে যেতে পারবেন সাথে করে ।
এক নজরে ছবির সকল তথ্যঃ
চলচ্চিত্রের নামঃ জটিল প্রেম
পরিচালকঃ শাহীন সুমন
কাহিনীঃ আব্দুল্লাহ জহির বাবু
শ্রেষ্ঠাংশেঃ বাপ্পি, আঁচল, ইলিয়াস কাঞ্চন, চম্পা, কাজী হায়াত, মিশা সওদাগর, শিবা শানু, নানা শাহ,সাগর, যাদু আজাদ, সারিকা, মনি, তমা ও আইটেম গার্ল বিপাশা ।
গীতিকারঃ সুদীপ কুমার দীপ
সঙ্গীতায়োজনঃ আহমেদ হুমায়ুন
প্লেব্যাকঃ কুমার বিশ্বজিৎ, কনা, ন্যান্সি, আহমেদ হুমায়ুন, রুমা, মিমি, শাহেদ
প্রযোজনাঃ মিজানুর রহমান
পরিবেশনাঃ পুতুল কথাচিত্র
মুক্তিঃ ১৭ মে ২০১৩
রেটিং: ৩.৭/৫*
*রেটিং বাংলা বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের বিবেচনায় ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৩ রাত ১১:৩৭