বি,টিভি(বাংলাদেশ টেলিভিশন) কখনো আগ্রহের সাথে তো দূরে থাক এমনিতেও দেখা হয় না। কিন্তু আজ চ্যানেল পালঠাতে পালঠাতে বি, টিভি তে চোখ পড়ল সেখানে সম্ভবত "লেইট নাইট" নামক অনুষ্ঠানে একটি আমেরিকান মেয়ের ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে।কেন জানি কৌতুহল বশত থামলাম, এবং অনেকটা আগ্রহের সাথেই সাক্ষাতকারটা দেখলাম।
এবং কেন জানি বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে, এক ভিনদেশির কেন বাংলাদেশি পথ শিশুদের জন্য বারবার ছুটে আসতে হয় বাংলাদেশে, বাংলা ভাষা শিখে! , কেনই বা সে নিজেকে সপে দিয়েছে তাদের সেবায়, কেনই বা তাদের জন্য জমি কিনতে গিয়ে অপর এক বাংলাদেশির হাতেই প্রতারনার স্বিকার হতে হয় তাকে!, কেনই বা আজ সে ভিনদেশি আমাদেরই পথ শিশুদের জীবন সম্পর্কে বলে এবং হাজারো দর্শকদের সামনে টিভি সেটে অঝর নয়নে কাঁদে! ।
এবং সেই ভিনদেশির কান্নায় আমি দেখেছি মানুষের প্রতি ভালবাসা, স্নেহ-মায়া-মমতা, এক অদ্ভুদ আবেগের কান্না ছিল সেটা, যা দেখে আমার চোখের এক কোনায় সত্যিই নিজের অজান্তেই জল এসে গেল। তার বর্ননা ছিল, আমাদের পথ শিশুরা পথের এক পাশে শীত, গীষ্ম, বর্ষা দিব্বি কাটিয়ে দিতে পারে, পারে পরে থাকতে প্লাস্টিকের একটা বড় অংশ দিয়ে তাবু আকারের ঘর তৈরী করে নালা-নর্দমার পাশে বা ডাস্টবিনের পাশে দিব্বি রাত কাটাতে, ময়লা পানি খেয়ে নিজেদের তৃষ্ণা মিটাতে(সে পানি মিষ্টিও বটে! তবে পরিশুদ্ধ নয়)। অথচ একদিন সেই পানি খেয়ে ভিনদেশীনির জ্বর উঠে গিয়েছিল।
ভিনদেশীনি আরো বলেছিল আমাদের পথ শিশুদের হাতে-পায়ে কাটা ছেড়ার প্রচুর দাগ, হাতে পায়ে কাটা ছেড়ার ক্ষত এবং যা ইনফেকশনের কারণে "ঘা" তে পরিণত হয়েছে, তখনও সেই ভিনদেশি কাঁদছিল এবং তার শ্বেত বর্নের মূখ লাল হয়ে (শ্বেত বর্ণের মানুষদের মুখ তিন সময়ে লাল হয়, ১/ যখন রাগ করে ২/ যখন লজ্জা পায়/ যখন অন্তস্থল থেকে কান্না করে) আবারো সেটারই জানান দিচ্ছিল যে, তার কান্নায় জড়িয়ে আছে তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা, জানান দিচ্ছিল তাদের দুঃখে সেও দুঃখি, আরো জানান দিচ্ছিল তাদের ব্যথায় সেও ব্যথিত, তাদের কষ্টে তার হৃদয়ে এক অতৃপ্ত শূন্যতা বিরাজমান, তার কান্নায় আমি দেখেছি তাদের জন্য কিছু করার মাধ্যমে সেই ভিনদেশি পায় দারুন প্রশান্তি।
এবং সে এও বলেছে, আমি এটা দেখে অবাক হয়েছি যে, এত কিছুর পরও তারা খুব হাশি-খুশি তাদের জীবন নিয়ে তাদের কোন আফসুস নেই, তারা খুব শক্ত ও শক্তিসালি, মানে মনের দিক থেকে খুব শক্ত তারা, মানসিক শক্তি ও মনোবল তাদের প্রবল।
তাই সে পথ শিশুদের প্রশিক্ষনের জন্য এখানে একটা স্কেটিং পার্ক বানাতে চেয়েছিল, যার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত জমির, আর জমি কিনতে গিয়েই প্রথম প্রদক্ষেপেই স্বিকার হয় প্রতারণার, এক বাঙ্গালী দেখিয়ে দিল তাকে এক রুপ বাঙ্গালীর, আবার আরেক বাঙ্গালী পরিবার মেয়ের স্থান দিয়ে তাকে দিল বাঙ্গালীদের আথেতীয়তা ও বন্ধুত্বতার উদাহারন। যা সে তার দেশে দেখতে পায় না, এখন তার দেশে ফিরে যেতে তার একটুও ইচ্ছে হয় না তবু ফিরে যেতে হয় কাজের টানে কারণ কা করলেই তো অর্থ যোগার হবে।
সে তাদের স্কেটিং শিখাচ্ছে এতে তাদের আগ্রহ,উদ্দিপনা ও খুশির কমতি নেই, খুব আগ্রহের সাথেই তারা তা শিখে যাচ্ছে।
চিন্তা করতেছি আমারা কেন সেই ভিনদেশির মত ভাবতে পারি না, চিন্তা করতে পারি না আমাদেরই একটা অংশের কথা। আমরা কি সম্মিলিত ভাবে পারি না? দূর করতে তাদের দুঃখ-দূর্দশা!। তারা পিছিয়ে থাকলে তো আমাদেরই ক্ষতি, আমরা সব দিক থেকে দেশের উন্নতির কথা ভাবতে পারি অথচ সেই দেশেরই একটা অংশ আজ পঙ্গু। সাহায্য পেয়ে পঙ্গত্বকে জয় করেছে এমন হাজারো নজির আছে, দরকার শুধু সাহায্যের হাত, বাড়িয়ে দিলেই তারা পঙ্গুত্বকে জয় করে নেবে, এক পূর্নাঙ্গ দেশ উপহার দেবে।
সাহায্য করতে না পারি অন্তত এমন কাজে আগ্রহিদের সহযোগিতা তো করতে পারি।