হ্যারিসন স্মিট। ফর্সা গোলগাল চেহারার শান্ত স্বভাবের মানুষ। ষাটের কাছাকাছি বয়স। চুলে সাদা রং কব্জা করেছে পুরোপুরি। রিটায়ার করেছেন গত বছরেই। নাসার সাথে হিসেব নিকেষ শেষ, এখন অপেক্ষায় আছেন জীবন হিসাবের শেষ সমীকরণ সমাধানের। ছয় মাস ধরে আছেন বাড়িটায়। বিশাল ডুপ্লেক্স বাড়ি, সামনে অতি যত্নে বেড়ে উঠা লাইলাক সাড়ি করে লাগানো। শীতের সময় লাইলাকের ঘ্রানে মনের ভ্রমর দিক বেদিক ছুটতে থাকে; নিশ্চুপ পরাগায়নের ক্ষিদা মেটাতে অক্ষম জেনেও উড়ে বেড়ায় পুষ্প থেকে পাপড়িতে।
বাড়ির পেছন দিকে বিশাল সুইমিংপুল। অনেকদিন পানি বদলানো হয়নি। ক্লোরিনে পানি দেহ মনকে আর আগের মত টানতে চায় না। সব ফুরিয়ে আসার সময় ঘনিয়ে আসলো বলে।
বাড়িটা পছন্দ করেছিল তেরেসা। স্মিটের তখন অর্থের ছড়াছড়ি। এনিভারসারিতে চোখ বেধে তেরেসা কে নিয়ে চলে আসলেন এখানে। চোখ খুলতেই সব পরিষ্কার! আমন্ত্রিত অতিথিরা এক সাথে হাত তালি দিয়ে উঠল। তেরেসার হাসিতে ভরা মুখখানা দেখে কিছু সময়ের জন্যম নিজেকে ভাগ্যবান স্বামীদের অন্তর্ভুক্ত করা ভুললেন না। চেচিয়ে বলেই বসলেন, আমি ভালবাসি তোমায় তেরেসা..... অনেক... অনেক...... ভালবাসি!!!
আজ সুপার মুন। চাঁদেরকণা নিঙড়ে পড়ছিল নীল আকাশ চুইয়ে। বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে আছেন স্মিট। বাতাসে নোনাগন্ধ, সমুদ্রের বিশাল ঢেঊয়ের শব্দ নীল অজানা দেশের গোপন কোড বয়ে নিয়ে শরীরে মিশে যাচ্ছে।
রাত দুইটা। নিদ্রাহীন রাত্রিতে মহাশুন্য ফাকা লাগছে। তেরেসা ঘুমিয়েছে অনেক আগেই। নীল রাত্রির জোছনাতে তার ভরা মুখটা দেখা যাচ্ছে।
সৌন্দর্যের মদ বিভ্রান্ত মনে প্রশ্ন হয়ে উকি দিল।
একি সেই চাদ যার বুকে পা রাখার জন্য এতটা আকর্ষিত হয়েছিলাম?
কই!! কাছ থেকে তো ধুলো আর পাথর শঙ্কুল
অদেখা বৈ কিছুই না।
কিন্তু দূর থেকে লক্ষী রাজকন্যাটির মত, যেন জেগে আছে ;রাগ করে কথা বলছে না।
চাদ আর ঘুমিয়ে থাকা চাঁদনি কি দূর থেকেই সুন্দর! ভাবনা গুলো জট পাকিয়ে যাচ্ছে।
টিকটিক শব্দে নীরবতা ভঙ্গ হলো। দেয়ালে ঝুলন্ত টিকটিক ভাষাহীন শব্দে সঙ্গ দেয়ার দাবি জানাচ্ছিল। ভরা জোছনার আলোতে নীল দেখাচ্ছিল সেটি।