ছবি: প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাতে ভারতরত্ন পুরষ্কার তুলে দেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি দিল্লির একটি সামরিক হাসপাতালে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রয়েছেন।
দিল্লির আর্মি’স রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল হাসপাতালে তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। আঘাতের কারণে তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছিল যা সফলভাবে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। যার দরুন ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এর আগে তার করোনাভাইরাস পরীক্ষা হলে ফল পজিটিভ আসে।
প্রণব মুখার্জির অবস্থা সংকটাপন্ন
প্রণব মুখার্জি আমাদের দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব রাখেন যা তার বই ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস ১৯৯৬-২০১২’ উল্লেখ করেন। তার লেখা সেই বইয়ের কিছু উল্লেখ্যযোগ্য অংশ আমাদের দেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তার কিছু অংশ নিম্নে উল্লেখ করা হল:
প্রণব মুখার্জি লিখেছেন, ‘আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি একটা শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দিকে জোর দিয়েছিলাম।’
তিনি আরও লিখেছেন, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জে. মইন উ আহমেদ ছয় দিনের ভারত সফরে যান। এ সময় প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জে. মইন।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা প্রসঙ্গে প্রণব মুখার্জি লিখেছেন, ‘তাকে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির গুরুত্ব বোঝাই। তিনি এই ভয় পাচ্ছিলেন যে, শেখ হাসিনা বের হয়ে আসার পর তাকে চাকরিচ্যুত করতে পারেন। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব নিই এবং শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলেও তার বহাল থাকার ব্যাপারে তাকে আশ্বস্ত করি।’
এ ব্যাপারে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে তার আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘আমি খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা উভয়ের মুক্তির ব্যাপারে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সাক্ষাৎ চাই। তৎকালীন ভারতের জাতীয় উপদেষ্টা এম কে নারায়ণের মাধ্যমে আমার হস্তক্ষেপে আমি সব রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি এবং দেশটির স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করেছিলাম।’
এর কয়েক বছর পরের ঘটনা জানিয়ে প্রণব মুখার্জী তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন, বেশ কয়েক বছর পর, জেনারেল মইনের যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার পথ সহজ করে দিই, তখন তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
ছবি: জে. মঈন ঘোড়া বুঝে নিচ্ছেন জে. কাপুরের কাছ থেকে।
প্রণব মুখার্জি আরও লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনা আমাদের ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু। আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির মাধ্যমে ভারত তার দাবি পূরণে সহায়তা করার চেষ্টা করেছে। শেখ হাসিনা কারাগারে থাকার সময় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা তাকে পরিত্যাগ করলে আমি তাদের ভৎর্সনা করে বলি, কেউ যখন এমন বিপদে থাকে, তখন তাকে ত্যাগ করা অনৈতিক। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হয়। শেখ হাসিনা বিপুল বিজয় পান।’
ছবি: বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি।
এই বই প্রকাশিত হওয়ার পরে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে প্রণব মুখার্জী বলেন, ১৯৭১ সালে জন্ম নেয়া ১২ বা ১৩ কোটি মানুষের এই দেশ। আমি এখনও স্মরণ করি তখনকার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পার্লামেন্টের উভয়কক্ষে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এই হাউজকে জানিয়ে আনন্দিত হচ্ছি যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এখন ঢাকা হলো মুক্ত বাংলাদেশের মুক্ত রাজধানী।’
ছবি: যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী
সে তার কাজ সঠিক ভাবে পালন করেছে। আর আমাদের মহারথিরা ? ইতিহাসে তারা কিভাবে লিপিবদ্ধ হবে?
তথ্যসূত্র সমূহ:
প্রণব মুখার্জীর বই নিয়ে বাংলাদেশে কেন এত আলোচনা?
জেনারেল মইনকে বিদায় করেছিলেন প্রণব মুখার্জি
ছবি: নেট থেকে নেয়া
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:১৫