somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরে এলাম কুয়াকাটা (৪ রাত ৩ দিন)

০২ রা মে, ২০১১ দুপুর ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেকদিন ব্লগে আসা হয়ে উঠেনা। না। প্রাগৈতিহাসিক সেই কারনে (ব্লগে আগের পরিবেশ নেই....) নয়। সত্যি বলতে অফিসের কাজের চাপ ইদানিং মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর গত ২০ এপ্রিল ৩ দিনের জন্য কুয়াকাটা গিয়েছিলাম অফিসেরই আরও দুজন সহকর্মীর (পুরুষ) সাথে। আমাদের অফিসটা ডেনমার্কের তত্বাবধানে হওয়ায় ইস্টার সানডে এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ৪ দিনের ছুটি পেয়ে আর দেরি করিনি। যাওয়ার আগে ব্লগে তন্ন তন্ন করে কুয়াকাটা বিষয়ক প্রায় সব লেখা পড়ে নিয়েছিলাম। সেই সকল লেখার সকল ব্লগারকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। যদিও সবার লেখার ভেতরে কোথাও না কোথাও রাস্তার খারাপ অবস্থা নিয়ে ব্যাপক ও বেশুমার হা হুতাস ছিল। তারপরও "যাব যখন বলেছি তখন যাব" নীতি অনুসরন করে শেষমেষ ঘুরেও এলাম।

ব্যক্তিগতভাবে আমি আগে কখনও স্টীমারে চড়িনি। অনেক আগে একবার জুলভার্ন দাদার লেখা পড়ে ঢাকা টু বরিশালগামী রকেটে চড়ার ইচ্ছে জাগে। জুলভার্ন দাদাকে একবার বলেও ছিলাম নেক্সট বরিশাল ট্যুরে আমাকে যেন সাথে নেন। হয়ত উনি সেটা বেমালুম হয়ে গেেছন! এবার তাই সুযোগ হাতে পেয়ে হাতছাড়া করিনি।



ভেবেছিলাম সরকারি স্টীমার যেহেতু, সেহেতু ইহার অব্যবস্থাপনা থাকবেই। এবং সেহেতু আমাদের মত পাগল ছাড়া খুব বেশি লোকজন হয়ত যাত্রী হতে চাইবেননা। তাই আগে থেকে কেবিন বুকিং করার প্রয়োজন অনুভব করিনি। ইহা ছিল আমাদের এই বছরের শ্রেষ্ঠ ভুল। সদরঘাটে গিয়ে দেখি এলাহি কারবার। ফার্ষ্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস কোথাও কোনো কেবিন খালি নেই। কিছুক্ষন পর এমন হল যে ডেকেও খালি পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। শেষ পর্যন্ত আমাদের ঠাই হলো স্টীমারের সেকেন্ড মাষ্টারের কেবিনে, তবে শর্ত সাপেক্ষে। শর্ত অবশ্য খুব সহজ। চাঁদপুর পর্যন্ত ডেকে কাটাতে হবে, কেননা ঐ কেবিনে চাঁদপুর অবদি একজন যাত্রি আছেন। তিনি নেমে গেলেই....।

রাতের খাওয়া-দাওয়া ডেকেই সেরে নিলাম। সাড়ে এগারটা নাগাদ কেবিনের দখল বুঝে পেয়েও ঘুমাতে ঘুমাতে পৌনে একটা বাজল। কেননা রাতের ব্যস্ত চাঁদপুর ঘাট আমাদের কাছে রীতিমতো অসাধারন লেগেছে। প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ ঘাটে দাড়িয়ে আছেন স্টীমারের যাত্রী হবেন বলে। তাদের কারও সাথে আছে মালপত্র, কারও কাঁখে শিশু। যাত্রী ছাড়াও আছেন অনেক ফেরীওয়ালা। তাদেরও অনেক প্রতীক্ষা, কখন স্টীমার ঘাটে ভিড়বে আর তারা বিক্রি করবেন তাদের সিদ্ধ ডিম, কাপ দই, বাদাম, রুটি-ভাজি ইত্যাদি ইত্যাদি। ঘাটের ঝলমলে আলোয় নদী, ষ্টীমার, মানুষের কোলাহল সব মিলিয়ে রাতের এ েযন এক অন্য রূপ।






