প্রত্যেকেই নিজের মতকে সঠিক মনে করে এবং এটাই স্বাভাবিক। নিজের মতকে ভালো মনে করে বলেই মানুষ সেই মত অনুসারে কাজ করে। এটাকে আত্মবিশ্বাসও বলা যায়। ধরুন, আমি একটা কাজ করবো। এখন সেই কাজটাকে যদি আমি সঠিক মনে না করি তাহলে সেই কাজটা করা কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভবও হবে না। আমার বিবেকও কিন্তু তাতে সায় দিবে না। কারণ বিবেক সব সময় বিশ্বাসের অনুসারী হয়। আমি যদি শুকরের মাংস খাওয়া, মদ পান করা কিংবা বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন কিংবা পরকিয়া প্রেমকে ভাল কাজ মনে না করি তাহলে সেসব কাজ করতে গেলে আমার বিবেক আমাকে বাধা দিবে। কিংবা আমি যদি কোন ধর্মের প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস পোষণ করি, তাহলে সেই ধর্মের কোন বিধান লংঘন করা বা কোন ধরনের অবমাননা করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না এবং সেটা করতে গেলে আমি মোটেও স্বস্তি পাবো না, প্রতিনিয়তই আমার বিবেক আমাকে তিরষ্কার করবে। কিন্তু যারা উপরোক্ত কাজগুলোকে খারাপ মনে না করে, বরং ভাল কাজ বলে মনে করে, তাহল তারা সে কাজগুলো যথেষ্ট দৃঢ়তার সাথে এবং স্বস্তির সাথেই করতে পারবে। কারণ, উপরাক্ত কাজগুলোর পক্ষে তার এক ধরনের আত্মবিশ্বাস রয়েছে এবং এক্ষেত্রে তার বিবেকও তাকে কোন প্রকার বাধা প্রদান করবে না। কারণ, সে তো তার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কোন কাজ করছে না।
সমস্যা হলো, আমি যে কাজটাকে ভাল মনে করি আপনি তাকে ভুল মনে করেন, আবার আপনি যাকে ভাল মনে করেন আমি তাকে ভুল মনে করি। এটাও খুবই স্বাভাবিক। সবাই আমার মত করে চিন্তা করবে, আমার মত করে বুঝবে এটা আশা করা বোকামি। একটা বিষয়কে একেকজন একেক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করতে পারে। আমি হয়তো একটি বস্তুর সামনের অংশটাই দেখতে পারছি, কিন্তু পেছনের অংশটা আমার কাছে দৃশমান নয়।আবার আরেকজন হয়তো অন্য একটা অংশ দেখছে, কিন্তু আমি যেটা দেখছি, সেটা সে দেখতে পারছে না। আমরা কেউই হয়তো পুরা ব্যাপারটা দেখতে, বুঝতে ও উপলব্ধি করতে পারছি না, যার কারণে আমাদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য তৈরি হচ্ছে। এই মতপার্থক্য নিয়েই আমরা সমাজে সহাবস্থান করতে পারি, তবে তার জন্য শর্ত হলো আমাদের প্রত্যেককেই ভিন্ন মতকে সম্মান করতে হবে এবং সংঘাতে লিপ্ত হওয়া যাবে না। তবে হ্যা, আমরা পরস্পর মতবিনিময় করতে পারি, চিন্তা-ভাবনা শেয়ার করতে পারি।আমি যদি বুঝতে পারি যে, আমার মত ও দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে আপনার মত অধিকতর গ্রহণযোগ্য বা সঠিক, তাহলে আমি অবশ্যই অধিকতর ভাল মতটাকেই গ্রহণ করবো। জেনে-শুনে আমি কেন ভুলের মধ্যে পড়ে থাকবো? বরং সত্যটা গ্রহণ করতে গেলে আমাকে যদি বাধার সম্মুখিন হতে হয়, আমি যদি শারীরিকভাবে সত্যকে স্পর্শ করতে নাও পারি, আমার মন কিন্তু অবশ্যই সত্যের কাছে ছুটে যাবে, তাকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না। আপনি রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে মানুষের চলার পথকে রোধ করে দিতে পারবেন, সে শক্তি আপনার অবশ্যই থাকতে পারে, কিন্তু ব্যারিকেড দিয়ে মানুষের চিন্তার স্বাধীনতাকে আপনি কখনোই রোধ করতে পারবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৩৩