সংবিধান: কার্যবিধি আইন নয়
রাষ্ট্রের সংবিধান বলতে দেশের সর্বোচ্চ আইনকে বোঝানো হয়। সংবিধানে রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো, ক্ষমতার বিন্যাস, নাগরিকদের অধিকার ও দায়িত্ব এবং সরকার পরিচালনার মূল নীতিমালা থাকে। সংবিধান রাষ্ট্রের সকল আইন ও নীতির ভিত্তি এবং এটি সরকারের বিভিন্ন শাখা ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে।
সংবিধানে রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো ও শাসনব্যবস্থার ধরণ কি রকম হবে তা উল্লেখ থাকে। সংবিধান রাষ্ট্রের প্রকারভেদ নির্ধারণ করে, যেমন গণতন্ত্র, জনরাষ্ট্র, রাজতন্ত্র, ফেডারেল বা এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা। সরকারের শাখাগুলোর যেমন আইন প্রণয়ন, নির্বাহী, ও বিচারবিভাগের ক্ষমতা ও তাদের কার্যক্রমের পরিধি উল্লেখ থাকে।
সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলির কথা উল্লেখ থাকে, যেমন বাক স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমানাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, এবং ব্যক্তি-স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়। তাছাড়া নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য, যেমন আইন মেনে চলা, কর প্রদান, এবং রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখা ইত্যাদির বিবরণ থাকে।
সংসদ, নির্বাহী (প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীপরিষদ), এবং বিচারবিভাগের ভূমিকা, ক্ষমতা ও দায়িত্ব সংজ্ঞায়িত করা হয়। ক্ষমতার বিভাজন এবং পরস্পরকে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য বজায় রাখার নীতিমালা উল্লেখ থাকে।
সংবিধানে নির্বাচন পদ্ধতি ও ভোটারদের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। ক্ষমতার হস্তান্তরের সুষ্ঠু প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হয়।
বিচারবিভাগের স্বাধীনতা, আদালতের ক্ষমতা ও বিচারপ্রক্রিয়া, সাংবিধানিক ব্যাখ্যার ক্ষমতা এবং সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য বিচারিক ব্যবস্থা নির্ধারণ করা হয়।
স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার (যেমন পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ ইত্যাদি) ভূমিকা ও কাঠামো নির্ধারণ করা হয়।
রাষ্ট্রের আর্থিক নীতি, কর ও রাজস্ব ব্যবস্থা, বাজেট এবং অর্থনৈতিক নীতিমালা সংজ্ঞায়িত করা হয়।
সংবিধানে পরিবর্তন বা সংশোধন করার প্রক্রিয়া ও শর্তাবলী উল্লেখ করা হয়, যা সংবিধানকে সময়ের সাথে সামঞ্জস্য করতে সহায়তা করে।
এর বাইরে অপ্রয়োজনীয় বিষয় উল্লেখ করে সংবিধানকে জটিল করার কোন প্রয়োজন নাই কারণ সংবিধান কোন কার্যবিধি বা procedural law নয়। একই সাথে সংবিধান কোন সাধারণ আইন, দর্শন, ইতিহাস বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বই নয়; কিন্তু এটি একই সাথে এই সমস্ত জ্ঞানকে একত্রিত করে। বাংলাদেশ সংবিধানে এমন অনেক বিষয় আছে যা সংবিধানে উল্লেখ করার কোন প্রয়োজন নাই। এইগুলি সাধারণ আইন দ্বারাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যেমন, অ্যাটর্নি-জেনারেল, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশের কর্মবিভাগ, সরকারী কর্ম কমিশন ইত্যাদি।
সর্বশেষ কথা:
সংবিধান পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে এই সংবিধানে অসংখ্য ভুল ত্রুটি ও অসঙ্গতি বিদ্যমান। কোন কোন ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা পরিষ্কার ভাবে দৃশ্যমান। তাই ভুল ত্রুটি, অসঙ্গতি, অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা দূর করে নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয় এমন একটি সংবিধান প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
জনরাষ্ট্র ভাবনা-২৩