পরদিন ভোর সাড়ে পাচঁটায় আমরা বরিশাল নামলাম। ঘাট থেকে একটা অটো রিক্সা নিয়ে গেলাম বাস স্টােন্ড। ১ ঘন্টা লেট করে উঠলাম কুয়াকাটার বাসে। সেইরকম একখান বাস। সেইরকম বললাম কারন প্রথমত ইহা প্রায় লোকাল এবং দ্বিতীয়ত বাসে চাকার সংখ্যা ৬ টি হলেও এরা মোট সাড়ে আটবার চাঁকা বদলেছে কুয়াকাটা যাওয়া পর্যন্ত। কিভাবে সম্ভব জানিনা। যখনই কোনো ফেরী ঘাটে কিংবা জ্যামে বাস অপেক্ষা করেছে, কেবল ছুতো পেতে দেরী চাঁকা বদলাতে দেরী নেই। একবার কেবল অর্ধেক খুলতে খুলতে ফেরী চলে আসায় চাকা না বদলেই বাস ছেড়েছিল। হিসাবটা তাই সাড়ে আটবার লিখেছি। যা হোক দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ ঘন্টা পর পৌছুলাম কুয়াকাটায়। পথে পড়ল 4টা ফেরী। এবং সবচেয়ে বড় কথা রাস্তা মোটেও খারাপ না। অন্তত আগে েযমন শুনেছিলাম তেমনতো নয়ই। বরং বেশ ভাল। ঝাকি তেমন নেই বললেই চলে। তবে রাস্তার কাজ এখনও চলছে। তাই আরও মাস চারেক পর গেলে কোনো ঝাকিই পাওয়ার কথা নয়। আমি পড়েছিলাম বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে ৫ টা ফেরী পার হতে হয়। কিন্তু বাস্তবে পেলাম ৪টা। কারন অলরেডি (দপদপিয়ায় সম্ভবত) ১টা সেতু তৈরি হয়ে গেছে। এবং আরও একটা (আলুখালি সম্ভবত) সেতুর কাজ ৫০% এগিয়েছে। সব মিলে কুয়াকাটা যাওয়ার আগের সেই ভয়াবহ রাস্তা এখন ইতিহাস।



















































































































এরপর যথারীিত হোটেল ভাড়া, খাওয়া-দাওয়া, সমুদ্রে গোসল করা, দ্রস্টব্য স্থান পরিদর্শন, হৈ-হুল্লোর ইত্যাদি ইত্যাদি করতে করতে ৩ দিন কেমন করে যেন কেটে গেল। শেষে ২৩ তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে ছটার বাসে ঢাকা প্রত্যাবর্তন।

















যারা কুয়াকাটা ভ্রমনে যাবেন তাদের জন্য উপদেশঃ

১/ যদি বরিশাল হয়ে েযতে চান তবে বিখ্যাত রকেট স্টীমারে না গিয়ে ভাল মানের লঞ্চে যাবেন। তাতে সময়, টাকা দুইই সাশ্রয় হবে এবং রীতিমতো আরাম- আয়েসে যেতে পারবেন। আর যদি আমাদের মত পাগলামী করতে মন চায় তবে অবশ্যই অন্তত ১/২ সপ্তাহ আগে কেবিন বুকিং করুন (সম্ভব হলে অবশ্যই প্রথম শ্রেণী)।

২/ সিজনে গেলে আগে থেকে হোটেল বুকিং করে যাওয়াই ভাল। অফ সিজনে সে চিন্তা নেই। একটু খুজে ভাল হোটেল দেখে দামাদামী করে নিন।

৩/ খাওয়া-দওয়া সস্তায় করতে চাইলে আমার সাজেশন হচ্ছে "বরিশাল হোটেলে" খান। কারন যত ভাল চেহারার রেস্তোরাতেই খাবার খাননা কেন কুয়াকাটার পানির গুনে সব রান্নাই কেমন বিস্বাদ মনে হয়। আমরা শেষ দিন শেষ বেলায় "বরিশাল হোটেলে" েখয়েছিলাম। রান্নার মান মোটামুটি ভাল।

