somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি কলেজ জীবন যেরকম আশা করেছিলাম, সেটা ঠিক সে রকম হল না ! ২য় পর্ব [ভুমিকা]

১১ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন

আফসানা খাতুন ড্রয়িং রুমে বসে আছেন।
তিনি এবার দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালেন। দশটা বেজে পাচ মিনিট হয়ে গেছে। ছেলেটা পাচ মিনিট হল এখানে বসে আছে। তাকে দশটার দিকে আসলতে বলা হয়েছিল। সে একদম সময় মত এসেছে যেটা কিনা বর্তমান ছেলে-মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখাই যায় না। অবশ্য তারা বয়স্করাও যে সময়নুবর্তিতা মেনে চলেন তা না।
এই বাংলাদেশে সময় মেনে চলা হয় বলেই দেশ অনেক পিছিয়ে আছে। অন্তত আফসানা খাতুন তাই মনে করেন। তিনি সময় মেনে চলাকে সবসময় প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন, এবং তিনি তার অফিসেও এই নিয়ম একদম কঠোর ভাবে পালন করেন।
ছেলেটা শান্তভাবে বসে আছে। অন্যকোনো ছেলে হলেও এই পাচমিনিট তার সামনে বসে থাকলে ভয়ে একদম গলে যেত। ছেলের ব্যক্তিত্ব তার চোখে পড়েছে। এই ব্যক্তিত্ব থাকার কারনে ছেলেটাকে তার তেমন ভালো লাগেনি। তিনি বুঝতে পেরেছেন এই ছেলে সহজে তার কথায় নাচবে না। আর যে ছেলে বা পুরুষ তার কথায় নাচবে না তাদেরকে তিনি একদমই দেখতে পারেন না।
মনে মনে অবশ্য তার মেয়ে পছন্দকে প্রশংসা করতে পারলেন তিনি। ছেলেটা দেখতে শুনতে খারাপ না। সাধারন জামা পড়ায় তাকে এত ভাল লাগছে যদি সে সেজেগুজে আসে তাহলে কি হবে কে জানে?
আফসানা খাতুন গলা খাকারি দিয়ে, “তোমার সাথে আমার মেয়ের সম্পর্ক কতদিন ধরে?”
“জ্বী, ছয় মাস যাবত,” ছেলেটা জবাব দিল।
“তুমি আগে ওকে প্রস্তাব দিয়েছ নাকি ও তোমাকে আগে প্রস্তাব আগে দিয়েছে?”
“বলতে গেলে সে আগে দিয়েছে, আমি জানতে পারি তার বান্ধবীর মাধ্যমে।”
ছেলেটা কথার বলার ধরন তার কাছে তেমন ভালো লাগল না। ভাল না লাগার কারন আছে, ছেলেটা তার মন মত আচরন করছে না। তার সামনে আসলে অনেক বুড়ো লোকের প্যান্ট ভিজে যায়, আর এই ছেলে কিনা শান্তভাবে সব আচরন করছে!
“তুমি কি জান, তোমাদের স্ট্যাটাস আর আমাদের স্ট্যাটাস একদম আলাদা?”
ছেলেটা চুপ করে থাকল, কিছু বলল না।
আফসানা খাতুনের আরো ইচ্ছা ছিল ছেলেটাকে কড়া বলার, কিন্তু পারছেন না একটা কারন সেটা হল, তার মেয়ে। তার একমাত্র মেয়ে এই ছেলের জন্য পাগল হয়ে গেছে। সে নিজ থেকে গিয়ে এই ছেলের সাথে সম্পর্ক করেছে। তার মেয়ে জানে তার সাথে এই ছেলের সম্পর্ক তিনি মেনে নিবেন না। তারপরেও সে এই ছেলের সাথে সম্পর্ক করেছে।
তিনি তার মেয়ের সাথে এই ছেলের সম্পর্ক জানতে পারেন মেয়ের ডায়েরী পড়ে। তার মেয়ে নিজের পড়ার টেবিলে ডায়েরী বেখেয়ালবশত রেখে গেছে। আফসান খাতুন পড়তে চান নি কিন্তু কৌতুহলের কাছে পরাজিত হয়ে তিনি ডায়রীটা পড়ে ফেলেন।
“আমি চাইনা আমার মেয়ের সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক থাকুক,” আফসানা বেগম এবার সরাসরি কথায় চলে আসলেন।
এই কথা শোনার পর ছেলের চোখের পাতা একটু হলেও কেপে উঠল। সে চুপ করে আফসানা খাতুনের দিকে তাকাল, তারপর সে বলে উঠল, “সামিরার কি মত?”
সামিরা আফসানা খাতুনের একমাত্র মেয়ে।
“তার কথা একই, সে তোমার ব্যাপারে আর আগ্রহী নয়।”
ছেলেটা আফসানা খাতুনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আফসানা বেগমও কম যান না তিনিও ছেলেটার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে থাকলেন। তার কাছে কেন যেন মনে হল এই দৃষ্টি যুদ্ধে হেরে যাবেন। তখনই তার মেয়ে সামিরার প্রবেশ, সে বলে উঠল, “মা, তুমি কি আমাদের একটু একা কথা বলতে দিবে?”
মেয়ের এই কথা শুনে আফসানা খাতুন থতমত খেয়ে গেলেন। তিনি কিছু বলতে যাবেন তখন সামিরা বলে উঠল, “মা প্লীজ।”
আফসানা খাতুন আর কিছু বললেন না তিনি উঠে গেলেন। আজকে কেন জানি তার সব কিছু উল্টোপাল্টা হয়ে যাচ্ছে।
আফসানা খাতুন চলে যেতেই সামিরা তার মায়ের জায়াগায় বসল, তারপর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকল। সামিরা কিভাবে শুরু করবে কিছু বুঝতে পারছে না, সে সামনে তাকাল। একজোড়া চোখে দিকে নজর গেল তার প্রথমে। যে চোখ দেখে সে ছেলেটার প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। সেই চোখ বলছে, তুমি কি বলতে চাও বল, আমি শুনছি।
সামিরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, তারপর বলে উঠল, “এবার আমাদের মাঝে কথা হবে, শুধু তোমার আর আমার মধ্যে।”

