দুই-রাষ্ট্র সমাধান হল দুটি জন গুষ্টির জন্য দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি দ্বন্দ্ব সমাধানের একটি প্রস্তাবিত কাঠামো। ইহুদি জনগণের জন্য ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ফিলিস্তিন।
আমেরিকা দীর্ঘ দিন ধরে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের চেষ্টা করে আসছে। অর্থাৎ ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রস্তাব দিয়ে আসছে। কিন্তু বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের কারণে এটা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হয় নাই।
চ্যালেঞ্জগুলো খুব সংক্ষেপে আলোচনা করা হবে।
চ্যালেঞ্জ নং ১. ভূমি এবং সীমানা:
(ক) বিভক্ত অঞ্চল:
পশ্চিম তীর এবং গাজা স্ট্রিপ ভৌগোলিক ভাবে পৃথক দুইটি অঞ্চল। পশ্চিম তীর এবং গাজার মাঝখানে ইসরাইল ভূখণ্ড অবস্থিত। এই দুইটি বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড নিয়ে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা বেশ কঠিন।
(খ) ইসরাইলি বসতি:
পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণের কারণে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের সীমানা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে। এমন কি ফিলিস্তিনিরা পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম অবাধে চলাচল করতে পারে না।
(গ) জেরুজালেম:
ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলি উভয়ই জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে। সুতরাং জেরুজালেম মর্যাদা কি হবে বা কারা নিয়ন্ত্রণ করবে এটা সমাধান করা অনেক কঠিন একটা কাজ।
চ্যালেঞ্জ নং ২. নিরাপত্তা এবং শরণার্থী:
(ক) ইসরায়েলের নিরাপত্তা উদ্বেগ:
ইসরাইল গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের আক্রমণের আশংকা করে। তাই ইসরাইল তার নিরাপত্তা উদ্বেগ থেকে পশ্চিম তীরে বসতিগুলি স্থাপন করেছে। ইসরায়েল বসতিগুলিকে প্রতিরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখে। পক্ষান্তরে ফিলিস্তিনিরা এই বসতিগুলিকে তাদের ভূমি দখল হিসাবে দেখে।
(খ) প্রত্যাবর্তনের অধিকার:
প্রথম নাগবা অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছিল এবং ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের সময় বাস্তুচ্যুত এবং পালিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা এবং তাদের বংশধররা ইসরায়েলে তাদের পূর্বের বাড়িঘরে ফিরে যেতে চায়। কিন্তু ইসরাইল এটার তীব্র বিরোধিতা করে।
চ্যালেঞ্জ নং ৩. রাজনৈতিক ইচ্ছা ও বিশ্বাস:
(ক) অভ্যন্তরীণ বিরোধ:
ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি উভয়েরই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভাজন রয়েছে যা আলোচনাকে জটিল করে তোলে। ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যেমন হামাস এবং ফাতাহ বিভাজন আছে, অনুরূপ ভাবে ইসরাইল সরকারের মধ্যে বামপন্থী, ডানপন্থী এবং ধর্মীয় দলে বিভাজন আছে।
(খ) বিশ্বাসের অভাব:
দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলতে থাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে উভয়ের মধ্যে সমঝোতাকে কঠিন করে তুলেছে।
(গ) আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা:
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইল বা ফিলিস্তিনি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সমস্যাটাকে দেখে না। তারা তাদের নিজেদের স্বার্থের আলোকে এই সমস্যাকে দেখে। ফলে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ভাবে এই দ্বি-রাষ্ট্র ধারণাকে প্রভাবিত করে।
চ্যালেঞ্জ নং ৪. অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ:
(ক) পানির অধিকার:
উভয় দেশের জন্য পানির উৎস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল উভয় পক্ষের পানির প্রধান উৎস ইয়ারকন-তানিনিম অ্যাকুইফার বা মাউন্টেন অ্যাকুইফার সহ বেশিরভাগ পানি সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
(খ) অর্থনৈতিক কার্যকারিতা:
একটি কার্যকর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের এবং এর অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য অবকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন।
(গ) ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক তাৎপর্য:
উভয় পক্ষেরই এই অঞ্চলের ভূমির সাথে গভীর ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। উভয় পক্ষেরই গভীর ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অনুভূতি একটি জটিল মানসিক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। যদিও সবশেষে এই চ্যালেঞ্জটির কথা উল্লেখ করেছি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই চ্যালেঞ্জটি সব সমস্যার মূল। ধর্মীয় বিশ্বাস রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক ভাবে সমাধান করা যায় না।
উল্লেখিত জটিল চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের চেষ্টা করে আসছে। বর্তমান বাস্তবতার আলোকে এই প্রচেষ্টা আরো জোরদার হয়েছে।
এই সংক্ষিপ্ত আলোচনাটি প্রধান চ্যালেঞ্জগুলি বোঝার জন্য একটি সূচনা বিন্দু মাত্র। তবে আরও গবেষণা এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা সমস্যা সমাধানের জন্য সহায়ক হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:২৮