এইজন্যই আমি বলি , গনতন্ত্র কখনোই কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হতে পারে না , বরং এটা বৈশ্বিক শান্তির বিষয় । আর গনতন্ত্রের হত্যাকারী প্রত্যেক স্বৈরশাসকই পৃথিবীর জন্য ভয়ংকর । এটা আবারো প্রমাণিত হলো ।
ইউক্রেন যুদ্ধ দেখিয়ে দিলো , সকল স্বৈরশাসক প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে গোপনে তারা রাশিয়াকে সমর্থন করে । মধ্যপ্রাচ্যের রাজারাও একেবারে চুপ , সবচাইতে সাংঘাতিক ব্যাপার হলো - তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রাশিয়াকে পুরো দোষ না দিয়ে উল্টো আমেরিকা ইউরোপের সমালোচনা করছে । আমি ধারণা করি ভবিষ্যতে এরদোয়ান একজন স্বৈরশাসক হবেন । পুতিন সকল স্বৈরশাসকদের এটাই বলছে যে , আমেরিকা ইউরোপের পক্ষে গেলে তোমাদের সিংহাসন থাকবে না ।
বর্তমান পৃথিবীতে ছোটো মাঝারি এবং বড়ো সাইজের স্বৈরশাসক আছেন , যারা মানুষের টুঁটি চেপে ধরে থাকে । বাংলাদেশের এক বুদ্ধিজীবী গাফফার চৌধুরী , যে ব্যাক্তি লন্ডনে বসে লন্ডনের খারাপ সমালোচনা করেও শান্তিতে শুয়ে আছে । এই শয়তানের নিকট আমার প্রশ্ন , তুমি লন্ডনের সমালোচনা না করে রাশিয়া ও চীন গিয়ে , চীন ও রাশিয়ার সামান্য খারাপ সমালোচনা করে দেখো , তোমার কি হাল হয় । আর এটাই আমেরিকা ইউরোপের সৌন্দর্য , যেখানে মত প্রকাশের এবং সকল কাজে সকল জীব পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে থাকে । আমি লোকটাকে লানত করছি , সে যেনো ব্যার্থ হয় , ইহকালে এবং পরকালে ।
প্রিয় গনতান্ত্রিক বিশ্ব , আপনাদের একত্র হতে হবে , দুর্বল গনতান্ত্রিক দেশে সর্বোচ্চ চাপ দিয়ে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে । দুর্বল গনতন্ত্রের তালিকায় ভারতও আছে , গনতান্ত্রিক বিশ্বকে বলবো ভারতকে কোনোভাবেই হাতছাড়া করা যাবে না । ভারতে শক্তিশালী গনতন্ত্র না থাকলে বিশ্বব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে । তাই গনতান্ত্রিক পৃথিবীকে বলবো এখন থেকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে গনতন্ত্রের জন্য কাজ করুন এবং স্বৈরশাসকদের উপর ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করুন ও বিচ্ছিন্ন করে ফেলুন , যাতে তারা পূর্ণ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য হয় ।
মধ্যপ্রাচ্যকে গনতন্ত্রের সাহায্যকারী হিসেবে কাছে টেনে নিন এবং ফিলিস্তিনে পরিপূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন । ইউরোপীয় ইউনিয়ন তো ফিলিস্তিনের পক্ষে বিবৃতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করতে চান , যা মোটেই কাম্য নয় । ইউক্রেন যুদ্ধে তো আপনারা শুধু বিবৃতি দিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছেন না , অস্ত্র ও বুদ্ধি এবং বিপক্ষকে চরম অবরোধ দিচ্ছেন । তিক্ত হলেও সত্য কথা হলো - আমেরিকা এবং ইউরোপ সম্পূর্ণ সততার সাথে চলেন না এবং অনেস্টি ইজ দি বেস্ট পলিসি কথাটা মোটেই মেনে চলেন না , যদি চলতেন , তাহলে আফগানিস্তানের জনগনকে শয়তান তালেবানের হাতে ছেড়ে চলে আসতেন না ।
এখন ইউক্রেন নিয়ে বলি - সত্যিই ইউক্রেনীয়রা বীরের জাতি , চমৎকার জাতি এবং মহান জাতি । সারা বিশ্ব তাদের প্রতিরোধ দেখে অবাক । নিকট অতীতে ( ২০০ বছরের মধ্যে ) এমন মনোবল কারো মধ্যে দেখা যায়নি , এটা মহান আল্লাহর এক বিশেষ দয়া এবং মহান আল্লাহর এক মর্যাদাবান বন্ধুর বিশেষ দোয়া । আল্লাহ অবশ্যই তাঁর বন্ধুর দোয়া কবুল করেন । আমি বিশ্বাস করি ইউক্রেনীয়দের মৃত্যু ঈমানের সাথে হচ্ছে , কারণ তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জন্য লড়ছে । তাছাড়া হাদিসে আছে ( মেশকাত ৭৫, ৭৬ নম্বর হাদিস এবং হাদিস দুটোই বুখারী মুসলিমের হাদিস ) মানুষের শেষ আমল ভালো হলে , তার মৃত্যু ঈমানের সাথে হবে এবং সে জান্নাতে যাবে ।