৪/ অবশ্যই কুয়াকাটা গিয়ে প্রথমে ফিরে যাবার বাসের টিকেট কনফার্ম করুন। কারন কুয়াকাটা থেকে সরাসরি ঢাকায় ফেরার বাস সার্ভিস মাত্র ১টি। নাম সাকুরা বাস সার্ভিস।

৫/ কুয়াকাটায় গিয়ে কিনে নিয়ে আসার মত তেমন প্রায় কিছুই নেই বললেই চলে। ঐখানে যেসব ঝিনুকের সামগ্রী, বার্মিজ সামগ্রী, রাখাইনদের উৎপাদিত জিনিসপত্র পাওয়া যায় তার ৯৫ ভাগই আসে কক্সবাজার থেকে। কেবল শুটকি মাছের দাম অনেক কম। এই একটি জিনিষে যাদের দূর্বলতা আছে তারা আমার মত বেশী করে শুটকি মাছ আনতে পারেন। তবে অবশ্যই তা ভালকরে মুড়ে আনবেন। নয়তো বাসে আপনার সহযাত্রীর অসুবিধা হতে পারে।

৬/ বিচে কিছুক্ষন হাটাহাটি করলেই দেখবেন অনেকেই মোটর সাইকেলে কুয়াকাটার দ্রষ্টব্য স্থান ঘুরিয়ে দেখাবার অফার দিচ্ছে। চাইলে রাজী হতেই পারেন। তবে দামাদামী করে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

৭/ কুয়াকাটায় গিয়ে অনেক রিয়েলএষ্টেট কোম্পানির সাইনবোর্ড দেখতে পাবেন। সে সব বিজ্ঞাপনে খুব বেশি বিশ্বাস করলে ভুল করবেন। আমার অনুসন্ধান বলে কুয়াকাটায় মাত্র দুটি রিয়েলএষ্টেট কোম্পানির বৈধতা আছে। নাম দুটি উল্লেখ করলাম না কারন আমি বিশ্বাস করি ব্লগ কোনো বিজ্ঞাপনের স্থান নয়।

৮/ যতোটা সম্ভব সৈকত এলাকায় কম ময়লা ফেলতে চেষ্টা করুন।

৯/ অবশ্যই অবশ্যই সাথে করে ভাল মানের সানস্ক্রিম নেবেন এবং রোদে বের হবার আগে তা ব্যবহার করতে ভুলে যাবেন না। তা না হলে ফিরে এলে আমাদের মতো আপনাকেও হয়তো পরিচিতজনের কাছ থেকে শুনতে হতে পারে ...." আপনাকে কেমন েযন চেনাচেনা লাগছে...... কোথায় যেন দেখেছি..........।


*********এবার সংক্ষেপে খরচ প্রসঙ্গে আসি। আমরা ২৫০০ টাকা বাজেট ধরে গিয়েও ১০০ টাকার বেশি ফেরত আনতে পেরেছি। মানে ২৫০০ টাকার পুরোটা খরচ করতে পারিনি। তবে খরচ আরও কম হওয়া উচিত ছিল। কেননা স্টীমারে আমরা জানিনা বলে ভাড়া বেশি দিয়েছিলাম। এছাড়া কুয়াকাটায় গিয়ে সবচেয়ে দামী হোটেলে উঠেছিলাম যেটার কোনো দরকারই ছিলোনা।

এখানে সম্ভাব্য খরচের তালিকাটা দিয়ে দিলাম যদি কারও উপকারে লাগে........ঃ

রকেটের ভাড়া - ১১৫০(সম্ভবত) প্রথম শ্রেণী, ৭৫০(সম্ভবত) দ্বিতীয় শ্রেণী, ১০০/২০০ ডেক।

হোটেল ভাড়া - হোটেল স্কাই প্যালেস - ১৪০০ টাকা (২জন)। {নরমাল হোটেল - ১৫০/২০০-৩০০/৩৫০ (2জন)}

খাওয়া - প্রতিদিন গড়ে ২৫০ টাকা (জনপ্রতি)।

ঘোরাঘুরি - মটরসাইকেল এবং লোকাল লঞ্চ মিলিয়ে ৪০০ (জনপ্রতি)।

ফিরে আসার বাস ভাড়া - ৫০০ টাকা (জনপ্রতি)।



কৃতজ্ঞতাঃ রকেট স্টীমারের ছবির আলোকচিত্রি।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১১ দুপুর ১:০৪
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×