২০২০ সালে সম্পাদিত আব্রাহাম চুক্তি অনুসরণ করে ২০২৪ সালে ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যে একটি সম্ভাব্য স্বাভাবিকীকরণ চুক্তির সম্ভাবনা কতটুকু এবং চ্যালেঞ্জগুলি কী কী?
২০২৪ সালে ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তির সম্ভাবনা কতটুকু তার ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। কারণ একদিকে যেমন চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার দৃঢ় সম্ভাবনা আছে, আরেক দিকে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জও আছে।
সম্ভাবনা:
১. আঞ্চলিক ঘটনাপ্রবাহ:
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধির কারণে সৌদি আরব এবং ইসরায়েল উভয় রাষ্ট্রে উদ্বেগ অনেক বেড়ে গেছে। উভয় দেশের একই ধরণের উদ্বেগ দেশ দুইটিকে আরো পরস্পরের কাছে নিয়ে এসেছে। এতে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তির সম্ভাব্য ভিত্তি তৈরি করেছে।
২. অর্থনৈতিক সুবিধা:
উভয় দেশ মনে করে যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে দুই দেশের পর্যটন, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। এতে উভয় দেশে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।
৩. আমেরিকার প্রভাব:
আমেরিকার প্রশাসন দুই দেশের সম্পর্ককে স্বাভাবিকীকরণের জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। অব্যাহত ভাবে আমেরিকার আগ্রহ উভয় পক্ষকে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে উৎসাহিত করতে পারে।
৪. আব্রাহাম অ্যাকর্ডস এবং এর প্রভাব:
ইসরায়েল এবং বেশ কয়েকটি আরব রাষ্ট্র, যথা সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো, সুদান এর মধ্যে সফলভাবে স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি স্বাক্ষরের পর ঐ অঞ্চলের দেশগুলি ইসরাইলের সাথে ঐতিহাসিক উত্তেজনা কাটিয়ে উঠতে এখন অনেক বেশি ইচ্ছুক।
চ্যালেঞ্জ:
১. ফিলিস্তিন ইস্যু:
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত অবসানের কোন অগ্রগতি না হওয়া সৌদি আরবের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিন সমস্যা ঐ অঞ্চলের জন্য একটা বড় ইস্যু। সৌদি আরব এমন কোন কিছু করতে পারবে না যা ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে। এই ধরণের কিছু করলে সৌদি আরব অভ্যন্তরীণ ভাবে এবং বৃহত্তর আরব বিশ্বের অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবে।
২. দুই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি:
সৌদি আরব এবং ইস্রায়েল উভয় দেশের অভ্যন্তরীণ কোন কোন রাজনৈতিক দল এবং শক্তি স্বাভাবিককরণের বিরোধী। অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলির পূর্ণ সমর্থন পেতে হলে সতর্ক কৌশল এবং ছাড়ের প্রয়োজন হবে।
৩. ধর্মীয় সংবেদনশীলতা:
উভয় রাষ্ট্রের কিছু ধর্মীয় গ্রূপ সৌদি-ইসরাইল সম্পর্ক স্বাভাবিককরণকে বিতর্কিত বলে মনে করে। এই গ্রূপগুলির সম্মতি আদায় করা বেশ কঠিন এবং চ্যালেন্জিং কাজ।
৪. ইরানের প্রতিক্রিয়া:
সৌদি ইসরাইল সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে গেলে ইরানের উদ্বেগ বেড়ে যাবে। ইরান আরো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। এতে আঞ্চলিক উত্তেজনা বেড়ে যেতে পারে। ইরান বর্তমানে ছয়টি দেশে ১২টি সশস্ত্র সংগঠন পরিচালনা করছে, যেমন--বাহরাইনে আল-আশতার ব্রিগেড, ইরাকে কাতাইব হেজবুল্লাহ, বদর অর্গানিজশন, আছাইব আহলে আল হক, লেবাননে হেজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনে হামাস, প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ, সিরিয়াতে ফাতেমিয়ান ব্রিগেড, জায়নাবিয়্যুন ব্রিগেড, কুয়াত আল রিধা, বাকির ব্রিগেড এবং ইয়েমেনে হুতি আন্দোলন। এই সংগঠনগুলি এই অঞ্চলকে অনেক বেশি অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
সামগ্রিক ভাবে:
যদিও ২০২৪ সালে সৌদি এবং ইসরাইলের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তির সম্ভাবনা অনেক অনিশ্চিত, তারপরেও উভয় পক্ষের জন্য সম্ভাব্য সুবিধা এবং চলমান ঘটনা প্রবাহ থেকে ধারণা করা যায় যে চুক্তির একটি সম্ভাবনা আছে। যাইহোক, বিশেষ করে ফিলিস্তিন ইস্যু এবং উভয় দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধিতার বিষয়গুলি কাটিয়ে উঠতে পারলে একটি চুক্তি হতে পারে।
এখানে উল্লেখ্য যে বিষয়টির ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আছে এবং এটি একটি জটিল সমস্যা। বিষয়টি সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা পাওয়ার জন্য এই লেখা। যারা বিষয়টি আরও সূক্ষ্ম ভাবে বুঝতে চান তারা আরও গবেষণা এবং বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করে দেখতে পারেন।
তথ্য যাচাই, গবেষণা এবং বিশ্লেষণের জন্য এআই এর সাহায্য নেয়া হয়েছে।
সূত্র: The Jerusalem Post, Saudi Gazette, Al-Arabiya ইত্যাদি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:৩৭