কিছুদিন পূর্বে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ইসরায়েলের পক্ষে অন্যায়ভাবে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন । আমি মুসলমানদেরকে উল্টো প্রশ্ন করবো , আপনারা ইসলামকে সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদী এবং জোরজবরদস্তি করে সহ্যের চাইতে লক্ষ কোটি গুণ বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার ধর্ম হিসেবে প্রমাণ করেছেন । তাহলে ইসলাম এবং মুসলমানকে আমেরিকা ইউরোপ ভালবাসবে কেনো বা পছন্দ করবে কেনো , বরং ঘৃণা করাটাই স্বাভাবিক । আপনারা নিরীহ মানুষকে বোমা মেরে উড়িয়ে দিচ্ছেন , মানুষের উপর ধর্মকে চাপিয়ে দিচ্ছেন , অথচ কোরানে আছে - "ধর্মে জোরজবরদস্তি নেই" ( আল কোরান , ২ : ২৫৬ ) । তাহলে আমাদেরকে ভালবাসবে কে ? তাছাড়া আপনারা বলেন কোরান বিশ্বমানবতার মুক্তির সনদ , অথচ এই বিশ্বায়নের যুগে গত ২০০ বছর ধরে সেই সনদ আপনারা তৈরি করতে পারেন নাই । তাহলে মুসলমানদেরকে ভালবাসবে কিভাবে , বরং ঘৃণা জিদ হিংসা করাই স্বাভাবিক ।
আলহামদুলিল্লাহ , মহান আল্লাহর দয়ায় আমি , কোরান সুন্নাহর আলোকে বিশ্বমানবতার মুক্তির সনদ দেখিয়েছি , যা আমার লেখাগুলো পড়লে বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ । তাছাড়া ইউরোপ আমেরিকা ইসলাম ও মুসলমানকে ঘৃণা করার কারণ হলো ইসলাম ফোবিয়া , আর এই ইসলাম ফোবিয়া তৈরি করেছে মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদীরা । ইসরায়েল সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে ।
ইউক্রেনীয়দের বলবো কিয়েভের পতন হলেও আপনারা কিছু এলাকা দখলে নিয়ে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যান , আসলে আপনারা হারেননি , রাশিয়ার মতো পরাশক্তির সাথে যে প্রতিরোধ দেখিয়েছেন , তা মানবজাতির জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে ইনশাআল্লাহ । এই যুদ্ধে আপনারা রাশিয়াকে হারিয়ে দিয়েছেন , কারণ রাশিয়ার অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে । তারা একা হয়ে গেছে । ন্যাটো এবং ইউরোপকে বলবো আপনারা অস্ত্র এবং বুদ্ধি দিয়ে সহযোগিতা চালিয়ে যান , তবে সাবধানে পা ফেলবেন , সামান্য ভুল হলেই চরম বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে । মহান আল্লাহ আপনাদের সহায় হউন । কারণ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এড়াতেই হবে ইনশাআল্লাহ ।
ন্যাটো এবং ইউরোপকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং মহান সৃষ্টিকর্তা আপনাদের কল্যাণ করুন , বিশেষ করে বাইডেনকে । আপনারা অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে ইউক্রেন যুদ্ধ সামাল দিচ্ছেন । খুব সাবধানে চলুন , কারণ সামান্য ভুল হলেই বড়ো বিপদ ঘটে যেতে পারে । তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়তো ঘটবে, তবে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে , বিশ্বযুদ্ধকে যতো দূরে রাখা যায় , ততই আমাদের কল্যাণ । তাছাড়া বর্তমান যুদ্ধ নিয়ে এবং রাশিয়ার পক্ষ নিয়ে সকল স্বৈরাচাররা ব্যাপক প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে , এটা নিয়েও গনতান্ত্রিক বিশ্বকে গভীরভাবে ভাবতে হবে এবং সমুচিত জবাব দিতে হবে ।
আমার পরিবারের একটি কাহিনি বলে শেষ করবো । বাংলাদেশে কিছুদিন ধরে সরকারি ভোট হয় না , কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় ( যদিও এবারের ইউপি নির্বাচনকে খুনোখুনির নির্বাচন বলা যায় ) । আমার পরিবারের সবাই ভোট দেওয়ার চেষ্টা করে , আমি কখনোই পরিবারের কাউকে নির্দিষ্ট করে কোনো প্রার্থীকে ভোট দিতে বলি না এবং পরিবারের কেউ কাউকে জোর করে না এবং মত চাপিয়ে দেয় না , তবে আলোচনা করি কাকে ভোট দেওয়া যায় । পরে দেখা যায় একজনের ভোটের সাথে অন্যজনের ভোট মিলছে না । এমনকি আমার স্ত্রীর সাথেও আমার ভোট মিলে না । আর এটাই হলো পূর্ণ গনতন্ত্র এবং পূর্ণ মানবাধিকার ।
ইউক্রেন একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র , সে কার সাথে জোট করবে এবং কার সাথে জোট করবে না , সেটা একান্তই তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার এবং তার পূর্ণ অধিকার , সেখানে অন্য কারো নাক গলানো দূরে থাক মত দেওয়াও অপরাধ , আর যুদ্ধ , সেটাতো প্রশ্নই আসে না । তবে রাশিয়ায় পূর্ণ গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে , ন্যাটোর সামরিক উপস্থিতি কমানোর জন্য রাশিয়া অনুরোধ করতে পারে , আলোচনা করতে পারে এবং কুটনীতি করতে পারে । কিন্তু স্বৈরশাসক থাকলে ন্যাটো তো সামরিক স্থাপনা করবেই ।
( জাহাঙ্গীর আলম ) ।