মোবাইল আর সামাজিক মাধ্যমের প্রভাবে বই পড়ার অভ্যাস অনেকটা যে কমে গেছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।বই পড়ার অভ্যাসের কারণে এক সময় তরুণ প্রজন্ম জীবন ও জগৎ সম্পর্কে সুস্থভাবে চিন্তা-ভাবনা করার যে সুযোগ পেতো এখন মোবাইলের কারণে তা অনেকটাই কমে গেছে বলে আমার মনে হয়। মোবাইলের অপব্যবহার তো এখন রীতিমত একটা আসক্তি বা মানসিক রোগে পরিণত হয়েছে। এখন তরুণদের মধ্যে অস্থিরতা, একাকীত্ববোধ ও হতাশা জনিত সমস্যা যে হারে বাড়ছে তা রীতি মত উদ্বেগজনক। মোবাইল তথা সামাজিক মাধ্যমের প্রতি আসক্তি এর অন্যতম প্রধান কারণ। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মোবাইল আসক্তির বিরূপ প্রভাব তাদের শিক্ষাজীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।কারণ, আসক্তির কারণে একটা ছেলে সারাদিন যত ঘন্টা মোবাইল নিয়ে বসে থাকে তার দশভাগের এক ভাগও পড়াশোনা করে না।
মোবাইল প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে আমাদের জীবনকে সহজ করেছে; বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু এর অপব্যবহার রোধ এখন এক বিরাট চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।এক্ষেত্রে তরুণদেরকে আবার বইমুখি করা বিরাট কাজে দিতে পারে। তাদের মধ্যে আবার পাঠোভ্যাস তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে অভিভাবক, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের এগিয়ে আসা দরকার। বিশেষ করে উপহার সামগ্রির তালিকায় আমরা বইকে প্রাধান্য দিতে পারি। আমরা জানি, সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উপহার প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে কাজ করে। আর বইয়ের চেয়ে মূল্যবান উপহার আর হতেই পারে না। কারণ, একটি ভাল বই একজন মানুষের জীবনকে পাল্টে দিতে পারে। তাই প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। বই সবচেয়ে ভাল বন্ধু। রোমান দার্শনিক সিসেরো বলেছেন, ‘‘যে ঘরে বই নেই তা একটি প্রাণহীন দেহের মতো।’’
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকাল বইয়ের উপহারকে অনেক ছোট করে দেখা হয়।এমনকি, স্কুল-কলেজ তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য যে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়, সেখানেও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে পুরষ্কার হিসেবে বই তুলে দেয়ার প্রবণতা কমে গেছে। তার পরিবর্তে দেয়া হয় থালা-বাসন, জগ, মগ ইত্যাদি। আমাদের রুচিবোধ আজ কোথায় এসে ঠেকেছে তা ভাবতেও অবাক লাগে।
এছাড়া সৃজনশীল ও মননশীল বইয়ের প্রতি বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের কেমন যেন একটা অনীহা কাজ করছে।তাদের দৃষ্টি এখন গাইডবই ও বোর্ড বইয়ের বাইরে অননুমোদিত সহায়ক বইয়ের বাণিজ্যের দিকে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:১০