*

বড়সড় একটা হাই তুলে আমি ডেস্কের উপর মাথা রাখলাম। গতরাত আমাদের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। আমাদের মানে আমার আর রাতুলের উপর। গতকাল লায়লা আপু(শুধুমাত্র কলেজের বাইরে) আমাদের বাসায় এসেছিল। তারপর কথায় কথায় তিনি বলে ফেললেন ইশরাতের ঘটনাটা। এতদিন চেপে রেখেছিল সে গতকালেই সে ফস করে সব বলে দিল।
আপি সব কথা শুনে গরম করে আমাদের দিকে তাকাল, তারপর নির্দেশ দিল একশটা পুশ-আপ দিতে। প্রথমে অনেক ক্ষমা চাওয়ার পরেও আপার মন গলল না। যখন বলে উঠল, “পুশ-আপ দিবি নাকি বেত...”
আপির এটা বলতে দেরী আমার পুশ-আপ শুরু করতে দেরী হল না। আমার দেখাদেখি রাতুল সুন্দর ভাবে আমার পাশে এসে পড়ল।
একশটা পুশ-আপ আমার জন্য কঠিন হলেও অসম্ভব ছিল না। আমার ঘন্টাখানেরকের মত লাগলেও রাতুলের অনেক সময় লাগল। সে ছটফটে হলেও, শারীরিক কসরত সে সহ্য করতে পারে না। টেনে টুনে কোনোমতে পঞ্চাশ বার দিয়ে সে একবারে ফ্লোরে শুয়ে পড়ল। উঠারো ক্ষমতা ছিল না।
আমি তাকে কোনোমতে তার রুমে নিয়ে গেলাম। তারপর আমার রুমে গেলাম। আমার বাহু টন টন করছিল ব্যাথায়, আর সে ব্যাথায় ঘুম ঠিক মত হয়নি। আপি অবশ্য পরে একটা পেইন কিলার নিয়ে এসেছিল। আর রাতুলের হাত সে মালিশ করে দিয়েছে।
“এত ক্লান্ত কেন ?” সুমনা আমার সামনের বেঞ্চে বসে আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল।
“উপকারে ফল,” আমি বলে উঠলাম।
“কার উপকার করলে তুমি?”
আমি চোখ সরু করে সুমনার দিকে তাকালাম কিন্তু তার চোখে নিখাদ প্রশ্ন দেখে কড়া কথা বলা থেকে বিরত থাকলাম।
এই দুইমাস যাবত সুমনার অনেক পরিবর্তন হলেও, বাহ্যিক দিক দিয়ে তেমন পরিবর্তন তেমন হয় নি। আগে বেণী করত কিন্তু এখন চুল ছোট করার কারনের সে বেণী এখন আর করতে পারে না। বেণী ছাড়া তাকে অনেক ভাল লাগে দেখতে। আগে অনেকেই তার দিকে তাকাত না এখন তার উপর অনেক ছেলেরই নজর পড়ে গেছে।
সে আমার দিকে এক তাড়া কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এখানে সব প্ল্যান করা আছে।”
“কিসের প্ল্যান?”
আমার এই প্রশ্ন যেন তাকে অবাক করল।
“ভুলে গেলে নাকি আমাদের নতুন কেসের কথা।”
নতুন কেস মানে নতুন সমস্যার কথা। ইশরাতের ঘটনার পর আমাদের নাম একটু হলেও ছড়িয়েছে। এরপর আমাদের পসার একটু বেড়েছে। সুমনা এটাতে অনেক খুশী, দলের আর মোটামুটি সবাই খুশী। রাতুল প্রথম প্রথম তেমন খুশী না থাকলেও এখন সে খুশী কারন তার জাতীয় সমস্যা এখন আমাদের সামনে এবং সে খুবই আগ্রহের সাথে এটাতে নাক গলিয়েছে।
আমি আমার নাক গলাতে চায়নি। না গলানোর কারন আছে, কারন এটা প্রেম-ভালোবাসা ঘটিত ব্যাপার।
আমাদের এক সহপাঠী, সে পাশের ক্লাসের এক মেয়েকে পছন্দ করেছে। সে চায় আমরা তাকে সাহায্য করি। না, মেয়েকে তার প্রেমে পড়তে না, আমাদের সহপাঠীকে এইভাবে সাহায্য করতে যে মেয়েটা তাকে অন্যরকম চোখে দেখা শুরু করে বাকী কাজ সে একাই করতে পারবে।
সুমনা আমার দিকে কাগজের তাড়া বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “নাও, ‘প্রজেক্ট আতা’ এর খাতা।”
প্রায় এক দিস্তার মত খাতা আমার নাকের সামনে পড়ে রইল, আর আমি করুন চোখে সেটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
বুঝতে আসুবিধা হচ্ছে, তাহলে ঘটনা প্রথম থেকেই শুরু করি...
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×