somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্যরচনাঃ এক্সকিউজ মি

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ডাক্তার ও পুলিশের মধ্যে কিছু চমকপ্রদ মিল আছে। এই দুই পেশার মানুষ সাধারণতঃ তাদের ক্লায়েন্টের সামনে হাসে না। মুখ গম্ভীর করে রাখে। এরা তাদের ক্লায়েন্টদের সাথে রহস্য করতে ভালোবাসে। যেমন ধরুন, আপনি কোন মামলার আসামী হয়েছেন। পুলিশ আপনাকে গ্রেপ্তার করতে এসেছে। আপনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী ব্যাপার ভাই,আপনারা
আমার বাড়িতে কেন?’ পুলিশ মুখ গম্ভীর করে বলবে, ‘থানায় গেলেই জানতে পারবেন।’ বলার সময় পুলিশের চোখে মুখে একটা রহস্য রহস্য ভাব থাকবে, যা দেখে আপনি ভীত বা বিভ্রান্ত হবেন। বাস্তবে আপনি কখনো আসামী না হয়ে থাকলে আমার কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য স্বেচ্ছায় আসামী হয়ে পুলিশকে বাসায় আমন্ত্রন করার দরকার নেই। বাংলাদেশের সিনেমা বা নাটক দেখলেই চলবে।

ঠিক একইভাবে পেশাব, পায়খানা ও রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট ডাক্তারের সামনে হাজির করার পর ডাক্তার সাহেব যখন আপনার প্রেসক্রিপশন লিখছেন তখন আপনি যদি জিজ্ঞেস করেন যে, ‘আমার কী হয়েছে ডাক্তার সাহেব?’, তাহলে তিনি গম্ভীর মুখে বলবেন, ‘আপনার এত কিছু জানার দরকার নাই। ওষুধ দিলাম, ঠিকমতো খাবেন। ঠিক আছে?’
অবশ্য পুলিশ ও ডাক্তারদের মধ্যে সবাই এমন গম্ভীর ও রহস্যপ্রিয় নন, কিছু ব্যতিক্রম আছে। যেমন, আমার এক আত্মীয় পুলিশ ইন্সপেক্টর তার অধীনস্থ এস,আই ও কনস্টেবলদের প্রায়ই নানারকম ধাঁধা বলে উত্তর জানতে চান এবং তারা উত্তর দিতে না পারলে নিজে উত্তর বলে দিয়ে হা হা করে হেসে লুটোপুটি খান। আবার আমাদের শহরে একজন মেডিসিনের ডাক্তারকে দেখেছি রোগীদেরকে জোক বলতে। জোক শুনে রোগযন্ত্রণায় কাতর রোগীদের মুখে হাসি না ফুটলেও ডাক্তার সাহেব নিজে হো হো করে হেসে সেটা পুষিয়ে দেন। তো এগুলো হলো ব্যতিক্রম।

এই দুই পেশার মানুষের মধ্যে আরও যেসব মিল পাওয়া যায়, সেগুলো এরকমঃ

* পুলিশের হাতের লেখা কোর্টের পেশকার ও উকিল মুহুরী ছাড়া অন্যেরা বুঝতে পারেনা। ডাক্তারের হাতের লেখা ওষুধের দোকানদার ছাড়া কেউ বোঝে না (কিছু ব্যতিক্রম বাদে)।

* এই দুই পেশার লোকের কাছে ফ্রি সার্ভিস বলে কিছু নেই (কিছু ব্যতিক্রম বাদে)।

* এই দুই পেশার লোকেরই বদ্ধমূল ধারণা যে, তাদের সামনে যে লোকটি বসে বা দাঁড়িয়ে আছে তার অবশ্যই কোন না কোন সমস্যা আছে (এ ক্ষেত্রে কোন ব্যতিক্রম নেই)।

* এই দুই পেশার লোকই তাদের ক্লায়েন্টদের সাথে রসিকতা করা পছন্দ করে না (এ ক্ষেত্রেও কোন ব্যতিক্রম নেই)।

কিছুদিন আগে একটা কাজে আমি থানায় গিয়েছিলাম। থানায় ঢোকার মুখে দেখলাম, দু’জন মহিলা পুলিশ সেখানে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছে। আমাকে দেখেই তারা হাসি থামিয়ে মুখ গম্ভীর করে ফেললো এবং এমনভাবে আমার দিকে তাকালো যেন আমি এইমাত্র স্ত্রীকে খুন করে থানায় আত্মসমর্পণ করতে এসেছি। আমি রিটায়ার করা বুড়ো মানুষ। এই বয়সে পুলিশ দেখলে ভয় ডর বেড়ে যায়। তাই হাসি হাসি মুখ করে বললাম, ‘মায়েরা ভালো আছেন?’
মায়েরা আমার গতিরোধ করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো, ‘কে আপনি? এখানে কী চাই?’
আমি থতমত খেয়ে বললাম, ‘কিছু চাই না। ওসি সাহেবের সাথে দেখা করতে এসেছি।’
এক মা ধমক দিয়ে বললো, ‘ওসি সাহেবের কাছে কী দরকার?’
আমি বললাম, ‘উনি আমার স্ত্রীর ভাই। একটু পারিবারিক কথা আছে।’
আর এক মা আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত উকুন বাছার মতো পরখ করে দেখে বললো, ‘পাগল নাকি?’
আলসেমীর কারণে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে দাড়ি গোঁফ না ছাঁটায় আমাকে পাগলের মতো দেখাচ্ছিল কী না কে জানে! চেহারায় হয়তো খানিকটা ওরকম ভাব ছিল। না হলে মহিলা পুলিশের কাছে সুস্থ মানুষকে পাগল মনে হবে কেন?

এ তো গেল পুলিশের কথা। এবার একটু ডাক্তারের কথা শুনুন। চার বছর আগে আমার একটা মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছিল। তারপর থেকেই শরীরের নাট বল্টুগুলো মাঝে মাঝে ঢিলে হয়ে যায়। ফলে প্রায়ই আমাকে ডাক্তারের কাছে ছুটতে হয়। কিন্তু বার বার গিয়েও তাদের সাথে আমার সখ্যতা হয় না।
গত কিছুদিন থেকে বাঁ চোখে একটু ঝাপসা দেখছিলাম। চোখ দেখাবো দেখাবো করে একটু দেরিই হয়ে গেল। চোখের ডাক্তার ইয়ং ম্যান। সম্ভবতঃ চল্লিশ পার হননি। চেহারায় রাগী রাগী ভাব। বললেন, ‘কী হয়েছে?’
আমি বললাম, ‘কী জানি, হয়তো ছানি।’ আমার অজান্তেই উত্তরটা সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমার সংলাপের মতো হয়ে গেল। ডাক্তার সাহেব স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর গম্ভীর মুখে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এবং ব্লাড প্রেশার মেপে বললেন, ‘রেটিনোপ্যাথী।’
আমি বললাম, ‘রেটিনোপ্যাথী? আমি তো এ্যালোপ্যাথী হোমিওপ্যাথীর নাম শুনেছি। রেটিনোপ্যাথীর নাম তো কখনো শুনিনি!’
ডাক্তার সাহেব গম্ভীর মুখে বললেন, ‘আপনি কী আমার সাথে রসিকতা করছেন?’
আমি জিবে কামড় দিয়ে বললাম, ‘ছিঃ ছিঃ, রসিকতা করবো কেন?’
‘শুনুন।’ ডাক্তার সাহেব ভয়ানক গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘রেটিনোপ্যাথী কোন চিকিৎসা পদ্ধতি নয়। এটা আপনার রোগের নাম। হাই ব্লাড প্রেশারের কারণে আপনার বাঁ চোখে রক্তক্ষরণ হয়ে ঝাপসা দেখছেন।’
‘আমার প্রেশার কত?’
‘দুশো কুড়ি বাই একশো। এত হাই প্রেশার নিয়ে রোগীরা সাধারণতঃ রেগে থাকে। আর আপনি আমার সাথে রসিকতা করছেন? আজব লোক তো আপনি!’
আমি মাথা চুলকে বললাম, ‘এক্সকিউজ মি! বুঝতে পারিনি।’
আমার ওপর রাগ করেই কী না কে জানে, ডাক্তার সাহেব কোন চিকিৎসাই দিলেন না। পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলাফল লিখে প্যাডের একটা পাতা ছিঁড়ে তিনি আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি একজন মেডিসিন বা কার্ডিয়াক ফিজিশিয়ানকে দেখিয়ে আগে ব্লাড প্রেশার কন্ট্রোলে আনুন। তারপর রেটিনোপ্যাথী চিকিৎসার জন্য ঢাকার ফার্মগেটে ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে যাবেন। রাজশাহীতে এ রোগের চিকিৎসা নাই।’

দেখুন, কী হ্যাপা হলো! তাই বলছিলাম কী, ভুলেও কখনো পুলিশ ও ডাক্তারের সাথে রসিকতা করবেন না।
*****************************************************************************************************************
রি-পোস্ট।
ছবিঃ নেট।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২৭
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×